সাকিব নিশ্চিত, সবাই ঘরে যার যার কাজটা করবে

এই সময়ে ক্রিকেটারদের ফিটনেস ধরে রাখায় গুরুত্ব দিলেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
এই সময়ে ক্রিকেটারদের ফিটনেস ধরে রাখায় গুরুত্ব দিলেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
>

ফিটনেস ধরে রাখার পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত এই অবসর অন্য কাজেও লাগাতে বললেন সাকিব আল হাসান

এমনিতেও সময়টা মাঠের বাইরেই কাটানোর কথা তাঁর। আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে গত অক্টোবর থেকেই খেলা থেকে দূরে সাকিব আল হাসান। এখন তো আবার অপেক্ষা দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হওয়ার। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে ২২ থেকে ২৩ দিন হলো সাকিব আছেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের ম্যাডিসন শহরে।

সম্প্রতি মুঠোফোনে সেখান থেকেই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন সাকিব। প্রসঙ্গ অনেকই ছিল। তবে ঘুরেফিরে বারবারই এসেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রসঙ্গ। সাকিব বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। সেখানে গিয়েই ১৪ দিন স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, জানিয়েছেন সে সময়ের কথাও। আর দিয়েছেন করোনা আক্রান্ত এই সময়ে তাঁর মতো ঘরবন্দী হয়ে পড়া ক্রিকেটারদের জন্য কিছু পরামর্শ।

সেটি বলতে গিয়ে এমন কোনো রকেটবিজ্ঞানের অধ্যায় অবশ্য খুলে দেননি সাকিব। ক্রিকেটাররা যেন ঘরে থেকেও সাধারণ শরীরচর্চার কাজগুলো করেন, এটিই তাঁর প্রথম পরামর্শ, ‘আমি নিশ্চিত, সবাই ঘরেই যার যার কাজটা করবে। ক্রিকেটাররা সবাই জানে এ রকম সময়ে তাদের কী করতে হবে। বিশেষ করে ফিটনেস ধরে রাখার কাজটা তো করতেই হবে। যদিও এই সময়ে সেদিকে মনোযোগ দেওয়াটাও কঠিন। তবে কিছু না কিছু সবারই করা উচিত।’

সেই ‘কিছু না কিছু’টা কী হতে পারে, সাকিব বলে দিয়েছেন সেটিও, ‘সাধারণ মানুষ ঘরে যে ধরনের ব্যায়াম করে, আমার মনে হয় ক্রিকেটারদের আপাতত আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা সময় ধরে ও রকম করলেই চলবে। এর বেশি কিছু করার তো সুযোগও নেই।’

মানুষ বিশ্রাম চায়, চায় ব্যস্ত জীবনে খানিক অবসর—তাই বলে এভাবে তো নয়! করোনা আক্রান্ত এমন গুমোট আতঙ্কের সময় কখনোই কারও কাম্য ছিল না। কিন্তু সেটি যখন এসেই পড়েছে, স্বাস্থ্যনিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অপ্রত্যাশিত এই অবসরে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, এই হলো সাকিবের ভাবনা। তাঁর কাছে সময়ের দাবিটাই আসল। করোনাভাইরাসের রূঢ় বাস্তবতা মেনে নিয়েও বললেন, ‘মাঝেমধ্যে তো আমরাও চেয়েছি খেলা থেকে লম্বা বিরতি পড়ুক। সবকিছু থেকে একটু বিশ্রাম নেব। পরিবারকে সময় দেব। সেটি এভাবে আসুক, তা কখনোই চাইনি। তারপরও এটাকে সে রকম একটা বিরতি ধরে নিলেই হয়। সব সময় খেলা নিয়ে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই সময় আমাদের কাছে যা চায়, আমাদের উচিত সেটাই করা। ইনশা আল্লাহ যখন পরিস্থিতি ঠিক হবে, তখন তো আবার সবাই খেলায়, অনুশীলনে ফিরবেই।’

এটাও ঠিক, বেশি দিন ঘরে বসে থাকতে কারোরই ভালো লাগে না। ক্রিকেটারদের তো আরও নয়। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রথম ১৪টি দিন সাকিব যেভাবে কাটিয়েছেন, সেটি জানলে নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন অন্য ক্রিকেটাররা। ঘরবন্দী জীবনে তাঁরা তো তবু পরিবারের সান্নিধ্য পাচ্ছেন, স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের ওই ১৪ দিন সাকিব নিজেকে দূরে রেখেছেন সবকিছু থেকেই।

ম্যাডিসন শহরের হোটেলে থেকেও সাকিব পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন শুধু ফোনে। দেখতে যাননি স্ত্রী-কন্যাকে। সাকিব বলছিলেন, ‘কঠিন সময় ছিল ওটা। স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। ভিন্ন একটা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনা করলে বলতে পারি, আমাদের যেমন খেলতে গিয়ে বিভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, এটাও ওই রকম ছিল। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটে এসেছি, আমি চাইনি আমার কারণে আমার পরিবার ঝুঁকিতে পড়ুক।’

কোয়ারেন্টিন শেষ হওয়ার পরও এই কয় দিনে সাকিব মাত্র একবারই ঘর থেকে বের হয়েছেন। মেনে চলছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ করোনা থেকে মুক্ত থাকার সব সতর্কতা, ‘কিছু কেনাকাটার দরকার ছিল বলে এক দিন মাত্র বের হয়েছি। তাও গ্লাভস-মাস্ক সব পরে। হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা—এসব তো সব সময়ই চলছে। বাইরে থেকে কেউ ঘরে এলে তার পোশাক আলাদা একটা জায়গায় রেখে দিচ্ছে বা ধুয়ে ফেলছে।’

করোনাযুদ্ধের মধ্যেই সাকিব-শিশির দম্পতি অপেক্ষায় নতুন অতিথির। আলাইনার ছোট বোনের পৃথিবীতে আসার কথা আগামী মাসে। সাকিবের আশা, করোনামুক্ত পৃথিবীতেই আসবে তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। সে জন্য দোয়াও চেয়েছেন সবার।