একটু এদিক-সেদিক হলেই তাঁরা হতেন নামী খেলোয়াড়

টম ক্রুজ, এমা ওয়াটসন, জেসন স্টাথাম ও শন কনোরি। ছবি: টুইটার
টম ক্রুজ, এমা ওয়াটসন, জেসন স্টাথাম ও শন কনোরি। ছবি: টুইটার
>

তাঁদের কাজ অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের বিনোদন দেওয়া। তবে ভাগ্যের চাকা একটু অন্যভাবে ঘুরলে হয়তো অভিনয় নয়, মাঠের ক্রীড়াশৈলী দিয়ে মুগ্ধ করতে পারতেন দর্শকদের!

ভবিষ্যতে কে কী হবেন, সেটা কি আর সবাই একদম শুরু থেকে নির্ধারণ করে রাখতে পারেন? জীবন অত পরিকল্পনা মাফিক চালানো যায় না অনেক সময়েই। ফলে ক্যারিয়ারের শুরুতে পেশা পরিবর্তনের ঘটনা দেখা যায় ভূরি ভূরি, খেলোয়াড় বা অভিনেতারাও এই ধারার ব্যতিক্রম নন। অনেক নামী অভিনেতা আছেন, একটু এদিক-সেদিক হলে বা খেলার প্রতি আগ্রহ অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি থাকলে হয়ে যেতে পারতেন জনপ্রিয় খেলোয়াড়। তা হতে না পারা সেসব অভিনেতাদের নিয়েই আজকের আয়োজন।

শন কনোরি। ছবি: টুইটার
শন কনোরি। ছবি: টুইটার


শন কনোরি
জেমস বন্ড চরিত্রকে রূপালি পর্দায় অমর করে রাখার পেছনে যাদের অবদান আছে, শন কনোরি তাঁদের অগ্রভাগেই থাকবেন। তবে জেমস বন্ডের সাতটা সিনেমার নাম চরিত্রে অভিনয় করা এই ভদ্রলোক কিশোর বয়সে ছিলেন ফুটবলার। খেলতেন বনিরিগ রোজ নামের এক ছোট ক্লাবে। কিন্তু তাঁর প্রতিভার খোঁজ পেয়ে গিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কিংবদন্তি ম্যানেজার স্যার ম্যাট বাসবি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে কনোরিকে খেলার আমন্ত্রণ জানান তিনি। কিন্তু কনোরির ধ্যান-জ্ঞান ছিল অভিনয়। না হলে জর্জ বেস্টের সতীর্থ হিসেবে হয়তো দেখা যেত এই কিংবদন্তিকে!

টম ক্রুজ। ছবি: টুইটার
টম ক্রুজ। ছবি: টুইটার


টম ক্রুজ
ফুটবলের প্রতি টম ক্রুজের আকর্ষণ আজকের নয়। প্রায়ই তাঁকে দেখা যায় লস অ্যাঞ্জলেস গ্যালাক্সির ম্যাচ দেখতে চলে গিয়েছেন। মিশন ইম্পসিবল সিরিজের দুর্ধর্ষ এই অভিনেতা কিন্তু ছোটবেলায় কানাডার এক স্কুল দলে ফুটবল খেলা শুরু করেছিলেন, খেলতেনও বেশ ভালো। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতেই বাজে এক চোট তাঁকে আবারও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করায়। ভাগ্যিস ভেবেছিলেন! নয়তো আমাদের সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা এত ঋদ্ধ হতো কী করে!

জজ ক্লুনি। ছবি: টুইটার
জজ ক্লুনি। ছবি: টুইটার


জর্জ ক্লুনি
বলিউডের আরেক দুর্দান্ত এই অভিনেতা ছিলেন সিনসিনাটির বাসিন্দা। সেই এলাকায় থাকার সুবাদে বাস্কেটবল দল সিনসিনাটি রেডসের ভক্তি ছিলেন ক্লুনি। সে দলের হয়ে খেলতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বোধ হয়, বাস্কেটবল খেলার চাইতে অভিনয়েই ভবিষ্যৎ হয়তো বেশি উজ্জ্বল তাঁর। ভুল ভাবেননি ক্লুনি।

ম্যাথিউ পেরি
চ্যান্ডলার বিং কে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্ববিখ্যাত সিচুয়েশনাল কমেডি সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস’ এর এই চরিত্রকে রূপদান করেছিলেন ম্যাথিউ পেরি। এই পেরি কিন্তু কানাডার যুব টেনিসের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন। টেনিস প্রতিভার ঠিকঠাক পরিচর্যা করতে পারলে হয়তো আজ ফেদেরার-নাদালদের সঙ্গে লড়তেন উইম্বলডন বা রোলাঁ গারোঁয়। কিন্তু কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার পর ক্যারিয়ার নিয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তাভাবনা করা শুরু করলেন পেরি। শুরু করলেন অভিনয়। ‘ফ্রেন্ডস’ ভক্তরা এই সিদ্ধান্তের জন্য হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন, নিশ্চিত!

