ওয়াসিম-ওয়াকারের 'তিন ওভার' বদলে দেয় তাঁর ভাবনা

সাকলায়েন মুশতাক। ছবি: এএফপি
সাকলায়েন মুশতাক। ছবি: এএফপি
>পাকিস্তানের সাবেক অফ স্পিনার সাকলায়েন মুশতাক বোলিংকে নিয়ে গিয়েছিলেন শিল্পের পর্যায়ে। তাঁর হাত থেকে বের হওয়া ‘দুসরা’ অফ স্পিন বোলিংকে দিয়েছিল ভিন্নমাত্রা। তিনি মনে করেন নেট অনুশীলনের সময় তিন ওভারের এক চ্যালেঞ্জ গড়ে দিয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার।

অফ স্পিনের শিল্পী ছিলেন তিনি। এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আছে তাঁর। ম্রিয়মাণ অফ স্পিন বোলিংকে ভয়ংকর করে তুলেছিলেন তাঁর এক উদ্ভাবন দিয়ে। ‘দুসরা’ নামের সেই ডেলিভারিটি আজও হয়তো দুঃস্বপ্ন হয়ে এসে বুকে কাঁপন ধরায় নব্বইয়ের দশকের ব্যাটসম্যানদের। নিজেকে কিংবদন্তির কাতারে নিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের সেই সাবেক অফ স্পিনার সাকলায়েন মুশতাক জানিয়েছেন, কীভাবে ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের নিজেদের মধ্যে একটা মজার খেলা গড়ে দিয়েছিল তাঁর গোটা ক্যারিয়ার।

এক সময় ‘টু ডব্লু’খ্যাত ওয়াসিম ও ওয়াকারের নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ক্রিকেট দুনিয়ার আলোচনার বিষয়। সে প্রতিযোগিতা ছিল প্রতিটি ম্যাচে এক অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। এ দুইয়ের তীব্র পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়ে বড্ড ঝামেলার মধ্যেই ছিল বাকি দলগুলো। নেট অনুশীলনেও ওয়াসিম-ওয়াকার নিজেদের মধ্যে মেতে উঠতেন মজার প্রতিযোগিতামূলক খেলায়। তারই একটার প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন সাকলায়েন।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় সাবেক এ অফ স্পিনার মেতেছেন ওয়াকার-ওয়াসিমের প্রশংসায়, ‘নিজেদের সময়ে টু ডব্লু বিশ্বজুড়ে ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন। তাঁদের দুজনের একটা ঘটনা আমার ক্যারিয়ারে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় একবার নেট অনুশীলনেও দুজনে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে উঠলেন। ওয়াকার ও ওয়াসিমের দ্বৈরথ তো ক্রিকেটেই বিশেষ হয়ে আছে। দুই পেসারই প্রতি ম্যাচে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন।’

তা ওয়াসিম-ওয়াকারের সেই খেলাটি কী ছিল? সাকলায়েনের মুখেই শুনুন, ‘আমি প্রথম যখন দলে আসি, এই দুজন সব সময়ই নিজেদের স্বকীয় ধরন নিয়ে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে থাকতেন। তো অস্ট্রেলিয়ায় দুজনে সিদ্ধান্ত নিলেন তিন ওভারের একটা প্রতিযোগিতা করবেন। কে কত বেশি বল সিমের ওপর ফেলতে পারেন, সেটির প্রতিযোগিতা। আমাকে বানালেন বিচারক। আকরাম প্রথম বলটা করলেন, একটা ইনসুইঙ্গার। যখন আমি পরীক্ষা করলাম, দেখলাম বল একেবারে নিখুঁতভাবে সিমের ওপর পড়েছে। এরপর ওয়াকারও একটা ইনসুইঙ্গার করলেন, এটাও নিখুঁতভাবে সিমের ওপর পড়ল। এখানে মূল ব্যাপারটা ছিল দুজনের প্রতিযোগিতার তীব্রতা। এত আগ্রাসন আর গতি নিয়ে বল করছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন কোনো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে বল করছেন!’

‘তো দুজনই বল করে যেতে লাগলেন, প্রত্যেকটা বলই সিমের ওপর পড়ছিল। প্রতি বলের পর একজন অন্যজনের মনঃসংযোগ নাড়িয়ে দেওয়ারও কত চেষ্টা করছিলেন! স্লেজিং করছিলেন, যাতে ভুল দিকে বল করেন’—যেন এখনো বিস্মিত সাকলায়েন বলে যান। তৃতীয় ওভারে এসে প্রতিযোগিতায় একটু বদলও আনেন ওয়াসিম-ওয়াকার। সাকলায়েন বলছিলেন, ‘তৃতীয় ওভারের শুরুতে ওয়াসিম বললেন, দুজন অনেক ইনসুইঙ্গার করেছেন, এবার কিছু আউটসুইঙ্গারও করা উচিত। দুজন আমাকে বললেন, প্রত্যেকটা বল করার আগেই তাঁরা আমাকে বলবেন এই বলটা কোন দিকে যাবে। ওয়াকারও তা-ই করলেন। (ওয়াসিমের মতোই) আউটসুইঙ্গার করলেন, এটাও নিখুঁতভাবে সিমের ওপরই পড়ল!’

নেটে সাধারণ একটা সেশনেও দুই গ্রেট ওয়াসিম ও ওয়াকারের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে কতটা কী শিখেছিলেন সাকলায়েন, সেটি তাঁর ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। ৪৯ টেস্টে ২০৮ উইকেট আর ১৬৯ ওয়ানডেতে ২৮৮ উইকেট তো আছেই। টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর ১৩বার ৫ উইকেট পাওয়াও বলে দেয়, ক্যারিয়ারটা কী দারুণই না ছিল সাকলায়েনের!