১ টেস্টেই শেষ যাঁদের ক্যারিয়ার

সফেদ ক্রিকেটে এক টেস্টের বেশি টেকেননি এই পাঁচ বাংলাদেশি ক্রিকেটার
সফেদ ক্রিকেটে এক টেস্টের বেশি টেকেননি এই পাঁচ বাংলাদেশি ক্রিকেটার
অভিষেকের পর গত ২০ বছরে ৯৬ জন ক্রিকেটার বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। এঁদের মধ্যে কারও কারও টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে মাত্র এক টেস্ট খেলেই...


২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেটের ধ্রুপদি সংস্করণে এখনো পর্যন্ত নাম লিখিয়েছেন ৯৬ জন ক্রিকেটার। কিন্তু এই ৯৬ ক্রিকেটারের তালিকার মধ্যে কয়েকটি নামে চোখ আটকে যায়। সফেদ ক্রিকেট থেকে তাঁরা হারিয়ে গেছেন মাত্র এক টেস্ট খেলেই।

একটি টেস্ট কখনোই কোনো ক্রিকেটারকে বিচার করার জন্য যথেষ্ট নয়। জীবনের প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হয়েও পরে সফল হওয়ার অনেক উদাহরণই ক্রিকেট দুনিয়ায় আছে, আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও। কিন্তু কেন যেন সেই ক্রিকেটাররা আর কখনোই নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাননি। ঘটা করে টেস্ট দলে ডেকে তাঁদের বিদায় করে দেওয়া হয়েছে করুণ সুর বাজিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ক্রিকেটার আছেন পাঁচজন, যাঁদের টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে মাত্র এক ম্যাচ খেলেই।

বিকাশ রঞ্জন দাশ, আনোয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ফয়সাল হোসেন ও এহসানুল হক— এই পাঁচ ক্রিকেটারই ছিলেন সম্ভাবনাময়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সুযোগ পেয়েছিলেন দেশের হয়ে টেস্ট খেলার। কিন্তু একটা ম্যাচ খেলে বাদ পড়ে যাওয়ার ধাক্কাটা আর সামলে ওঠা হয়নি তাঁদের।

বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার শুরুর সময়টা ছিল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। দল নির্বাচনে এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতেন সে সময়ের নির্বাচকেরা। টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন মঞ্চে দল নির্বাচনে খুব একটা দূরদর্শিতার পরিচয় তাঁরা দিতে পারেননি। কখনো অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে দিতেন দেওয়ার আর কিছু নেই বলে, আবার নতুনদের সুযোগ দিয়ে অপেক্ষা করতেও রাজি ছিলেন না তাঁরা। ঘরোয়া ক্রিকেটে একটি-দুটি ভালো ইনিংস খেললেই কোনো খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে নিয়ে আসা হতো। আবার খারাপ খেললে ছুড়ে ফেলতেও দেরি হতো না। দেশের হয়ে একটি টেস্ট খেলে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই দেশের ক্রিকেটের ওই অস্থির সময়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

বিকাশ রঞ্জন দাশ ছিলেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের দলে বড় চমক। প্রথম একাদশেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে খুব পরিচিত ক্রিকেটার না হলেও নির্বাচকেরা তাঁর মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে সে ম্যাচে একটি উইকেটও নিয়েছিলেন বিকাশ। এরপর হারিয়ে যান বিস্মৃতির অতলে। অভিষেক টেস্টের পর বাংলাদেশ ২০০১ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাঠে নেমেছিল। বিকাশকে সে দলে নেওয়া হয়নি। এরপর ক্রিকেট থেকেই হারিয়ে যান তিনি। পরে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম ধারণ করেন মাহমুদুর রহমান—সে আরেক গল্প। বিকাশ পরে কেন অভিষেক টেস্টের পর আর সুযোগ পাননি, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

২০০২ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডোনাল্ড-পোলকদের সামনে অভিষেক রফিকুল ইসলামের। এরপর টেস্ট থেকে নেই হয়ে যান তিনিও। পচেফস্ট্রুমের একমাত্র টেস্টের দুই ইনিংস করেছিলেন ৭ রান। ওই সফরেই কিম্বার্লিতে খেলেছিলেন একটি ওয়ানডে, রফিকুল ব্যর্থ হয়েছিলেন সেখানেও। অথচ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রাজশাহীর হয়ে দুই হাজারের বেশি রান তাঁর। আছে ৩টি সেঞ্চুরি আর ১০ টি ফিফটি। তবু এরপর আর কখনোই রফিকুল ইসলাম নামটা জাতীয় দলে দেখা যায়নি।

এহসানুল হক ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরমার। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টেস্ট খেলারও সুযোগ পেয়েছিলেন। ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ। এরপর আর কখনোই সাদা পোশাকে দেখা যায়নি তাঁকে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। পিটারমারিজবার্গে চামিন্ডা ভাসের প্রথম ওভারে সেই হ্যাটট্রিকের অন্যতম শিকার তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এহসানুলের রান ৪ হাজার। ব্যাটিং গড় ছিল ৪০-এর কাছাকাছি। সেই তিনি কেন একটি টেস্ট খেলেই হারিয়ে গেলেন, সে এক রহস্য।

আনোয়ার হোসেন ছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ২০০২ সালের শুরুতে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। কিন্তু ব্যর্থতার কারণে সেটিই হয়ে যায় তাঁর শেষ টেস্টও। একটি ওয়ানডে খেলে ৪২ রান করে বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। টেস্টে আর সুযোগ না পেলেও ওয়ানডের ওই পারফরম্যান্স যেন জানিয়ে দেয় টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার প্রাথমিক যুগে অনেক ক্রিকেটারকেই গিনিপিগ বানিয়েছিলেন নির্বাচকেরা।

ফয়সাল হোসেন ঘরোয়া ক্রিকেটের আরেক নিয়মিত সফল মুখ। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার ভাগ্য তাঁরও হয়নি। ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাত্র এক টেস্ট খেলেই বিদায়ঘণ্টা শুনেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার হওয়ার পরেও ওই সময়ের কোচ নির্বাচকদের কাছ থেকে ফয়সাল পাননি নিজেকে প্রমাণের দ্বিতীয় সুযোগ।

এই পাঁচজন ছাড়া সোহরাওয়ার্দী শুভ, জিয়াউর রহমান, নাজমুল ইসলাম এবং সানজামুল ইসলামও একটি করে টেস্ট খেলেই বাদ পড়ে গেছেন। তবে এই ক্রিকেটাররা এখনো ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন বলে তাদের আবারও টেস্টে ফেরার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও থাকে। তবে সেটা শুধু কাগজ-কলমেই। আবারও টেস্ট খেলার আশা হয়তো তারাও আর করেন না।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবাই সফল হয় না। ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরমারও অনেক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকতে পারেন না। তবু একটি টেস্ট খেলেই বাদ পড়ে যাওয়ারা নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতে পারেন।