তাঁদের হতাশা যখন অন্যদের পোড়ায়

চ্যাম্পিয়নস লিগ হতাশায় তাঁরা সবাই একই কাতারে। ছবি: এএফপি
চ্যাম্পিয়নস লিগ হতাশায় তাঁরা সবাই একই কাতারে। ছবি: এএফপি
>এদের অনেকেই বিশ্বকাপজয়ী। ঘরোয়া লিগও জিতেছেন অনেকে একাধিকবার। ব্যক্তিগত সাফল্যে মোড়া তাঁদের ক্যারিয়ার। এত কিছু সত্ত্বেও ইউরোপের ক্লাব প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস লিগটাই জেতা হয়নি তাঁদের।

নিজেদের অভাগা ভাবতে পারেন তাঁরা। জ্বলজ্বল করতে থাকা ক্যারিয়ারের একমাত্র কাল দাগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতা। ইউরোপসেরা হিসেবে বুক ফুলিয়ে না হাঁটতে পারা। বহু খেলোয়াড়ের কপালেই জুটেছে এমন হতাশা। কে তাঁরা? এমন দুর্ভাগাদের নিয়ে একটা একাদশ করতে পারলে কেমন হয়? সেটা নিয়েই আজকের আয়োজন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য, ইউরোপসেরা নির্ধারণ করার এই প্রতিযোগিতা সেই ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হলেও তখন এর নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ। ১৯৯৩ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতাটার নাম ও ফরম্যাট পরিবর্তিত হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ হয়। এ তালিকায় ইউরোপিয়ান কাপের হিসেব রাখা হবে না।

গোলরক্ষক
জিয়ানলুইজি বুফন
তর্কযোগ্যভাবে ইতিহাসের সেরা গোলরক্ষক বলা হলেও ভুল বলা হবে না। ইতালিয়ান লিগ, কাপ, বিশ্বকাপ—কী জিতেননি তিনি! তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ তাঁকে খালি হাতে ফিরিয়েছে বারবার। জুভেন্টাসের হয়ে তিন-তিনবার ফাইনালে উঠেও এই ট্রফির ছোঁয়া পাননি। ২০০৩ সালে পেনাল্টি শুটআউটে হেরেছেন এসি মিলানের কাছে, ২০১৫ সালে বশ মেনেছেন বার্সেলোনার কাছে, ২০১৭ সালে চোখের সামনে রিয়াল মাদ্রিদকে দেখেছেন শিরোপা নিয়ে উৎসব করতে। জুভেন্টাস সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল সেই ১৯৯৬ সালে। বুফন দলটায় যোগ দিয়েছিলেন আরও পাঁচ বছর পর।

সেন্টারব্যাক
লিলিয়ান থুরাম
ফ্রান্সের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মানা হয় থুরামকে। খেলেছেন জুভেন্টাস, বার্সেলোনার মতো ক্লাবে। কিন্তু ইউরোপের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় ৬৯ ম্যাচ খেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বাদ পাননি কোনো ক্লাবের হয়ে। বুফনের মতো ২০০৩ আসরে রানার্সআপ হয়েছিলেন, ২০০৬ সালে বার্সেলোনা যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতল তার ঠিক পর পর যোগ দিলেন স্প্যানিশ দলটায়। কপাল এতটাই খারাপ, শারীরিক অসুস্থতার জের ধরে ২০০৮ সালে থুরাম অবসর নেন, তার ঠিক পরের বছরেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে বার্সা!

সেন্টারব্যাক
ফাবিও ক্যানাভারো
ডিফেন্ডার হয়ে ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডিঅর জেতার হওয়ার একমাত্র কৃতিত্ব তাঁর। এটাই প্রমাণ করে, ডিফেন্ডার হিসেবে ক্যানাভারো কতটা উঁচুমানের ছিলেন। ক্যারিয়ারে জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ ও পারমার হয়ে খেলা এই ডিফেন্ডার কখনই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেননি। ২০০২-০৩ মৌসুমে ইন্টারের হয়ে একবার কোনোরকমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন বটে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি দূর আর যাওয়া হয়নি ক্যানাভারোর।

