করোনাভাইরাস তাড়াতে মাঠে নেমেছেন লিওনেল মেসিরা

ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একযোগে জনসচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছে। এ কাজে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বের বিখ্যাত ফুটবলাররা। তাঁরা বিশ্ববাসীকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে পাঁচটি বিষয় মনে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

‘পাস দ্য মেসেজ টু কিক আউট করোনাভাইরাস’ নামের এই প্রচারে অংশ নিচ্ছেন ২৮ খ্যাতনামা ফুটবলার। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাঁচটি মূল নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে এই প্রচার/ক্যাম্পেইন। এর মধ্যে রয়েছে হাত ধোয়া, কফ কীভাবে ও কোথায় ফেলতে হবে সে–সংক্রান্ত জ্ঞান, হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ না করা, দূরত্ব বজায় রাখা ও শরীর খারাপ মনে হলে ঘরের মধ্যে বসে থাকা।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রস অ্যাডহানম গ্রেব্রেইয়েসুস সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হওয়া এই ক্যাম্পেইনের ভার্চ্যুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ফিফা ও তার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো শুরু থেকেই এই মহামারি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে শুরু থেকে বলে যাচ্ছেন। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে হোক বা আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে, ফিফা করোনাভাইরাস আটকানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি অত্যন্ত খুশি যে করোনাভাইরাসকে বিদায় করে দেওয়ার এই লড়াইয়ে ফিফা আমাদের সঙ্গে আছে। এভাবে আমরা সবাই একতাবদ্ধ থাকলে করোনাভাইরাস হার মানবেই, এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। ফিফা এ বিষয়ে বিশ্ব সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে, কারণ সবার আগে স্বাস্থ্য। আমি ফুটবল-দুনিয়ার সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এই বার্তা যেন আরও বেশি করে সবার মাঝে ছড়িয়ে যায়। বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠ কিছু খেলোয়াড় এর মধ্যেই এই ক্যাম্পেইনে নাম লিখিয়েছেন এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তাঁদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।’

এই ভিডিও ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন ২৮ জন ফুটবলার, যা ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হচ্ছে। এই ফুটবলারদের মধ্যে রয়েছেন লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা), অ্যালিসন বেকার (ব্রাজিল), রাদামেল ফ্যালকাও (কলম্বিয়া), মাইকেল ওয়েন (ইংল্যান্ড), জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি), ইকার ক্যাসিয়াস (স্পেন), কার্লেস পুয়োল (স্পেন), গ্যারি লিনেকার (ইংল্যান্ড), স্যামুয়েল ইতো (ক্যামেরুন), মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি), ফিলিপ লাম (জার্মানি), জাভি হার্নান্দেজ (স্পেন), ইয়ায়া তুরে (আইভোরি কোস্ট), হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন (আর্জেন্টিনা), সুনীল ছেত্রী (ভারত), ইউরি ডিউরকায়েফ (ফ্রান্স), সামি আল জাবের (সৌদি আরব), এমরে বেলোয়জোগলু (তুরস্ক), জারেদ বোর্গেত্তি (মেক্সিকো), হান দুয়ান (চীন), লরা জর্জেস (ফ্রান্স), ভ্যালেরি কারপিন (রাশিয়া), কার্লি লয়েড (যুক্তরাষ্ট্র), মিডো (মিসর), পার্ক জি সুং (দক্ষিণ কোরিয়া), আসাকো তাকাকুরা (জাপান), সুন ওয়েন (চীন)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ড. টেড্রস অ্যাডহানম গ্রেব্রেইয়েসুস ও ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ছবি: ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ড. টেড্রস অ্যাডহানম গ্রেব্রেইয়েসুস ও ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ছবি: ডব্লিউএইচও

এই ভিডিও ক্যাম্পেইন ফিফাসহ খেলোয়াড়দের ডিজিটাল চ্যানেলে প্রচার করা হবে। শুধু তা–ই নয়, ফিফার ২১১ সদস্যদেশসহ বিভিন্ন মিডিয়া এজেন্সিকে এই ভিডিও দেওয়া হয়েছে, সবার মধ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

হাত
‘এর শুরু আপনার হাত থেকে,’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছাদূত ও লিভারপুল ও ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার এবং ফিফার শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক (পুরুষ)-২০১৯ বলেন, ‘অনুগ্রহ করে আপনার হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিন অথবা অ্যালকোহলনির্ভর সলিউশন ব্যবহার করুন।’

কনুই
‘যখন হাঁচি বা কাশি আসবে, ভাঁজ করা কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিন,’ ফিফা উইমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ বিজয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্লি লয়েড বলেন। ব্যবহারের পর টিস্যু সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিন এবং হাত ধুয়ে নিন। নাক-মুখ থেকে বেরিয়ে আসা থুতুর ছিটে করোনাভাইরাস ছড়ায়। শ্বাসযন্ত্রের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে আপনি আপনার চারপাশের মানুষকে সর্দি-কাশি, ফ্লু ও করোনাভাইরাসের মতো সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারেন।

মুখমণ্ডল
‘আপনার মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে চোখ, নাক অথবা মুখে হাত লাগানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ, ভাইরাস এই পথ থেকেই প্রবেশ করে।’ বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড এবং ফিফার সেরা খেলোয়াড়-২০১৯ ও ব্যালন ডি’অর বিজয়ী লিওনেল মেসি বলেন। হাত দিয়ে বিভিন্ন বস্তু ছোঁয়া হয় এবং সেখান থেকে সহজেই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসি আমরা। একবার আপনি ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তা আপনাদের মুখে এবং সেখান থেকে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এতে আপনি অসুস্থ বোধ করতে পারেন।

দূরত্ব
‘সামাজিকতার বেলায় একটু পিছিয়ে যান,’ হ্যান দুয়ান বলেন। জাতীয় দলের হয়ে ১১ বছর খেলে ১৮৮ বার চীনকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন হ্যান। তিনি বলেন, ‘অন্যের থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।’ এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আপনি কাছের মানুষের হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা থুতু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

অনুভব করুন-উপসর্গগুলো জেনে নিন
‘আপনার শরীর ভালো না লাগলে বাসায় থাকুন,’ ১১৪ বার নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্বকারী ক্যামেরুন স্ট্রাইকার ও বার্সেলোনার সাবেক ফুটবল সদস্য স্যামুয়েল ইতো বলেন। আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন। আপনার যদি জ্বর থাকে, সঙ্গে কাশি এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট, আপনি চিকিৎসাসেবা নিন এবং আগেভাগেই চিকিৎসকের কাছে যান।

খোঁজখবর রাখুন। কারণ, আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আপনার এলাকার কী অবস্থা সে সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দিতে পারেন। দয়া করে তাদের নির্দেশনা মেনে চলুন এবং তাদের আপনার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিন, যেন উপযুক্ত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। এই কাজ আপনাকে সুরক্ষা দেবে এবং ভাইরাস ও অন্যান্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে।

ফিফা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ সলিডারিটি রেসপন্স ফান্ডে ১ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।