'অন্য কারণে' ক্রিকেট বন্ধ হওয়ার গল্প

ইংল্যান্ডের কুখ্যাত অপরাধীর জন্য গ্রাফিতি। এ অপরাধীর অনুসারীরা পন্ড করে দিয়েছিল ১৯৭৫ সালে অ্যাশেজ সিরিজের একটি টেস্ট। ছবি: সংগৃহীত
ইংল্যান্ডের কুখ্যাত অপরাধীর জন্য গ্রাফিতি। এ অপরাধীর অনুসারীরা পন্ড করে দিয়েছিল ১৯৭৫ সালে অ্যাশেজ সিরিজের একটি টেস্ট। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী তৈরি করেছে বড় আতঙ্ক। এ রোগের প্রতিরোধে খেলার দুনিয়া গেছে থমকে। ফুটবল বা অন্য খেলা তো বটেই ক্রিকেটের সব টুর্নামেন্ট, সিরিজ এমনকি ঘরোয়া লিগও আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খেলা শুরুর সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে। দেশে দেশে ক্রিকেটাররা কার্যত ঘরবন্দী হয়ে কাটাচ্ছেন অলস সময়। ক্রিকেটে এমন দিন শেষ এসেছিল কবে? অনেকেই বলছে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পরেও ক্রিকেট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি, যেমনটা এখন হয়েছে। তবে বড় দুর্যোগ ছাড়াও হঠাৎ কোনো বিশেষ ঘটনায় ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা আছে বেশ কিছু। তার মধ্য থেকে পাঁচটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হলো। ঘটনাগুলো যেকোনো হিসেবেই ক্রিকেটপ্রেমীদের আন্দোলিত করবে। করে তুলবে স্মৃতি কাতরও...

অপরাধীর মুক্তির দাবিতে
১৯৭৫ সালের ১৯ আগস্ট। চলছে অ্যাশেজ সিরিজ। হেডিংলি টেস্টটি সেবার দারুণ জমেছিল। ম্যাচের পঞ্চম দিনের সকাল। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন আরও ২২৫ রান, ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগেই দেখা গেল উইকেট কেউ বা কারা খুঁড়ে রেখে দিয়েছে। গর্তে ঢেলে রেখেছে পোড়া মোবিল। এমন অবস্থায় পণ্ড হয়ে গিয়েছিল দারুণ জমে ওঠা সেই টেস্ট।
এমন কাজ সেদিন কারা করেছিল? পিচ খুঁড়ে হেডিংলি মাঠেই একটা গ্রাফিতি এঁকে রেখে গিয়েছিল অপরাধীরা। সেখানে লেখা ছিল একটা দাবি—অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে জর্জ ডেভিস নামের এক ব্যক্তিকে। ১৯৭৪ সালে লন্ডন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড অফিসে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে লুটতরাজ চালানো এই ডেভিসের সহযোগীরাই হেডিংলিতে পিচ খোঁড়ার কাণ্ডটা করেছিল। ভেবে দেখুন, একজন অপরাধীর মুক্তি চাইতে গিয়ে তাঁর দোসররা বারোটা বাজিয়েছিল গোটা একটা টেস্ট ম্যাচেরই।

ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু
১৯৮৪ সালের ৩১ মার্চ। ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর করছে। শিয়ালকোটের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটিই কেবল নয়, গোটা সফরই বাতিল হয়ে যায় অভাবনীয় এক ঘটনায়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন। খবরটা শিয়ালকোটের মাঠে যখন আসে তখন প্রথমে ব্যাটিং করা ভারতের ইনিংস সবে শেষ হয়েছে। নির্ধারিত ৪০ ওভারে দিলীপ ভেঙসরকারের ৯৪ রানের ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ভারত তুলেছিল ৩ উইকেটে ২১০। সন্দ্বীপ পাতিলের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৯। পাকিস্তানের ইনিংস শুরুর ঠিক আগে দিয়ে সরকারিভাবে খেলা বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ভারতীয় দল দ্রুতই ফিরে যায় দেশে।

বাবরি মসজিদের ঘটনা
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল উগ্র ধর্মান্ধরা। সে ঘটনার জের এসে লাগে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। সে সময় ঢাকায় চলছিল প্রথম সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আসর। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে সে টুর্নামেন্টে অন্যান্য দলগুলো ছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ‘এ’ দল। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) চলছিল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় ‘এ’ দলের খেলা। বাবরি মসজিদের ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। পণ্ড হয়ে যায় ম্যাচটি, সঙ্গে সার্ক টুর্নামেন্টও। খেলা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে টসে হেরে ব্যাটিং করছিল ভারত। উইকেটে ছিলেন নভজোৎ সিং সিঁধু ও সুরেন্দর ভাবে। বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মিনহাজুল আবেদীন।

ভিসা না দেওয়ায়
১৯৮৮ সালে ইংলিশ ক্রিকেট দলের ভারত সফর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ইংলিশ ক্রিকেটারদের ভিসা জটিলতায়। সে এক অদ্ভুত ঘটনা। গ্রাহাম গুচসহ ইংল্যান্ডের সাত ক্রিকেটারকে ভিসা দিতে চায়নি লন্ডনস্থ ভারতীয় হাই কমিশন। অভিযোগ, এই ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিলেন। আশির দশকে বর্ণবাদের কারণে এক ঘরে হয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ভারতও ছিল সে দেশগুলোর তালিকায়। ১৯৮২ সালে গুচসহ অন্য ছয় ইংলিশ তারকা জন এম্বুরি, কিম বার্নেট, রবার্ট বেইলি, গ্রাহাম ডিলি, রবার্ট রবিনসন, অ্যালান ল্যাম্ব, ফিলিপ নিউপোর্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী সফরে গিয়েছিলেন। এ জন্য ভারত তাদের ভিসা দেয়নি। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এ জন্য ভারত সফর বাতিল ঘোষণা করে।