সেন্টারব্যাক
জর্জো কিয়েলিনি
পাওলো মালদিনি, ফ্রাঙ্কো বারেসি, ফাবিও ক্যানাভারো, আলেসান্দ্রো নেস্তা উত্তর-যুগে ইতালির শ্রেষ্ঠতম ডিফেন্ডার হিসেবে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন জর্জো কিয়েলিনির নাম। জুভেন্টাসের ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেনই তিনজন। কিন্তু তাতে কী? গত দুই যুগ ধরে জুভেন্টাসের চ্যাম্পিয়ন লিগ না জিততে পারার ব্যর্থতা প্রভাব ফেলেছে কিয়েলিনির ক্যারিয়ারেও। আট-আটবার লিগ জেতা এই ডিফেন্ডার তাই এখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ শূন্য।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
লোথার ম্যাথাউস
ডিয়েগো ম্যারাডোনা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, তাঁর মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ জার্মানির এই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার। যিনি আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কিংবা ডিফেন্ডার হিসেবেও খেলতে পারতেন সমানতালে। আজ এনগোলো কান্তে, কাসেমিরো, ফাবিনহোরা যা রপ্ত করেছেন, সেটাকে আজকের শিল্প পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে ম্যাথাউসের ভূমিকা অনেক বেশি। বিশ্বকাপও জিতেছেন জার্মানির হয়ে। বায়ার্ন মিউনিখ ও ইন্টার মিলানের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জেতার পরেও ইউরোপসেরা হওয়া হয়নি এই তারকার। ১৯৯৯ সালে তাঁদের নাকের ডগা থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার
সেস্ক ফ্যাব্রেগাস
গত এক দশকে স্পেনের যে উত্থান, তার পেছনে সেস্ক ফ্যাব্রেগাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আর্সেনাল, বার্সেলোনা ও চেলসির হয়ে খেলার পরেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেননি এই মিডফিল্ডার। এখন খেলছেন মোনাকোর হয়ে, যাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে প্রায় শূন্যের কোঠায়।

ওয়াইড মিডফিল্ডার
পাভেল নেদভেদ
জিনেদিন জিদান জুভেন্টাস ছেড়ে যখন রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখালেন, জুভেন্টাস সমর্থকদের চিন্তার শেষ ছিল না, দলে জিদানের জায়গাটা কে নেবেন, সেটা ভেবে ভেবে। সেই চিন্তাকে পুরোপুরিভাবে দূর করে দিয়েছিলেন পাভেল নেদভেদ। জিদানের অভাব পূরণ করেছিলেন আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হয়ে। তা হলেও, চ্যাম্পিয়নস লিগ তাঁকে খালি হাতেই ফিরিয়েছে। বুফন, থুরামদের মতো তাঁকেও ২০০৩ সালে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

ওয়াইড মিডফিল্ডার
ফ্রান্সেসকো টট্টি
রোমার ইতিহাসের সর্বসেরা খেলোয়াড়। ইতালির ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকাও বটে। কিন্তু টট্টির রোমা কখনই চ্যাম্পিয়নস লিগে পরাশক্তি ছিল না। ফলে টট্টিকে এই আক্ষেপ নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছে।

স্ট্রাইকার
রোনালদো
নামটা শুনলেই ফুটবলপ্রেমীরা হারিয়ে যাবেন সুখস্বপ্নে। বল পায়ে সেই অবিশ্বাস্য কারিকুরি, মুহূর্তের মধ্যে নিজের ত্বরণ বাড়িয়ে ফেলে ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলার সেই ক্ষমতা, দৃষ্টিনন্দন সব গোল করা—কজন পারেন? ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপ জেতা ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একবার লিগ জেতা এই তারকার জীবনের একমাত্র আক্ষেপ, বিশ্বের সেরা কিছু ক্লাব দলের হয়ে খেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি তাঁর। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, ইন্টার মিলান, পিএসভি—কোথাও দেখা পাননি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার।

স্ট্রাইকার
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ
একই দশা সুইডিশ তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচেরও। সারা জীবন আয়াক্স থেকে শুরু করে জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, পিএসজি, এসি মিলান, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে খেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটায় চুমু এঁকে দেওয়ার সুযোগ পাননি একবার।

স্ট্রাইকার
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা
ম্যারাডোনার পর ও মেসি আসার আগে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা এই বাতিস্তুতাই ছিলেন। ফিওরেন্টিনা ও রোমার হয়ে মাঠ মাতানো এই তারকার কপালেও কখনো জোটেনি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা।