লড়াইয়ে নামছে ব্রাজিলের হৃদয় জেতা সেই সোনালি দল

১৯৮২ বিশ্বকাপ ব্রাজিল দল। ছবি: টুইটার
১৯৮২ বিশ্বকাপ ব্রাজিল দল। ছবি: টুইটার

বিশ্বকাপ না জেতা সেরা দল হিসেবে অনেকেই ১৯৮২ ব্রাজিলের কথা বলেন। তেলে সান্তানার গড়া সেই দল নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের আশা ছিল এন্তার। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে সক্রেটিস-জিকোদের কপালে জুটল ইতালির কাছে নাটকীয় হার। সেমিফাইনালে ওঠা আর হলো না।

তবু শুধু খেলার সৌন্দর্য দিয়েই মন জিতে নিয়েছিলেন ফ্যালকাও, সক্রেটিস, জিকো, এদের, জুনিনহোদের নিয়ে গড়া সোনালি ট্রফি না জেতা সেই ব্রাজিল দল। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে ১৯৮২ বিশ্বকাপের দলটা আরেকবার একত্রিত হলো। তবে এবার লড়াইটা মাঠে কোনো ফুটবল দলের সঙ্গে নয়, ফুটবলের সৌন্দর্যের বদলে এবার ব্রাজিলের সেই সোনালি দল গাইবে জীবনের গান, লড়বে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রাজিলের জনাকীর্ণ ফাভেলাগুলোয় (বস্তি) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দান করতে ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে দেশের মানুষকে ডাক দিয়েছে ’৮২-র ব্রাজিল দল।

সান্তানার সেই দলটির মিডফিল্ডার ও ব্রাজিল, ইন্টারন্যাসিওনাল আর রোমার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ফ্যালকাও এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে জিকো, জুনিয়র, লিয়ান্দ্রোসহ বিরাশির সেই দলের ১৯ জন খেলোয়াড় এক ভিডিওবার্তায় সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন।


ফ্যালকাও বলেছেন, ‘১৯৮২-র ব্রাজিল দল নাম কুড়িয়েছে এর সৃষ্টিশীলতা, ঐক্য আর একটা দল হয়ে কাজ করার বৈশিষ্ট্যের কারণে। এবার আমরা আবার ব্রাজিলের জন্য মাঠে নামব।‘ এক সপ্তাহেরও কম সময়ে এরই মধ্যে তহবিলে প্রায় ৫ লাখ ডলার জমা পড়েছে বলেও জানিয়েছে ফ্যালকাও। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি।

ব্রাজিলে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। চিকিৎসকদের শঙ্কা, দেশটির বস্তি অঞ্চলগুলোয় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে প্রাণহানি মারাত্মকভাবে বাড়বে। বস্তিগুলো এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ এবং তা ব্রাজিলের প্রায় সব অঞ্চলেই রয়েছে। দেশের এই দুর্দিনে ব্রাজিলের আরও কিছু ক্রীড়াবিদ আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।

১৯৮২ বিশ্বকাপের সংস্করণটা এখনকার বিশ্বকাপের মতো ছিল না। গ্রুপপর্বের পরই নকআউটের বদলে দুটি গ্রুপপর্ব ছিল তখন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, স্কটল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম গ্রুপপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় গ্রুপপর্বে ওঠে ব্রাজিল। সেখানে গ্রুপটা ভীষণ কঠিনই ছিল, দুই গ্রুপসঙ্গী ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা ও শেষ পর্যন্ত সেবারের বিশ্বকাপ জেতা ইতালি।

ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাড়ি পাঠায় ব্রাজিল, সে ম্যাচে মেজাজ হারিয়ে ব্রাজিলের জোয়াও বাতিস্তাকে লাথি মেরে লাল কার্ডও দেখেছিলেন ম্যারাডোনা। সেমিফাইনালে উঠতে পরের ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে ড্র করলেই চলত সান্তানার ব্রাজিলের। কিন্তু ব্রাজিলের আক্রমণ বনাম ইতালির রক্ষণ হয়ে ওঠা সেই ম্যাচে দুবার পিছিয়ে পড়েও ৬৮ মিনিটে ২-২ গোলে সমতা ফেরায় ব্রাজিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় গোলটি ব্রাজিল খেয়েছে রক্ষণের ভুল পাসে। ব্রাজিলের দুটি গোলই ছিল চোখধাঁধানো। প্রথমটি জিকোর দারুণ ঘূর্ণির পর বুদ্ধিদীপ্ত থ্রু ধরে সক্রেটিসের, দ্বিতীয়টি সেরেজো ডামি দৌড়ে তিন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ঘোল খাওয়ানোর পর ২০ গজ দূর থেকে ফ্যালকাওয়ের শটে।

কিন্তু এক পাওলো রসির কাছেই হার মানতে হলো সোনালি ব্রাজিলকে। যাঁকে দলে নেওয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল, বিশ্বকাপের আগে দুই বছর যিনি ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে দলের বাইরে ছিলেন, সেই রসি ওই ম্যাচেই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল পান। ম্যাচটা শেষ করেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোল নিয়ে। রসির হ্যাটট্রিক, ইতালির ৩-২ জয়, সক্রেটিসদের কেঁদে-কাঁদিয়ে বাড়ি ফেরা।

সোনালি ট্রফির স্বপ্নটা সেদিন জলাঞ্জলি গেলেও ইতিহাস আর ফুটবলপ্রেমী মন ব্রাজিলের সেই সোনালি দলকে আগলে রেখেছে আপন করে। এবার তাঁরা করোনার বিরুদ্ধে লড়তে এগিয়ে আসছেন ব্রাজিলিয়ানদের আপনজনের মতো।