নিজের মন্থর ব্যাটিংয়ে দলের ভালোই দেখছেন তামিম

তামিম ইকবাল।
তামিম ইকবাল।
>ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট নিয়ে মুখ খুললেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ধৈর্য নিয়ে খেলার সুফল কী সেটিও বললেন।

‘এমন একটা ম্যাচ দেখান, যেই ম্যাচে আমার স্ট্রাইক রেটের কারণে দল হেরেছে’—অভিযোগের সুরেই বললেন ওপেনার তামিম ইকবাল।

আজ প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলার সময় উঠে এলো তাঁর স্ট্রাইক রেট প্রসঙ্গ। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে কত কিছুই না ঘটে গেল। ওপেনার তামিমের স্ট্রাইক রেটও ছিল তেমনই বড় ঘটনা। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য গত বিশ্বকাপ থেকেই তাঁর সমালোচনা। গত বিপিএল ও পাকিস্তান সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তাই। এরপর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি করার পর স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনার আগুনে পানি ঢালেন তামিম। দুটি সেঞ্চুরিই করেছেন ১০০ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে।

কিন্তু এর মধ্যে স্ট্রাইক রেটের সমালোচনা নিয়ে একবারও মুখ খোলেননি তামিম। আজ প্রথম আলোকে স্ট্রাইক রেট নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তামিম। গত বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে কেন উইলিয়ামসন ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিল। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৮২। বিশ্বকাপে ৮২ স্ট্রাইক রেটেই কিছু ইনিংস খেলেছে যেগুলোর কারণে তাঁর দল জিতেছে।’

ক্রিকেট বিশ্লেষকের উদ্দেশ্যেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি, ‘যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, গত পাঁচ-ছয় বছরে আমার স্ট্রাইক রেটের কারণে দল হেরেছে এমন একটা ম্যাচ দেখান। আমি ১৫-১৬টি ম্যাচ দেখাতে পারব যেখানে আমি যেভাবে ব্যাট করেছি, বাংলাদেশ জিতেছে। আমরা সব সময় একটা ধারায় যাই। দুই দিন আগে ছিল ধৈর্য নেই। এখন হলো এত বেশি ধৈর্য কেন। আগে ৩০ রানে ৩ উইকেট, ৪০ রানে ৩ উইকেট, খুবই স্বাভাবিক চিত্র ছিল। গত পাঁচ বছরে কয়বার এমন হয়েছে। খুব বেশি না। এর কারণে ইতিবাচক দিক কী কী হচ্ছে সেটাও চিন্তা করবেন। আপনি যখন বিশ্লেষণ করবেন, পাল্লার কোন দিকটা ভারী দেখবেন, আমি খারাপটা তো দেখি না।’

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তামিমের ওয়ানডে স্ট্রাইক রেট ছিল ৮০’র আশপাশে। গত পাঁচ বছরেও স্ট্রাইক রেটে আমূল পরিবর্তন হয়নি, প্রায় ৮০ স্ট্রাইক রেটেই খেলেছেন। অথচ ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন গত পাঁচ বছরই। শট নির্বাচন ভালো হয়েছে। ফিটনেসে পরিবর্তন এসেছে। লম্বা ইনিংস খেলার সামর্থ্য বেড়েছে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৭ বছরে ওয়ানডেতে ৭৭.৫৫ স্ট্রাইক রেট ও ২৯.৮৫ গড়ে করেছেন ৩৯৭১ রান। সেঞ্চুরি মাত্র ৪টি। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তামিম রান করেছেন ৩২৩১। স্ট্রাইক রেট ৮০.১১ ও গড় ৫১.২৮। সেঞ্চুরি ৯টি।

ওয়ানডেতে বড় রান পেতে ওপরের সারির তিন ব্যাটসম্যানের যে কোণ একজনের অন্তত ৪০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে হয়। বাংলাদেশের হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করছেন তামিম, ‘আমাদের টিম মিটিংয়ে কথা হয়, ওপরের তিন ব্যাটসম্যানের একজনকে ৪০ ওভার পর্যন্ত খেলতে হবে। এখন সবার যদি ১১০ স্ট্রাইক রেট থাকে তাহলে তো রান হবে ৫১০। এটা তো হয় না।’

তবে স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান তামিম। ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৭ হাজার রান করার পরও নিজেকে ক্রিকেটের ছাত্র হিসেবে দেখেন তামিম। ব্যাটসম্যান হিসেবে যে তাঁর এখনো অনেক শেখার বাকি। স্ট্রাইক রেট আরও বাড়িয়ে নেওয়া সেই সিলেবাসেরই অংশ, ‘আর আমি সব সময় উন্নতির পেছনে ছুটেছি। আমি যেদিন মনে করব আমি সব জেনে গেছি, সব পেয়ে গেছি। তাহলে ওই দিনই আমি শেষ। ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার অনেক কিছু শেখার আছে। আমি সব বুঝে গেলে তো বিরাট কোহলির পর্যায়ে থাকতাম। আমি চার-পাঁচ বছরে সাফল্যের স্বাদ পেতে শুরু করেছি। কিন্তু যা অর্জন করতে চেয়েছি তা পারিনি।’

* অধিনায়কত্ব নিয়ে তামিম ইকবালের সাক্ষাৎকার পড়ুন কালকের ছাপা সংস্করণে।