টেন্ডুলকার 'টেকনিকে সেরা', লারা 'প্রিয়', কোহলি 'সময়ের সেরা'

মাইকেল ক্লার্ক জানিয়েছেন নিজের প্রিয় ব্যাটসম্যানদের গুণাবলির কথা। ছবি : এএফপি
মাইকেল ক্লার্ক জানিয়েছেন নিজের প্রিয় ব্যাটসম্যানদের গুণাবলির কথা। ছবি : এএফপি

দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন, অধিনায়কত্ব করেছেন কত শত ম্যাচে, আঁটতে হয়েছে কতশত ব্যাটসম্যানকে ফেরানোর পরিকল্পনা। এঁদের মধ্যে শুধু সাতজনকে বেছে নিতে বলা খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মতো কঠিন না হোক, একেবারে সহজ কাজ মোটেও নয়। কঠিন সেই কাজটাই করেছেন ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।

বিগ স্পোর্টস ব্রেকফাস্ট নামে অনুষ্ঠানে এসে বেশ কয়েকটি শিরোনামেরই জন্ম দিলেন ক্লার্ক। এর আগে বলেছেন, ২০১৮-১৯ মৌসুমে নিজেদের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা বিরাট কোহলিকে তেমন একটা স্লেজিং করেনি আইপিএলের কথা মাথায় রেখে। যেটি বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এবার বিতর্ক ততটা নয়, হয়তো ক্লার্কের পছন্দের সঙ্গে নিজের পছন্দ মিলিয়ে আলোচনা চলতে পারে।

সাত ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্লার্ক বেছে নিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার, নব্বইয়ের দশক ও এই শতাব্দীর শুরুতে টেন্ডুলকারের সঙ্গে যাঁর নিয়ত তুলনা হতো সেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা, সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন বিরাট কোহলি, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স, দক্ষিণ আফ্রিকারই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস, শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা আর নিজের পূর্বসূরি ও কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে।

কেন তাঁদের সেরা সাতে রেখেছেন, সে ব্যাখ্যায় প্রত্যেককে নিয়ে অল্প শব্দে বলেছেন ক্লার্ক। কী বলেছেন তাঁদের নিয়ে?

শচীন টেন্ডুলকার
‘সম্ভবত আমার দেখা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেকনিক্যালি সবার সেরা। আউট করার জন্য এর চেয়ে বেশি বেগ আর কোনো ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে পেতে হয়নি। আমার মনে হয় টেকনিক্যালি শচীনের কোনো দুর্বল দিক ছিল না। (টেন্ডুলকারের বিপক্ষে খেলার সময়) আপনার একটা অংশ প্রার্থনায় বসে যাবে যে তিনি যাতে কোনো একটা ভুল করেন।’

ব্রায়ান লারা
‘সম্ভবত ক্যারিয়ারজুড়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। যদি পরিসংখ্যান দেখেন, হয়তো দেখবেন, তাঁর গড় এই তালিকায় থাকা অন্য ব্যাটসম্যানদের মতো অত বেশি নয়। কিন্তু তিনি যেভাবে খেলতেন, সেটা ফাস্ট বোলারের বিপক্ষেই হোক বা স্পিনারের বিপক্ষে, সেটা অন্যরকম ছিল! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর সাফল্যও দেখুন! যে ব্যাটসম্যানদের এই তালিকায় রেখেছি, সবারই অবশ্য এই দিকটা হিসেবে নিয়েছি - অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁদের দাপট। একবার ভাবুন, ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি, ব্রেট লিগ, শেন ওয়ার্ন - এঁরা একজন ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল করছেন, অথচ (তালিকায় থাকা) এই ব্যাটসম্যানরা সব সময়ই তাঁদের বিপক্ষে সাফল্য পাওয়ার পথ খুঁজে নিয়েছেন।’

বিরাট কোহলি
‘আমার মনে হয় তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান ও। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে ওর রেকর্ড অবিশ্বাস্য। টেস্ট ক্রিকেটেও দাপট দেখানোর উপায় বের করে ফেলেছে ও। কোহলি আর টেন্ডুলকারের মধ্যে যে জায়গাটায় বড় মিল, সেটা হচ্ছে দুজনই সেঞ্চুরিটাকে বড় করতে ভালোবাসতেন।‘

এবি ডি ভিলিয়ার্স
‘আমি আশায় আছি ও ফিরে আসবে, আবার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলবে। একজন সুপারস্টার ও! ব্যাটিং অর্ডারের যেকোনো জায়গায় ব্যাট করতে পারে। টি-টোয়েন্টিতে দারুণ দাপুটে। মাঠের যেকোনো দিকেই রান তুলতে পারে ও।‘

জ্যাক ক্যালিস
‘বিপক্ষে খেলেছি, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে যে দাপট দেখাতেন তিনি, আমাদের বোলিংয়ের বিপক্ষে বিপক্ষে যেভাবে অনায়াসে রান করতে পারতেন, সেটা অবিশ্বাস্য ছিল।‘

রিকি পন্টিং
‘অস্ট্রেলিয়া দলে পাশাপাশি খেলেছি, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সম্ভবত তিনিই সেরা। সেরা অনেক ব্যাটসম্যানের সঙ্গেই খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার - ম্যাথু হেইডেন, স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট… ডেমিয়েন মার্টিনও ছিলেন যিনি কি না একজন জিনিয়াস! কিন্তু এঁদের চেয়ে রিকিকে যেটা আলাদা করে রাখছে সেটি হলো যে যুগে তিনি খেলেছেন, সেটি। তাঁর সময়ে প্রায় প্রত্যেকটা দলেই দুই বা তিনজন উঁচু স্তরের, বিশ্বমানের বোলার ছিলেন, এবং সবার বিপক্ষেই তিনি দাপট দেখিয়েছেন।‘

কুমার সাঙ্গাকারা
‘ (সেরা ব্যাটসম্যানদের আলোচনায়) ওর কথা কেন যেন সব সময়ই সবাই ভুলে যায়। অবিশ্বাস্য ব্যাটসম্যান! তিন নম্বরে ব্যাট করত, যেটা আমার চোখে ব্যাট করার জন্য সবচেয়ে কঠিন পজিশন। যতটুকু মনে পড়ে ও বিশ্বকাপে টানা তিনটি সেঞ্চুরি করেছে (আসলে চারটি, ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে)। সাঙ্গাকারা ব্যাট হাতে ভীষণ দাপুটে একজন, আর ক্রিকেট মাঠের সবচেয়ে ভদ্র মানুষগুলোর একজন।‘