হোয়াটসঅ্যাপে বাংলাদেশ দলকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন

জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে। ফাইল ছবি
জাতীয় ফুটবল দলের কোচ জেমি ডে। ফাইল ছবি
>

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জাতীয় দলের ফুটবলারদের পর্যবেক্ষণে রেখেছেন কোচ জেমি ডে।

ড্রয়িংরুমে বাচ্চাদের সঙ্গে আশরাফুল রানার খুনসুটি। এমন সময় টুং করে বেজে উঠল মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ। ইনবক্স খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল সতর্কবার্তা, ‘ওজন বাড়লেই জরিমানা।’ গত রোববার জাতীয় দলের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নিয়ে প্রধান কোচ জেমি ডের পরামর্শে হোয়াটসঅ্যাপে ‘বি. (বাংলাদেশ) ন্যাশনাল ফুটবল টিম’ নামে গ্রুপ খুলেছে বাফুফে। সেখানে খুদে বা ভিডিও বার্তায় খেলোয়াড়দের দেওয়া হচ্ছে নির্দেশনা। সেগুলো আবার ইংল্যান্ডে বসে পর্যবেক্ষণ করছেন জেমিসহ বাকি কোচিং স্টাফরা। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের সময় এ ছাড়া আর উপায়ই-বা কী!

টানা খেলার মধ্যে থাকলে কোন ফুটবলারেরই না ক্লান্তি-অবসাদ দূর করতে বিশ্রামের প্রয়োজনে মন কাঁদে! একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে সে ‘সুযোগ’ এনে দিয়েছে করোনা-আতঙ্ক। বল নিয়ে মাঠে দৌড়ানো, জিমনেসিয়ামে পেশি ফোলানো—সবকিছুকে একপ্রকার অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য এই ঘাতক অণুজীব। তবে অপ্রত্যাশিত অবসর শেষে মাঠে ফেরাটা হতে পারে জামাল ভূঁইয়া, আশরাফুল রানা, সাদউদ্দিনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মাঠে অনুশীলনের সুযোগ নেই। ক্লাব বা জাতীয় দলের হয়ে ক্যাম্পে থাকাকালে যে জিমগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও বন্ধ। বাসায় জিম করে পেশি তৈরি রাখবেন, ফিটনেস ঠিক রাখবেন, সে ব্যবস্থাই-বা আছে কতজন ফুটবলারের! তবে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে কোচদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন তাঁরা।

ছুটির পর ক্লাব ছাড়ার সময় ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য খেলোয়াড়দের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন কোচরা। সঙ্গে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য রোববার থেকে যোগ হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পর্যবেক্ষণ। খুদে বা ভিডিও বার্তায় খেলোয়াড়দের প্রতি নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ জেমি ডেও, ‘জাতীয় দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা একটি গ্রুপ খুলেছি। সেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের সঙ্গে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কীভাবে ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে ফিট রাখা যায়।’

৪৩ সদস্যের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আছেন জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সহসভাপতি তাবিথ আউয়ালও। খেলোয়াড়দের পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন তাবিথ, ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খেলোয়াড়দের করণীয় বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ওজন ও শরীরের চর্বির পরিমাণ জানাতে হবে। সে অনুযায়ী আবার পরবর্তী নির্দেশনা জানানো হবে।’
কোচ বা কর্তারা পরামর্শ-নির্দেশনা দিতেই পারেন। সেগুলো খেলোয়াড়েরা মানছেন কি না, এর ওপরেই নির্ভর করবে এত চেষ্টার ফল। এই ছুটিতেও ক্লাব ভবনের পার্কিংয়ে বল নিয়ে অনুশীলন করেন জাতীয় দলের গোলরক্ষক আশরাফুল, ‘আমার বাসা আর ক্লাব পাশাপাশি। আমাদের ক্লাবের গোলরক্ষক কোচ ক্লাবেই আছেন। আমি বিকেলে ক্লাবে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বল নিয়ে অনুশীলন করি। এ ছাড়া ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য বাসায় “কোর” অনুশীলন করছি।’

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে খেলছেন আশরাফুল। তাঁর ক্লাবের সঙ্গে বাসা আর সিলেটে ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিনের বাসার সঙ্গে আছে মাঠ। আবাহনী লিমিটেডের এই তরুণ ফুটবলার প্রতিদিনই অনুশীলন করছেন মাঠে, ‘সকালে মাঠে অনুশীলন করি। বল নিয়ে অনুশীলন করার চেয়ে এই সময় ফিটনেস অনুশীলনের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি।’
জাতীয় দলের ফুটবলারদের মধ্যে অনুশীলনে ফাঁকি দেওয়ার বদনাম আছে অভিজ্ঞ সেন্টারব্যাক ইয়াসিন খানের। গতকাল সেই ইয়াসিনকে ফোনে পাওয়া গেল বরিশালে নিজ এলাকায় অনুশীলন করার পর, ‘মাত্র অনুশীলন করে মাঠ থেকে আসলাম। শট ও লং স্প্রিন্ট টেনে গতি ঠিক রাখছি।’

করোনাভাইরাসের মধ্যেই তিন-চার দিন আগে ডেনমার্কে ফিরে যাওয়া জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে অনুশীলনের কথা জিজ্ঞেস করতেই পাঠিয়ে দিলেন একটা ভিডিও। সবুজ মখমলের মতো এক মাঠে হাঁটছেন জামাল। জাতীয় দলের ফুটবলাররা যে এখন ফিটনেসের ব্যাপারে সচেতন, তা তো আর এমনি এমনি বলেন না কোচরা।