সে রাতটা ছিল 'বীভৎস'

কাব্যিক এক জয়ের গল্প লেখা হতে পারত তাঁরই হাতে, তা হয়নি। ৪ বছর আগে এ দিনে মুশফিককে শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয় একরাশ হতাশা নিয়ে। ফাইল ছবি
কাব্যিক এক জয়ের গল্প লেখা হতে পারত তাঁরই হাতে, তা হয়নি। ৪ বছর আগে এ দিনে মুশফিককে শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয় একরাশ হতাশা নিয়ে। ফাইল ছবি

সময়টা এখন এমনই কঠিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন। সবার মনে উদ্বেগ আর চিন্তা। কঠিন এ পরিস্থিতিতেও ভুলে থাকা যাচ্ছে না বাংলাদেশ দলের একটা দুঃস্মৃতি।

কদিন আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে অধিনায়কত্ব থেকে বিদায় নেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজাকে যখন প্রশ্ন করা হলো, অধিনায়ক হিসেবে আপনার সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটি? মাশরাফি দুবার না ভেবে বলেছিলেন, ‘যখন ভারতের কাছে ১ রানে হারলাম (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে)। সেই রাতটা শুধু আমার নয়, পুরো দলের জন্যই বীভৎস ছিল। সবাই হোটেলে এসে করিডরে বসে ছিলাম। অধিনায়ক হিসেবে খেলোয়াড়দের দেখে খুবই খারাপ লাগছিল।’

২৩ মার্চ ২০১৬, চার বছর আগে বেঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সে ম্যাচ শুধু মাশরাফির নয়, বড় আক্ষেপের গল্প হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেই। বেঙ্গালুরুর সে দুঃখগাথার পর বাংলাদেশ কত সাফল্যের গল্পই লিখেছে। তবু ক্ষতটা রয়েই গেছে। থাকারই কথা। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ভারতের মাঠে ভারতকে হারানোর সুযোগ কি আর প্রতিদিন আসে! বাংলাদেশ এমন দুর্দান্ত এক সুযোগই হাতছাড়া করেছিল সেদিন। ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ দলের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। হার্দিক পান্ডিয়াকে টানা দুই বলে বাউন্ডারি মেরে মুশফিকুর সমীকরণটা নামিয়ে আনেন ৩ বলে ২ রানে। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। জয়টা তো তখন সময়ের ব্যাপারই হওয়ার কথা।

অথচ সেই সমীকরণই শেষ পর্যন্ত কঠিন হয়ে গেল। বাংলাদেশ পারলই না বাকি ২ রান নিতে। পান্ডিয়ার টানা দুই বলে আউট হয়ে গেলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে কত-শত ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। স্মৃতিতে কোনো ম্যাচ ভীষণ উজ্জ্বল, কোনো ম্যাচ আবার ধূসর। তবে বেঙ্গালুরুর ওই ম্যাচটা মুশফিক কিছুতেই ভুলতে পারেন না। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যদি সুযোগ থাকত, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা আবার খেলতাম। আমাদের দরকার ছিল ২ রান। আমি আর রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই আউট হয়ে যাওয়ায় সেটা হয়নি। ওই ম্যাচ আর ফিরে পাব না, তবে এমন পরিস্থিতি হয়তো আরও আসবে। এলে চেষ্টা করব চ্যালেঞ্জটা উতরে যেতে।’

ভারতের মাঠে ভারতকে হারানোর সুযোগ বাংলাদেশ গত নভেম্বরেও পেয়েছে। মুশফিকেরই অপরাজিত ৬০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে দিল্লিতে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৭ উইকেটের অসাধারণ এক জয়। এ জয়ের পরও যে বেঙ্গালুরুর আক্ষেপ ঘোচেনি, ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক সেটি অকপটেই বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপের ম্যাচ আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ম্যাচ এক নয়।’