'ভয়টা তখনই লাগে' - সেরে ওঠা এক করোনা আক্রান্তের অভিজ্ঞতা

করোনা থেকে সেরে উঠেছেন আর্সেনাল কোচ আর্তেতা। ছবি: এএফপি
করোনা থেকে সেরে উঠেছেন আর্সেনাল কোচ আর্তেতা। ছবি: এএফপি
>করোনা থেকে সেরে উঠেছেন আর্সেনালের স্প্যানিশ কোচ মিকেল আর্তেতা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তিনি জানিয়েছেন ক্লাব ওয়েবসাইটকে

বলতে গেলে তাঁর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনেই নড়েচড়ে বসে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ।

এর আগ পর্যন্ত লিগ পেছানো হবে কি না, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা হবে কি না— এসব সিদ্ধান্ত নিতে অনেক কিছু ভাবছিল প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ১৩ মার্চ যখন খবর এল, করোনায় আক্রান্ত আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা, লিগ কর্তৃপক্ষ আর দেরি করেনি। সেদিনই সিদ্ধান্ত আসে, প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।

তা কেমন আছেন এখন আর্তেতা? তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরের ১৪ দিন পেরিয়ে গেছে। আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে ক্লাবের ওয়েবসাইটে নিজের শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে আর্সেনাল কোচ বললেন, তিনি এখন পুরোপুরি সেরে উঠেছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দিনগুলোর অভিজ্ঞতাও জানা গেছে আর্তেতার কাছে।

আর্তেতা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দুদিন আগেই খবর আসে, লিগে ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে আর্সেনালের ম্যাচটি স্থগিত করছে লিগ কর্তৃপক্ষ। কেন? তখনই খবর আসে, দিন কয়েক আগে যে অলিম্পিয়াকোসের সঙ্গে ইউরোপা লিগের শেষ ৩২-এর ম্যাচ খেলেছে আর্সেনাল, সেই অলিম্পিয়াকোসের মালিকের করোনা ধরা পড়েছে।

‘এখন পুরোপুরি সেরে উঠেছি বলেই মনে হচ্ছে। এটা সত্যি যে, অলিম্পিয়াকোসের মালিকের করোনা ধরা পড়ার পর ক্লাব যখন আমাদের জানাল যে আমরাও ভাইরাসটার সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছি, তত দিনেই কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছে আমার মধ্যে। ওই মুহূর্তে...জানি না, মনে হচ্ছিল কিছু একটা আছে আমার শরীরে’ - আর্সেনালডটকমকে বলছিলেন আর্তেতা।

সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবের ডাক্তারকে কল করে লক্ষণগুলোর কথা জানান আর্তেতা। ক্লাবের ফুটবল পরিচালনা প্রধান রাউল সানলেহি, ক্রীড়া পরিচালক এডু, মহাব্যবস্থাপক ভিনাইকে কল করে বৈঠক করেন। সে সময়েই ক্লাবকে সতর্ক করে দেন আর্সেনাল কোচ, ‘তাঁদের বলছিলাম, আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। অনেক বড় ঝুঁকি। আমিই প্রথম লক্ষণগুলো টের পাচ্ছি। খুব পরিষ্কারভাবেই টের পাচ্ছি। আর এটার মানে প্রতিদিনই আমার সংস্পর্শে যে খেলোয়াড়েরা বা ক্লাবের লোকজন আসেন, সবাই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে, ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে কথা বলতে হবে, দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

শুধু খেলোয়াড় আর ক্লাবের কর্মকর্তাই তো নন, তাঁকে ভাইরাসটি ধরা মানে তাঁর আশপাশের সবাই-ই পড়ে যাচ্ছেন ঝুঁকিতে। এই উপলব্ধিটাই ভয় জাগিয়ে তোলে আর্তেতার মনে, ‘তখন মনে হলো, ‘‘ সবাই-ই তো তাহলে ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার এটা!’’ যে মানুষগুলো আমার সংস্পর্শে এসেছেন, আমার কাছের যাঁরা, তাঁদের নিয়ে চিন্তা চলে আসে তখন। আর তখনই ভয়টা লাগে।‘

লক্ষণ ধরা পড়ার পর থেকেই অবশ্য আইসোলেশনে চলে যান আর্তেতা। অন্য সবার থেকে আলাদা, যাতে ভাইরাসটা তাঁর কাছ থেকে আর কারও শরীরে ছড়াতে না পারে। কিন্তু ভাইরাসটা তাঁর শরীরে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার পর থেকে সেটির বিরুদ্ধে লড়াইটা কেমন ছিল আর্তেতার? আর্সেনালের ৩৮ বছর বয়সী স্প্যানিশ কোচ বললেন, ‘লক্ষণের দিকগুলো ভাবলে, আমার কাছে অন্য ভাইরাসের মতোই মনে হয়েছে। তিন-চারটি দিন একটু কঠিন গেছে। জ্বর ছিল, শুকনো কাশি ছিল, বুকে অস্বস্তি হচ্ছিল অনেক। এই তো!’

নিজের চেয়ে বরং পরিবারের সদস্যদের নিয়েই বেশি চিন্তা হচ্ছিল তাঁর, ‘সবচেয়ে কঠিন দিক হচ্ছে, আমার ঘরে তো আরও মানুষ আছে। তিনটা বাচ্চা আছে আমার। ওদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। আমার স্ত্রী এর মধ্য দিয়ে গেছে, আমার নানিও। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, বাচ্চাদের কিছু হয়নি। তবে এখন আমরা সবাই ঠিক আছি।’