জেসন স্টাথাম। ছবি: টুইটার
জেসন স্টাথাম। ছবি: টুইটার


জেসন স্ট্যাথাম
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিরিজ দিয়ে নতুন করে নিজের জাত চেনানো এই অ্যাকশন হিরোর শুরুটা হয়েছিল ডুবুরি হিসেবে। ব্রিটেনের সাঁতার দলের একজন ডুবুরি ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালের কমনওয়েলথ গেমসেও খেলেছেন। ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছিলেন দ্বাদশ। অভিনয়ে না এসে ডুবুরি হলেও ক্যারিয়ারটা মন্দ হতো না স্ট্যাথামের!

এমা ওয়াটসন। ছবি: টুইটার
এমা ওয়াটসন। ছবি: টুইটার


এমা ওয়াটসন
হ্যারি পটার সিরিজের বিখ্যাত ‘হারমেওনি গ্রেঞ্জার’ তিনি। তবে হ্যারি পটারের সঙ্গে রূপালি পর্দায় দুঃসাহসিক সব অভিযানে অংশ নেওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন হকি খেলোয়াড়। পড়তেন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেই ফিল্ড হকি খেলোয়াড় হিসেবে বেশ নাম কামিয়েছিলেন এমা ওয়াটসন।

জেসন সেগেল
বিখ্যাত সিচুয়েশনাল কমেডি সিরিজ ‘হাউ আই মেট ইওর মাদার’ এর মার্শাল এরিকসেনকে মনে পড়ে? মিনেসোটার বাস্কেটবল পাগল সেই ছেলে যে নিউ ইয়র্কে এসে বন্ধু বার্নি স্টিনসন ও টেড মসবি, বান্ধবী লিলি অলড্রিনকে নিয়ে মজার মজার সব কাণ্ড ঘটায়? প্রায় সাড়ে ছয় ফুটি এই তারকা আসলেও বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে আদর্শ। অভিনয়ে আসার আগে কিছুদিন বাস্কেটবল খেলেছিলেন। লস অ্যাঞ্জেলস এর হাওয়ার্ড-ওয়েস্টলেকের হয়ে খেলার সময় দুই ভাই জারোড ও জেসন কলিন্সের সতীর্থ ছিলেন তিনি। কলিন্স ভ্রাতৃদ্বয় পরে এনবিএ তে খেললেও, জেসন সেগেল নাম লেখান অভিনয়ে।

ডোয়েইন জনসন
ডব্লিউডব্লিউই এর বিখ্যাত ‘দ্য রক’ তিনি। এটা ছাড়াও তাঁর আরেক পরিচয়, হলিউডের অন্যতম সেরা নায়ক হিসেবে। ডোয়েইন জনসন ডব্লিউডব্লিউই তে স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন বা ট্রিপল এইচকে ‘রক বটম’ দিয়ে ধরাশায়ী করার আগে খেলতেন আমেরিকান ফুটবলে। মায়ামি হারিকেনসের ডিফেন্সিভ লাইন সামলানো এই তারকা ১৯৯১ সালে জিতেছিলেন জাতীয় শিরোপা।

ডেনজেল ওয়াশিংটন। ছবি: টুইটার
ডেনজেল ওয়াশিংটন। ছবি: টুইটার


ডেনজেল ওয়াশিংটন
‘আমেরিকান গ্যাংস্টার’, ‘দি মাঞ্চুরিয়ান ক্যান্ডিডেট’, ‘ম্যান অন ফায়ার’, ‘ফিলাডেলফিয়া’ এর মতো বহু সিনেমায় আলো ছড়ানো ডেনিজেল ওয়াশিংটন নাটক ও সাংবাদিকতা বিভাগে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কলেজিয়েট বাস্কেটবল খেলতেন তিনি, গার্ড হিসেবে। পরে একটা সামার ক্যাম্পে সহকারী আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করার সময় এক সহকর্মী তাঁকে পরামর্শ দেন অভিনয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য। ব্যস, বাকি কাহিনী সবার জানা!