লিভারপুলের মতো ভুল করবে না সিটি

কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠাচ্ছে না ম্যানচেস্টার সিটি।
কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠাচ্ছে না ম্যানচেস্টার সিটি।
>সরকারের ঘোষিত পদ্ধতির সুবিধা নিতে খেলার বাইরের কর্মীদের সাময়িক ছুটি দিয়েছে লিভারপুল ও টটেনহাম। সিটি তা করবে না ঘোষনা দিয়েছে।

‘কখনো একা হাঁটবে না’ – ক্লাবটার মূলমন্ত্র। প্রতি ম্যাচের আগে-পরে, কিংবা কঠিন সময়ে লিভারপুলের সমর্থকদের কণ্ঠে বিশ্বাস হয়েও ঝরে গানটার সুর। কিন্তু সেই লিভারপুলই করেছে ক্লাবের বিশ্বাসকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়ার মতো এক কাজ। করোনাভাইরাসের সময়ে ক্লাবের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কর্মীদের সাময়িক ছুটি দিয়েছে লিভারপুল। যে সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড়েরাই। 

শুধু লিভারপুলই নয়, টটেনহামও একই পথে হেঁটেছে। তবে এই দুই দলের এমন কাজের সমালোচনার মধ্যে কাল ম্যানচেস্টার সিটি পিছু হটেছে। ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মেইল জানাচ্ছে, আগে সিটিও কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠাবে ঠিক করেছিল। কিন্তু শুক্রবার বোর্ড সভায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সিটি।
সাময়িক ছুটি ব্যাপারটা কী? করোনাভাইরাসের কারণে খেলা বন্ধ, ক্লাবের আয়ও বন্ধ। এমন অবস্থায় ক্লাবের আর্থিক সঙ্গতি ঠিক রাখতেই কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো। তাতে কর্মীদের ক্ষতি হবে না, কারণ ব্রিটিশ সরকারের স্কিম অনুযায়ী এমন সাময়িক ছুটিতে যাওয়া কর্মীদের বেতনের ৮০ ভাগ (মাসে সর্বোচ্চ ২৫০০ পাউন্ড) সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। স্কিমটা করোনায় খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতেই করা হয়েছিল। লিভারপুল-টটেনহাম সেটির সুবিধাই নিয়েছে। কর্মীদের বাকি ২০ ভাগ বেতন ক্লাব দেবে। উদ্দেশ্য, এতে কর্মীদেরও বেতন ঠিক থাকল, ক্লাবের আর্থিক বিবৃতিতে চাপও অনেকটা কমল।
কিন্তু এতে তো সরকারের কোষাগারে চাপ বাড়ে। অথচ লিভারপুলই গত ফেব্রুয়ারিতে দেখিয়েছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে তাদের করপূর্ব আয় ৫১০ লাখ ডলার! যেখানে খেলোয়াড়দের কোটি কোটি টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে সাধারণ কর্মীদের ছুটিতে পাঠানো বিধিবহির্ভুত না হলেও অমানবিকই।
একদিকে লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন কদিন ধরে প্রিমিয়ার লিগের অন্য ক্লাবের অধিনায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে চলেছেন এমন কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ করার জন্য, তার মধ্যে ক্লাবের মালিকপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত দেখে সাবেক খেলোয়াড়েরাই অবাক, লজ্জিত। সাবেক ডিফেন্ডার জেমি ক্যারাঘার টুইটে লিখেছেন, ‘মহামারির শুরুর দিকে ক্লাবের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ সবার জন্য সমবেদনা দেখিয়েছেন, ক্লাবের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের বেতন কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ভালোভাবে জড়িত। সেই সম্মান, সুনাম সব জলে গেল! খুবই বাজে সিদ্ধান্ত, লিভারপুল।‘ সাবেক মিডফিল্ডার ডিটমার হামানের টুইট, ‘ক্লাবটার যে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা আমি দেখেছি, তার সঙ্গে যায় না এটা।’
এদিকে প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের বেতন কাটা নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক খেলোয়াড়দের ৩০ ভাগ বেতন কাটার কথা বলেছেন। স্পেন-ইতালি-জার্মানিতে খেলোয়াড়দের বেতন কেটেছে ক্লাবগুলো। ইংলিশ লিগও হয়তো সে পথেই হাঁটবে। তবে খেলোয়াড়দের সংগঠন পিএফএ পরশু বিবৃতিতে জানিয়েছে, খেলোয়াড়দের বেতন ৩০ শতাংশ কাটা মানে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব হিসেবে প্রায় ২০ কোটি পাউন্ড কম জমা পড়বে।
তবে নাইট এভাবে খেলোয়াড়দের দিকে আঙুল তোলারও সমালোচনা হচ্ছে। সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড স্ট্রাইকার ওয়েইন রুনি সানডে টাইমসে কলামে লিখেছেন, ‘হঠাৎ ফুটবলারদের কেন বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে? এত কঠিন সময়ে তাঁর মাথায় শুধু ফুটবলারদের বেতনের কথাই কেন এল? মনে হচ্ছে, মহামারি ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরাতেই এসব বলেছেন তিনি।‘