করোনায় শ্বাসকষ্ট, এগিয়ে এসেছে মার্সেডিজ

এই ছোট যন্ত্র বাঁচাতে পারে হাজারো প্রাণ। ছবি: টুইটার
এই ছোট যন্ত্র বাঁচাতে পারে হাজারো প্রাণ। ছবি: টুইটার

এখন তাদের ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল বিশ্বের নানা প্রান্তে। ফর্মুলা ওয়ানের ভরা মৌসুমে ট্রফি জেতার নেশায় ট্র্যাকে গতির ঝড় তোলার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস থামিয়ে দিয়েছে সব। তাই যুক্তরাজ্যের আর সব ফর্মুলা ওয়ান দলের মতো মার্সেডিজ-এএমজি দল তাদের সব বিদ্যা–বুদ্ধি ঢেলে দিয়েছে একটি প্রকল্পে—কীভাবে বানানো যায় একটি সহজলভ্য সিপাপ যন্ত্র? 


সিপাপ (সিপিএপি) বা ফুসফুসে টানা বায়ুচাপ সৃষ্টি করার যন্ত্র এই করোনাকালে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টই সবচেয়ে কঠিন উপসর্গ। যাদের মধ্যে সংক্রমণের প্রভাব মাঝারি থেকে তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে, তাদের শ্বাস নেওয়ার জন্য বাইরের সাহায্য দরকার হচ্ছে। ভেন্টিলেটরের মতো বিশেষায়িত যন্ত্র ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) ব্যবহৃত হচ্ছে। অধিকাংশ দেশেই রোগীর সংখ্যার তুলনায় ভেন্টিলেটর অপ্রতুল। আর সে ক্ষেত্রে সিপাপ হতে পারে ভালো বিকল্প।

এ চিন্তা থেকেই ১৮ মার্চ মার্সেডিজ ফর্মুলা ওয়ান দল, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রকৌশলী ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের হাসপাতালের (ইউএলসিএইচ) চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছেন একটি কার্যকর সিপাপ সৃষ্টি করার এবং তারা এরই মধ্যে সফল হয়েছে।

.
.

যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোয় সিপাপ থাকলেও রোগীর তুলনায় সংখ্যাটা বেশ কম। চীন ও ইতালি করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিপাপ ব্যবহার করেছিল। সেটা কাজেও লেগেছে। কিন্তু সিপাপ নিশ্ছিদ্র নয়, ফলে রোগীর সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কিন্তু মার্সেডিজের বানানো এই নতুন সিপাপ সে ঝামেলা অনেকটা কমিয়ে এনেছে। এর মাঝেই ইউএলসিএইচ ও আরও তিনটি লন্ডনের হাসপাতালে ৪০টি নতুন সিপাপ পাঠানো হয়েছে। যদি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে দিনে এক হাজার সিপাপ বানাবে মার্সেডিজ। দেশটির ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এর মধ্যেই এটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্বাস্থ্যসেবা প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক ড. রেবেকা শিপলি বলেছেন, ‘সাধারণত এমন চিকিৎসা সরঞ্জাম বানাতে বছরের পর বছর লেগে যায়। কিন্তু আমরা কয়েক দিনেই সেটা করতে পেরেছি। কারণ, বাজারের উন্মুক্ত থাকা (পেটেন্টবিহীন) একটি সিপাপ নিয়ে সেটা নতুন করে বানিয়েছি, যাতে দ্রুত এটা উৎপাদন করা যায়।’

ইতালির লম্বার্ডির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেখানে ৫০ ভাগ রোগীকে সিপাপ দেওয়ার পর আর ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা দরকার হয়নি। এতে শুধু গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ বেড়েছে।