ছয়, ছয়, ছয় ও ছয়ের দিন আজ

চার বছর আগেই সেই ব্রাফেটকেই মনে রাখবে ক্রিকেট দুনিয়া। ছবি: এএফপি
চার বছর আগেই সেই ব্রাফেটকেই মনে রাখবে ক্রিকেট দুনিয়া। ছবি: এএফপি
>

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলেছিলে কার্লোস। ছক্কার ফুলঝুড়িতে নিশ্চিত হারের মুখে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা

ক্যারিয়ারে এর পর আরও ২২ বার ব্যাটিং করেছেন কার্লোস ব্রাফেট। এই ২২ ইনিংস খেলার পথে দলের অধিনায়কত্বও বুঝে পেয়েছেন। অধিনায়ক হলেও ফর্মে খুব একটা উন্নতি হয়নি তাঁর। ৩৩ ম্যাচের দুই তৃতীয়াংশ ইনিংসে ব্যাট করা সুযোগ পেয়েও করেছেন মোটে ২৫১ রান।

স্ট্রাইকরেটও আহামরি কিছু নয়। এই আধুনিক যুগের টি-টোয়েন্টিতে স্লগ ওভারে নামা এক অলরাউন্ডারের জন্য ১১৩.১৩ বরং দুশ্চিন্তায় ফেলার মতো পরিসংখ্যান। এই ২২ ইনিংসে ২০ পেরিয়েছে মাত্র তিনবার এবং ১০ পেরোনো কোনো ইনিংসেই তাঁর স্ট্রাইকরেট দুই শ পেরোয়নি। ব্রাফেট কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কাউকে পরিসংখ্যান দেখালে তাঁরা অবশ্য বলবে, তাতে কী?

আসলেই পরিসংখ্যান যাই বলুক, বা গত চার বছরের পারফরম্যান্স যাই হোক না কেন, বিশ্ব ব্রাফেটকে মনে রাখবে শুধু চারটি বলের জন্য। সাড়ে চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ১৩ রানের ইনিংস খেলা ব্রাফেট নেমেছিলেন সম্ভাব্য কঠিনতম সময়ে। ২০১৬ সালে কলকাতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ২৭ বলে ৪৯ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। রান তোলার সব দায়িত্ব একাই য বুঝে নিয়েছিলেন মারলন স্যামুয়েলস। ৬৬ বলে তাঁর ৮৫ রানের ওই ইনিংসটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু চার বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতিতে স্যামুয়েলস ঝাপসা এক স্মৃতি। কারণ, সেই ফাইনাল মানেই যে ব্রাফেট আর তাঁর সেই চার বল।

শেষ ওভারে ১৯ দরকার ছিল উইন্ডিজের। এতক্ষণ দলকে টানা স্যামুয়েলস অন্যপ্রান্তে। ১৯তম ওভারে ক্রিস জর্ডানের প্রাণান্ত চেষ্টায় শেষ বলে স্যামুয়েলস কোনো রান নিতে পারেননি। ৬ বলে ১০ রান তোলা ব্রাফেট স্ট্রাইকে। ক্রিকেটের যত নিয়ম কেতা আছে, সেসব বলে ওভারের প্রথমেই যেকোনোভাবেই হোক স্যামুয়েলসকে স্ট্রাইক দেওয়াটাই উচিত। টি-টোয়েন্টিতে ৮৫ রানে থাকা ব্যাটসম্যানের পক্ষেই সম্ভব শেষ ওভারে ১৯ রান তোলার পাহাড়সম কাজটা করা।

ভিভ রিচার্ডসের মতো অবলীলায় চুইংগাম চিবিয়েছেন কিনা মনে নেই, তবে মুখে অমনই একটা ধুর, কী হবে ভাব ছিল ব্রাফেটের মুখে। প্রথম বলটা বেশ বাজে করেছিলেন স্টোকস। হাফ ভলিটা লেগ সাইডে সীমানা পার করতে কোনো কষ্ট হয়নি ব্রাফেটের।

এই ছক্কাই আসলে ওভারের মোড় বদলে দিয়েছিল। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাশগরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, প্রথম বলে ছক্কা খেলেয়ে ওই অবস্থায় ম্যাচ বের করার মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র দু-একজন বোলারই ফর্মে ছিলেন তখন। বেন স্টোকস তাঁদের একজন নন। পরের বলটা ইয়র্কার দিতে গিয়ে ফেললেন সামনে। ব্রাফেট যেন চামুচের মতো করে তুলে নিলেন আর ফেললেন উন্মাতাল দর্শকের মাঝে।

ইডেন তখন গর্জন করছে। ৪ বলে দরকার ৭ রান। প্রথম দুই বলে ছক্কা মারা ব্রাফেট কি এবার সিঙ্গেল নিয়ে বাকি কাজটা অভিজ্ঞ স্যামুয়েলসকে দেবেন? তৃতীয় বলটা ঠিক ব্যাটে বলে হয়নি ব্রাফেটের। কিন্তু সেদিন যেন অসুর ভর করেছিল তাঁর মাঝে। সেই ‘মিসহিটই’ লং অফের সীমানা ছাড়িয়ে গ্যালারির মাঝে গিয়ে পড়ল।

৩ বলে ১ রান দরকার। এমন অবস্থায় আর ম্যাচ নিয়ে কারও আগ্রহ ছিল না। বরং শেষটা কীভাবে হয় তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে বসা খোলস আবারও বল ফেললেন ব্যাটের সামনে। এই বল মিড উইকেটের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলতে কোনো সমস্যা হয়নি ব্রাফেটের। অন্তত সেদিনের ব্রাফেটের।

বয়স ৩২ বছর হয়ে গেছে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আর কখনোই কিছু করেননি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যারিয়ারেও যে আলো ছড়িয়েছেন বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ব্রাফেট মানেই তো ইডেনের শেষ ওভার। আর ছয়, ছয়, ছয় এবং ছয়…