আবাহনী খেলছে 'বাড়ির উঠোনে'

আবাহনীর অনুশীলনে মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
আবাহনীর অনুশীলনে মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
>বিসিবির একাডেমি ভবনকে নিজেদের আবাসিক ঠিকানা বানিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের দল আবাহনী

আবাহনীর ক্রিকেটারদের সৌভাগ্যবানই বলতে হবে। প্রিমিয়ার লিগের মৌসুমে তাঁদের আবাসিক ঠিকানা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবন। অনুশীলনের জন্য তো একাডেমির মাঠ আছেই, যখন দরকার বিসিবির জিমও ব্যবহার করতে পারছেন ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা। একাডেমি থেকে বেরিয়ে দুই কদম এগোলেই মিরপুর স্টেডিয়াম। লিগের প্রথম পাঁচ রাউন্ডে আবাহনীর তিনটি ম্যাচই এখানে। আবাহনী যেন লিগ খেলছে বাড়ির উঠোনে!

অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেন বাদে ১৮ সদস্যের দলের ১৬ জনই থাকছেন একাডেমি ভবনের ৬টি কক্ষ নিয়ে, এই তথ্য ক্লাবের ম্যানেজার শেখ মামুনের কাছ থেকেই পাওয়া। অন্য ক্লাবগুলো বিসিবির মাঠে অনুশীলন করার সুবিধা নিলেও বিসিবির একাডেমি ভবনে তাঁবু গেড়ে বসেনি। ক্লাবটির কোচ খালেদ মাহমুদসহ বিসিবির অন্তত ৬ জন পরিচালকের আবাহনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। হয়তো সে কারণেই তাদের মতো বিসিবির এত সুযোগ-সুবিধা লিগের আর কোনো দলের ক্রিকেটাররা ভোগ করছেন না।

অবশ্য নিজ দলের খেলোয়াড়দের ভালো অবস্থায় রেখেও আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ আছেন দুশ্চিন্তায়। করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণে আপাতত প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত। লিগ যদি দ্রুতই আবার শুরু না হয় এই খেলোয়াড়েরা তো বাড়ি যাবেন, গণপরিবহনে চড়বেন। তখন যদি তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন! কাল মাহমুদ বলছিলেন, ‘এখানে একাডেমিতে আমরা যতটুকু নিরাপদ, বাইরে ছেলেরা যখন যাবে ওরা তত নিরাপদ না।’ সে জন্য তিনি চাচ্ছেন দ্রুতই আবার লিগের খেলা শুরু হোক।

কিন্তু করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কি শুধুই আবাহনীর ক্রিকেটারদের! আবাহনীর খেলোয়াড়দের একাডেমি ভবনে থাকতে দিলে তো দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে অন্য ক্রিকেটারদের কথাও বিসিবির ভাবা উচিত। সেটা তো হচ্ছেই না, উল্টো আবাহনীর ক্রিকেটারদের জায়গা ছেড়ে দিতে অন্য ক্রিকেটারদের একাডেমি ত্যাগ করতে হয়েছে, এমন উদাহরণ আছে। কাল তাঁদেরই একজন বললেন, ‘এখানে (একাডেমি) আবাহনী থাকছে। আমি তাই বাইরে থাকছি।’ আরেকজন প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগেই বলেছিলেন, ‘বাড়ি যাচ্ছি কাল। এখানে তো জায়গা নেই।’

আবাহনীর ম্যানেজারের অবশ্য দাবি, তাদের খেলোয়াড়েরা থাকার পরও অন্যদের থাকার যথেষ্ট জায়গা আছে একাডেমিতে, ‘কোনো ক্রিকেটারের সমস্যা হওয়ার কথা না। আমরা থাকার পরও অনেক কক্ষ খালি আছে। আমরা ছয়টি কক্ষ নিয়ে থাকছি।’ অন্য দলগুলোর তুলনায় বেশি সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব দলই সুবিধা পাচ্ছে। আমরা শুধু থাকার জায়গাটা বেশি নিয়েছি।’

সূত্র জানিয়েছে, একাডেমিতে থাকার জন্য বিসিবিকে ভাড়াও দিচ্ছে আবাহনী। চার বেডের রুম আনুমানিক ২ হাজার টাকা ও ২ বেডের রুমের ভাড়া আনুমানিক ১ হাজার টাকা। কিন্তু একাডেমি ভবন নিশ্চয়ই আয়ের উৎস নয়। আর যদি সেটি হয়ও, তাহলে শুধু আবাহনী কেন, অন্য ক্লাবগুলোও তো খেলোয়াড়দের রাখতে বিসিবির কাছ থেকে একাডেমি ভাড়া নিতে পারে!

বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী অবশ্য দাবি করলেন, একাডেমিতে আবাহনীর খেলোয়াড় পরিচয়ে কেউ থাকছেন না। যাঁরা থাকছেন তাঁরা বিসিবির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। তা-ই যদি হবে, তাদের কাছ থেকে বিসিবি কক্ষ ভাড়া নেবে কেন? নিজাম উদ্দিন চৌধুরী অস্বীকার করলেন সেটিও, ‘বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়েরাই এখানে থাকতে পারে। শুধু ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে থাকতে পারে না। ভাড়া দিয়ে থাকারও সুযোগ নেই। যারা আছে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবেই আছে। কেউ কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছে, কেউ বয়সভিত্তিক, এইচপি বা ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম—কোথাও না কোথাও আছে। এর বাইরে কারও থাকার সুযোগ নেই।’

কিন্তু তাহলে বিসিবির কোনো চুক্তিতেই না থাকা আবাহনীর পেসার তৌহিদুল ইসলাম কীভাবে একাডেমিতে থাকছেন? তা ছাড়া বিসিবির চুক্তিতে আছেন, অন্য ক্লাবের এমন ক্রিকেটাররাও যদি একাডেমিতে থাকতে চান, বিসিবি কি সবাইকেই জায়গা দেবে?