ফুটবল-শিল্পী জামাল ভূঁইয়ার অবসর রঙিন রংতুলিতে

জামাল ভূঁইয়া। ছবি: প্রথম আলো
জামাল ভূঁইয়া। ছবি: প্রথম আলো

‘ওর ছবি আঁকার হাত খুবই ভালো।’

ভালো ছবি এঁকে এমন প্রশস্তিই তো শোনা উচিত একজন চিত্রশিল্পীর। কিন্তু তারিফটা যদি হয় কোনো ফুটবলারের ছবি আঁকার হাতের, তখন নড়েচড়ে বসতেই হয়। বিশেষ করে নামটি যদি হয় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, বিস্ময়ে আপনার চোখ বড় হয়ে উঠবেই! চমকের ঘোর কাটার আগে আরেকটু শুনুন—জামালকে এমন প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ জেমি ডে।

‘জামাল ভালো ফুটবলার’ বা ‘ওর নেতৃত্বগুণ দারুণ’, কোচদের কাছ থেকে এসব শুনেই অভ্যস্ত আমরা। লড়াকু হোল্ডিং মিডফিল্ডারের পায়ে ফুটবলটা শিল্প হয়ে ফুটলে সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর হাতেও যে সৃষ্টিশীলতা আছে, সেটি জানতে পারাটা গুপ্তধন প্রাপ্তির মতো খবরই বটে। তাঁর আঁকা অ্যাক্রিলিক পেইন্টগুলোর দিকে তাকালে অনায়াসে নতুন পরিচয়ে ডাকা যেতে পারে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ককে-চিত্রকর জামাল ভূঁইয়া। ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে দেশে-বিদেশে কত ব্যস্ততা। এসবের ফাঁকে দুদণ্ড অবসর মিললে জামাল বসে পড়েন রংতুলি নিয়ে। সবুজ মাঠ নয়, বাস্তবের সাদা ক্যানভাসই হয়ে ওঠে সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের জায়গা, সেখানেই ফুটে ওঠে তাঁর কল্পনার সব চিত্র।

জামাল ভূঁইয়ার রংতুলির ঝলক। ছবি: সংগৃহীত
জামাল ভূঁইয়ার রংতুলির ঝলক। ছবি: সংগৃহীত

তা অধিনায়কের আঁকিবুঁকির অভ্যাসটা কবে থেকে? ছেলেবেলা থেকেই অভ্যাস, তবে হাতটা পেকেছে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে, ‘স্কুলে আর্ট ক্লাস ছিল, তখন নিয়মিত আঁকতাম। ২০০৭-০৮ সালে ব্রন্ডবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আঁকার অভ্যাসটা বেশি হয়েছে।’ ক্লাবে বা জাতীয় দলের ক্যাম্পে রংতুলির ধারেকাছে না ঘেঁষলেও, সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা একটু বড় অবসর পেলেই কল্পনার জানালা খুলে দেন এই মিডফিল্ডার, ‘২২ ঘণ্টা সময় পেলেই ভালো একটি ছবি আঁকতে পারি। অবশ্য সে সময় বের করতে তিন দিন প্রয়োজন।’

করোনা-আতঙ্কে ঘরোয়া ও জাতীয় দলের খেলা স্থগিত। গতকাল পর্যন্ত সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের অনুশীলন চললেও শিগগিরই ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা। অপ্রত্যাশিত এই ছুটির সময়টা ছবি এঁকে কাটানোর লক্ষ্য জামালের, ‘ছবি আঁকলে সময় দ্রুত চলে যায়। এ অবসরে অনেক ছবি আঁকার ইচ্ছে আছে।’ এরই মধ্যে জাতীয় দলের অধিনায়কের ‘পেইন্টার’ পরিচয় পেয়ে গেছেন তাঁর তুলি-ক্যানভাসের জোগানদাতারাও, ‘নিউমার্কেটের দোকানদাররা আমাকে খুব ভালো করে চেনে। আমি ফোন দিয়ে কিছু অর্ডার করলে ওরা রেখে দেয়। পরে গিয়ে নিয়ে আসি।’

জামাল ভূঁইয়ার রংতুলির ঝলক। ছবি: সংগৃহীত
জামাল ভূঁইয়ার রংতুলির ঝলক। ছবি: সংগৃহীত

কোচ জেমির কাছে থেকে তাঁর স্ত্রী কিলি ডেও জেনে গেছেন চিত্রশিল্পী জামালের কথা। তাঁর হাতের কাজে এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন, একটা ছবির জন্য আবদার জানিয়েছেন ইংল্যান্ড থেকে। জেমি তো আর এমনি এমনি বলছেন না, ‘ফুটবলের চেয়ে জামালের ছবি আঁকার গুণ বেশি ভালো।’ তবে জামালের দাবি, নিজের চেয়ে তাঁর স্ত্রীর ছবি আঁকার হাত আরও বেশি ভালো। জার্মানিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়লেও স্ত্রী তাতিয়ানা নাকি অনলাইনে ছবি এঁকে আয়ও করেন।

করোনার ছোবলে বিশ্ব কাঁদছে। হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা পরিবার-পরিজনকে নিয়ে অজানা আশঙ্কায় জামালের মনটাও কেঁদে ওঠে। ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন বয়স্ক বাবা-মা, কোলনে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকেন নববিবাহিতা স্ত্রী। ফোনের দুই প্রান্তে একে ওপরকে সতর্ক থাকার পরামর্শের মধ্যেই কেটে যাচ্ছে করোনা-আতঙ্কের জীবন। কফির মগে চুমুক দিতে দিতেও দুশ্চিন্তা আড়াল করতে পারলেন না জামাল, ‘ভাইরাস নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায়। বাবা-মার বয়স হয়েছে। তাঁরা আমাকে নিয়ে চিন্তা করেন, আমি তাঁদের নিয়ে চিন্তা করি। কোলনে স্ত্রী থাকে। ওকে একেবারেই বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করে দিয়েছি।’

জামাল ভূঁইয়ার রংতুলির ঝলক। ছবি: সংগৃহীত
জামাল ভূঁইয়ার রংতুলির ঝলক। ছবি: সংগৃহীত

নিজের বের হওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে যেকোনো সময়। তেমন কিছু হলেও অন্তত সময় কাটানোর উপায় তো হাতের কাছেই! রংতুলি...ক্যানভাস।