কী ঘটেছিল পাকিস্তানের সেই বাংলাদেশ সফরে?

পাকিস্তানের এই স্কোয়াডের অনেকেই ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের এই স্কোয়াডের অনেকেই ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
>১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। চট্টগ্রামে তিন দিনের ম্যাচ চলাকালে এক অপ্রীতিকর ঘটনা পণ্ড করে দেয় সেই সফর। কী ঘটেছিল সেদিন চট্টগ্রামে?

স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো টেস্ট দল হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছিল পাকিস্তান। ১৯৭৯-৮০ সালের সেই সফরটি ছিল পাকিস্তানের ভারত সফরের মাঝখানে। সংক্ষিপ্ত সেই সফরে চট্টগ্রামে একটি দুই দিনের ম্যাচ খেলে ঢাকায় একটি তিন দিনের ম্যাচ খেলার কথা ছিল পাকিস্তান দলের। কিন্তু চট্টগ্রামের দুই দিনের ম্যাচ চলাকালে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আচরণের কারণেই পণ্ড হয়ে যায় সেই ম্যাচ। ঢাকার ম্যাচ না খেলেই ফিরে যায় পাকিস্তান ক্রিকেট দল।

আফিস ইকবালের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে ভারত সফরে আসে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। সেটি ছিল ৬ টেস্টের দীর্ঘ সফর। বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বাই, কানপুর, চেন্নাই ও কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় সে ৬ টেস্ট। কানপুরে চতুর্থ টেস্টের পর ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আসে পাকিস্তান দল। ঢাকা থেকে সোজা চট্টগ্রাম যায় পাকিস্তান দল। অভিযোগ ওঠে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আচরণ ছিল অগ্রহণযোগ্য। তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে আসা ক্রিকেটপ্রেমীদের সালামের জবাবে ইমরান খানসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ‘নমস্কার’ দেওয়ার ভঙ্গি করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়েও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছিলেন কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার। সলতে গরম হয়েই ছিল। চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে দুই দিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিন চা বিরতির পর গ্যালারির দিকে ফিরে জাভেদ মিয়াঁদাদ নমস্কারের ভঙ্গি করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দর্শকেরা। চট্টগ্রামের দর্শকেরা এটিকে অপমান হিসেবেই নেন। গ্যালারি থেকে মাঠে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ধাওয়া করেন সাধারণ দর্শকেরা। এরপর আর ম্যাচটি শেষ করার কোনো উপায় ছিল না।

আজ থেকে ৪০ বছর আগে সে ঘটনার সাক্ষী ক্রিকেট সংগঠক ও বিসিবির পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে নামার পর থেকেই পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আচরণ মোটেও ভালো ছিল না। আমরা সালাম দিলেও উত্তরে তাঁরা “নমস্কার” করছিলেন। এ ছাড়াও পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন, যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অবমাননাকর। সেদিন চট্টগ্রামের সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। আমার যত দূর মনে পড়ে আসিফ ইকবাল সেবার বাংলাদেশে আসেননি। তিনি এ সফরের সুযোগ ভারতে তাঁর পৈতৃক বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন।’

১৯৮০ সালের ২ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল দুই দিনের ম্যাচটি। আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তান ৫ উইকেটে ১৭৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। মুদাসসর নজর করেন ৭৭। এ ছাড়া সাদিক মোহাম্মদ ৩৫ ও মাজিদ খান করেন ২১। বাংলাদেশের পক্ষে ইউসুফ রহমান ৩৮ রানে নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ১১৪ রানে। আবদুল কাদির ৪৯ রানে নেন ৫ উইকেট। এ ছাড়া মাজিদ খান ও ইকবাল কাশিম নেন ২টি করে উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে ইউসুফ রহমান ২৮, রকিবুল হাসান ১৬ আর রফিকুল আলম ১৬ রান করেন। খেলাটি যখন গোলযোগ পরিত্যক্ত হয় তখন ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান নিয়ে ব্যাটিং করছিল বাংলাদেশ। ইউসুফ রহমানের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৬ রান। বাঁ হাতি স্পিনার ইকবাল কাশিম নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

১৯৮০ সালের সে ঘটনার পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ ক্রিকেটীয় সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিসিসিবি (সে সময় নাম ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড) তো বটেই, বাংলাদেশ সরকারও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সে আচরণ ভালোভাবে নেয়নি। ১৯৮০ সালেই ফিরতি সফরে পাকিস্তান যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়।