২২ বছর তিনি কোথায় ছিলেন

জন ট্রাইকাস ২২ বছর ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে। ফাইল ছবি
জন ট্রাইকাস ২২ বছর ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে। ফাইল ছবি

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে অপ্রত্যাশিত এক বিরতি চলছে এখন। করোনা ভাইরাসের কারণে থেমে গেছে সব খেলা। থেমে আছে ক্রিকেটও। এই বিরতির শেষ কোথায়? কত দিন, কত সপ্তাহ, কত মাস পর সবাই আবার খেলায় ফিরতে পারবেন? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পাঁচ-সাত মাসও যদি লেগে যায়, বিরতিটা নিঃসন্দেহে অনেক বড়। অবশ্য জন ট্রাইকস এ কথা শুনে হাসতে পারেন। ঠোঁট বাকিয়ে বলতে পারেন, ‘বিরতি কাকে বলে, আমার কাছে শুনুন।’

ট্রাইকসের জন্ম মিসরে, টেস্ট খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা আর জিম্বাবুয়ে, দুদলের হয়ে-বিরল রেকর্ডের তালিকায় নাম তুলতে এটিই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ট্রাইকস এগিয়েছেন আরও দুই কদম। এমন এক রেকর্ডে তাঁর নাম আছে, সেখানে তাঁকে টপকে যাওয়া সত্যি কঠিন। ট্রাইকসের টেস্ট অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে, ১৯৭০ সালে। দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার টেস্টের সিরিজে তিনটিতেই খেলার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। অফ স্পিন বোলিং করে সিরিজে খুব যে ভালো করেছেন, তা নয়। ৩ টেস্টে পেয়েছিলেন ৪ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকটা যে এত দ্রুত হয়ে যাবে, সেটি তিনি নিজেও আসলে ভাবেননি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্রই দুটি মৌসুম কাটিয়েছেন। আহামরি সাফল্যও সেখানে পাননি। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকা দলে কীভাবে দ্রুত সুযোগ পেলেন? ‘আমি সৌভাগ্যবান যে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন একজন স্পিন বোলার খুঁজছে আমি একেবারে সঠিক সময়, সঠিক জায়গায় ছিল। দলের কেউ হয়তো ভেবেছিল আমিই কাজটা করতে পারব’-ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ট্রাইকস।

খুব একটা কাঠখড় না পেরিয়েই দ্রুত টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বলেই কিনা নিয়তি তাঁকে নিয়ে মুচকি হেসেছিল! ওই সিরিজের পরই বর্ণবাদের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেহেতু ভবিষ্যৎ অন্ধকার, ট্রাইকস পাড়ি জমালেন জিম্বাবুয়েতে। খেলতে শুরু করলেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। জিম্বাবুয়ের টেস্ট মর্যাদা পেল ১৯৯২ সালে। জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্ট দিয়ে আবার ফিরলেন এই অফ স্পিনার, মাঝখানে পেরিয়ে গেছে ২২ বছর ২২২ দিন। এটি বিশ্ব রেকর্ড, দুই টেস্টের মাঝে এটিই সর্বোচ্চ বিরতি। ২২ বছর বিরতিতে ট্রাইকস যখন খেলতে নামলেন, তাঁর বয়স তখন ৪৫। জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টের স্কোরকার্ড খুলে দেখতে পাবেন, দলের ১১জন নয়; সেদিন টেস্ট অভিষেক হয়েছে আসলে ১০ ক্রিকেটারের। ট্রাইকসের অভিষেক তো হয়ে গেছে আরও ২২ বছর আগে।

ভারতের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টে ভালো বোলিং করেছেন ট্রাইকস, নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। খারাপ করেননি পরের ৪ টেস্টেও। কিন্তু খেলাটা আর বেশি দিন চালিয়ে যেতে পারেননি। মিসরে জন্ম নেওয়া ট্রাইকস দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের পর্ব শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে, পরবর্তী কোচিং পেশাতেও জড়িয়েছেন। ১৯৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা নিষিদ্ধ হওয়ার পর ট্রাইকস কি ভেবেছিলেন আবার সুযোগ পাবেন টেস্ট খেলার? দীর্ঘ সময় কীভাবে তিনি স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন? ট্রাইকস বলেন, ‘(দীর্ঘ বিরতিতে) আবারও টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাটা ছিল অন্যরকম। সত্যি ভাবতে পারিনি যে আমার খেলা ছাড়ার আগে জিম্বাবুয়ে টেস্ট মর্যাদা পেয়ে যাবে। জিম্বাবুয়ের হয়ে প্রথম টেস্ট সিরিজে (ভারতের বিপক্ষে) আমার পারফরম্যান্স ছিল তৃপ্তিদায়ক।’

ট্রাইকসের মতো যে ক্রিকেটারদের দুই টেস্টের মাঝে দীর্ঘ বিরতি পড়েছে, সবারই বিচিত্র সব গল্প আছে। সে সব গল্প হবে আরেকদিন, আপাতত দুই টেস্টের মাঝে সর্বোচ্চ বিরতির তালিকাটা দেখে নেওয়া যেতে পারে- 

নামক্যারিয়ারবিরতি
জন ট্রাইকস (দ.আ/জিম্বাবুয়ে)১৯৭০-১৯৯৩২২ বছর ২২২ দিন
জর্জ গান (ইংল্যান্ড)১৯০৭-১৯৩০১৭ বছর ৩১৬ দিন
ইউনিস আহমেদ (পাকিস্তান)১৯৬৯-১৯৮৭১৭ বছর ১১ দিন
মিক কমাইলে (দ. আফ্রিকা)১৯১০-১৯২৮১৪ বছর ৯২ দিন