করোনাতেও বেশি ক্ষতি দেখছে না বিসিবি

বিসিবি পরিচালক ও অর্থ কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার (বাম পাশে)। ছবি: প্রথম আলো
বিসিবি পরিচালক ও অর্থ কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার (বাম পাশে)। ছবি: প্রথম আলো
>

• ভারত, ইংল্যান্ডের বোর্ডের মতো বড় ক্ষতির মুখে পড়বে না বিসিবি
• করোনার কারণে ক্ষতি হতে পারে সর্বোচ্চ ২৫%
• এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও আগামী বিপিএল দিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চায় বিসিবি

করোনাভাইরাসের কারণে এই বছর যদি আইপিএল শেষ পর্যন্ত মাঠে না-ই গড়ায়, বিসিসিআইয়ের ক্ষতি হতে পারে ১০ হাজার কোটি রুপি! ভয়ে আছে ইংল্যান্ডও। এবারের গ্রীষ্মে ধুমধাম করে ১০০ বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ‘দ্য হানড্রেড’-এর প্রথম আসর আয়োজন করার কথা। সঙ্গে ইংল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট, রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপ, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ তো আছেই। পুরো গ্রীষ্মের ক্রিকেট ভেস্তে গেলে ইসিবির ক্ষতি হবে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো।

এদিক দিয়ে এখন পর্যন্ত কিছুটা যেন স্বস্তিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। করোনাভাইরাসের প্রভাবে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেলেও অত বড় ক্ষতির ভয় নেই বিসিবির। বিসিবি পরিচালক ও অর্থ কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দারই কাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমাদের রাজস্ব আয়ের টুর্নামেন্টগুলোর কোনোটাই করোনার কারণে বাদ পড়েনি। পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড সফরের কথা ছিল। সেগুলোতে তো আরেক বোর্ডের আয় হতো। সেদিক থেকে আমরা ভালো জায়গায় আছি।’

বিসিবির স্বস্তিতে থাকা মূলত করোনাভাইরাসের আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটের কিছু খেলা শেষ হয়ে যাওয়াতে। একই কারণে স্বস্তিতে আছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানও। বিসিবির বড় অঙ্কের রাজস্ব আসে বিপিএল থেকে। সেটি এবার ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত করোনার বড় প্রভাব বলতে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড সফর এবং প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ স্থগিত হয়ে যাওয়া। কিন্তু এসবে বিসিবির আর্থিক ক্ষতি খুব বেশি হবে না।

তবে দুশ্চিন্তা যে একেবারেই নেই, তা নয়। বিসিবির রাজস্বের ৫০ ভাগই আসে আইসিসির টুর্নামেন্ট থেকে। আগামী অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্থগিত হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কোষাগারে বড় ধাক্কাই লাগার কথা। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপও বিসিবির জন্য লাভজনক। বিসিবি এখন সেসবের দিকেই তাকিয়ে। ইসমাইল হায়দার বলছিলেন, ‘আইসিসির টুর্নামেন্ট আছে এই বছরের শেষে। এশিয়া কাপ আছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। টুর্নামেন্টগুলো যদি মাঠে গড়ায়, তাহলে আমাদের খুব একটা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।’

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব যে কিছুটা হলেও পড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেটে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিসিবিও সেটি মেনেই এগোনোর কথা ভাবছে। খেলা না হলে মাঠের স্পনসর, জার্সির স্পনসর থেকে রাজস্ব আয় হবে না। ঘরের মাঠে জুন ও আগস্টে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হওয়ার কথা। করোনাভাইরাসের কারণে দুটি সিরিজই স্থগিত হয়ে যেতে পারে। অবশ্য বড় দলের বিপক্ষে খেলা হলেও টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিসিবির খুব বেশি লাভ হয় না। তাই ক্ষতি কিছু হলেও অঙ্কটা বড় হওয়ার শঙ্কা নেই।

পরিস্থিতির কারণে ঘরোয়া ক্রিকেট না হওয়ায় বিসিবির কিছু খরচও কম হচ্ছে এখন। ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ও ঘরোয়া লিগ আয়োজনে মোটামুটি ভালো অঙ্কের অর্থই খরচ হয়। যোগ-বিয়োগ করে অর্থ কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার সম্ভাব্য ক্ষতির একটা অঙ্ক দাঁড় করাতে চাইলেন, ‘সব মিলিয়ে এ বছর বিসিবির ক্ষতি হতে পারে সর্বোচ্চ ২০-২৫ ভাগ। অবশ্য এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বা আরও খারাপ হলে অঙ্কটা বাড়তেও পারে।’

ক্ষতি যা-ই হোক, সেটি পুষিয়ে নেওয়ারও সম্ভাবনা দেখছেন তিনি, ‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে খুব বেশি না হলেও কিছু রাজস্ব আসত। তারপরও যদি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ হয়, আর বছর শেষে যদি বিপিএলটা করতে পারি, তাহলে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’

করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরো বিশ্ব যখন বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়েও আতঙ্কিত, ইসমাইল হায়দার দেখাচ্ছেন আশা। তাঁর দাবি, আর্থিকভাবে বিশ্বের সেরা পাঁচ বোর্ডের একটি বিসিবি। যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো সামর্থ্য তাঁদের আছে, ‘আর্থিকভাবে বিসিবি ভালো অবস্থানে আছে। বলতে পারেন বিশ্বের সেরা পাঁচ বোর্ডের মধ্যেই আছি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান এমনকি শ্রীলঙ্কা থেকেও আমরা ভালো অবস্থানে। আর আমাদের কিছু সংরক্ষিত তহবিলও আছে।’