'করোনাভাইরাস একটা দারুণ শিক্ষা দিয়ে গেছে'

রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

>বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। ভয়ের চাদরে ঘিরে রেখেছে, কেড়ে নিয়েছে সহস্র প্রাণ। তবে এর মধ্যেও একটা শিক্ষা খুঁজে পেয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

এখন পর্যন্ত আক্রান্ত পাঁচ লাখের বেশি, প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস, আতঙ্কিত করে রেখেছে শত কোটি মানুষকে। থমকে গেছে মানুষের জীবন, জীবনযাত্রা।

খেলার জগতেও এখন খবর বলতে ঘরে বন্দী থাকার দিনগুলোতে কে কী করছেন, করোনা ঠেকাতে কী ভূমিকা রাখছেন কে—এসবই। রান-বল, কিংবা গোল-অ্যাসিস্ট আপাতত ভাবনার জগতে জায়গা পাচ্ছে না। জয়-পরাজয়ের খতিয়ানেও এখন শুধু একটাই হিসেব, করোনার বিপক্ষে জেতা গেল কি না!

তবে এত নেতিবাচকতার মধ্যেও একটা শিক্ষা খুঁজে পেয়েছেন ভারতের অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। করোনাভাইরাসের পরের পৃথিবী তো নিশ্চিতভাবেই এর আগের মতো থাকবে না। অশ্বিনের কাছে, করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে। অন্য সব ছাপিয়ে যে জীবনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জীবন যে কতটা ভঙ্গুর, তা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছে। কঠিন এই সময়ে কোন দেশের কারণে রোগটা এসেছে পৃথিবীতে, সেসব কাঁদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে বরং সমাধানের উপায় খুঁজতেই অনুরোধ ভারতীয় অফ স্পিনারের।

ক্রিকইনফোতে তাঁর কথাগুলোই অনুলিখন করে ছাপা হয়েছে। সেখানে এই মৌসুমে ঘরোয়া টুর্নামেন্টে তাঁর দলের অবনমন ঠেকাতে চেতেশ্বর পূজারাকে কীভাবে উড়িয়ে নিতে চেয়েও পারেননি, অন্যদিকে পূজারা কীভাবে আগামী মৌসুমের জন্য এত দিন ধরে দল গুছিয়ে নিচ্ছিলেন সেসব গল্প জানিয়ে শুরু অশ্বিনের অনুলিখিত গল্প। তারপরই ভারতীয় স্পিনারের কথা, ‘পরের মৌসুমটাকে এখন কত দূরের কিছুই মনে হচ্ছে! জীবনই এখন অন্যরকম হয়ে গেছে। জলবায়ুর বদল ক্রিকেটে কী প্রভাব ফেলতে পারে এ নিয়ে কদিন আগে ইয়ান চ্যাপেলের একটা লেখা পড়ছিলাম। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এ রকম কিছু দেখেছি অবশ্য। আমরা দিল্লিতে খেলছিলাম তখন, আর আমাদের বন্ধু-পরিবার চেন্নাইতে মানবসৃষ্ট বন্যায় আটকা পড়ে ছিল।’

অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের একটা পার্থক্যও তুলে ধরেছেন অশ্বিন, ‘আমরাই একমাত্র প্রাণী যারা প্রকৃতির নিয়মের বিপক্ষে যাই। আর আমরা কিনা নিজেদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান দাবি করি। জলবায়ুর বদলের আসল ধাক্কাটার তো এখনো মুখোমুখি হতেই হয়নি আমাদের, তার আগে অন্য কিছু এসে ক্রিকেট আর জীবনকে থামিয়ে দিল।’

এখন কী করা উচিত, সে নিয়ে অশ্বিনের কথা, ‘এখন এ দেশ-ও দেশকে দোষ না দিয়ে বরং সমাধান খোঁজার সময়। এই মুহূর্তে সমাধান বলতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কিছু করার নেই। আশা করি বিজ্ঞান শিগগিরই একটা সমাধান আবিষ্কার করে ফেলবে। এ সবকিছুর মাধ্যমে করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে আমাদের। সেটি এই, আমরা খেলাটাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলি।’ খেলা বলতে হয়তো শুধু ক্রিকেট নয়, জীবনটাকেই বুঝিয়েছেন অশ্বিন।

করোনার কারণে ঘরবন্দী সময়টাতে আশ্চর্যজনকভাবে ক্রিকেটকে নাকি খুব একটা মিস করছেন না অশ্বিন। টিভিতে ক্রিকেট দেখার আগ্রহ এখন আর আগের মতো নেই তাঁর, ইউটিউবেও পুরোনো ক্রিকেটের ভিডিও নাকি খোঁজেন না। হ্যাঁ, মাঠে নামার ইচ্ছেটা এখনো আগের মতোই আছে। তবে তাঁর ভাবনার জগতে একটা ওলোটপালোট এনে দিয়েছে করোনাভাইরাস, ‘যদি কালই নেটে নেমে পড়তে হয়, আমি জানি না ঠিক কী লক্ষ্য সামনে নিয়ে নামব। তবে সত্যি বলতে এই ভাবনাটার মধ্যে একটা সজীবতা আছে। কোনো লক্ষ্য সামনে রেখে ঝাঁপানোর দরকার নেই। শুধু মাঠে নামো আর ম্যাচটা উপভোগ করো। যে বলটা করা দরকার, সেটি ঠিকভাবে করো। যে বলটা মারা দরকার, সেটি ঠিকভাবে মারো। এরপর কী আছে, সেটি নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।’

জীবন উপভোগের মূলমন্ত্রও তো সেটি। জীবন সংহারী ভাইরাসের প্রকোপ যেটি আরেকবার হয়তো মনে করিয়ে দিয়ে গেল।