করোনা নতুন করে ভাবাচ্ছে ডি ভিলিয়ার্সকে

শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, জাতীয় দলের জার্সিতেও কি দেখা যাবে এবিকে? ছবি: এবি ডি ভিলিয়ার্স টুইটার
শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, জাতীয় দলের জার্সিতেও কি দেখা যাবে এবিকে? ছবি: এবি ডি ভিলিয়ার্স টুইটার
>করোনাভাইরাস সবকিছুই থামিয়ে দিয়েছে। শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে ভবিষ্যত পরিকল্পনাও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসতে এখনো পাঁচ-ছয় মাস বাকি, কিন্তু সেটিও যদি পিছিয়ে যায়? সে ক্ষেত্রে নতুন হিসেব করতে হবে ডি ভিলিয়ার্সকে।

কী এক নাটকই না তাঁকে নিয়ে হলো গত বছর! ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগে অবসর ভেঙে ফিরে বিশ্বকাপে খেলতে চেয়েছিলেন বলে গুঞ্জন উঠল, তা নিয়ে কত আলোচনা-সমালোচনাও হলো। যদিও পরে এবি ডি ভিলিয়ার্স জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে ছড়ানো এসব গুঞ্জন ছিল মিথ্যা।

এক বিশ্বকাপ গেছে, একটু দূরে অপেক্ষায় আরেকটি বিশ্বকাপ। অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ার কথা ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আবার আলোচনায় ডি ভিলিয়ার্স। মার্ক বাউচার গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ হওয়ার পর থেকেই ভিলিয়ার্সের আবার দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ফিরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার গুঞ্জন চাউর হয়েছে। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স এবার সাবধানে এগোচ্ছেন। একে তো করোনাভাইরাস সব শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে কি না সময়মতো, তা-ই কেউ এখন নিশ্চিত নয়। তারওপর গত বছরের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে নতুন হিসেব কষছেন ডি ভিলিয়ার্স।

ডিসেম্বরে বাউচার দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হওয়ার পর দলের টি-টোয়েন্টি পরিকল্পনায় ডি ভিলিয়ার্সের থাকার কথা উঠেছে। ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে খেলার সময় নিজেই জানালেন, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আবার খেলতে পারলে তাঁর ভালো লাগবে। দ্রুতই আবার ফেরার সুযোগ পাওয়ার আশাও জানিয়েছিলেন। যদিও ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে তাঁকে রাখা হয়নি। তখন মনে করা হচ্ছিল, আইপিএলের পর ডি ভিলিয়ার্সকে দলে ফেরানোর চিন্তা করা হবে। জুনে শ্রীলঙ্কা আর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার।

কিন্তু এরপর তো করোনাভাইরাস এসে সব গুবলেট পাকিয়ে দিল। আইপিএল স্থগিত হয়ে গেছে। কবে হবে, আদৌ হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। বিশ্বকাপ এখনো পাঁচ-ছয় মাস দূরে ঠিকই, কিন্তু সেটির প্রস্তুতির ব্যাপার তো আছে। করোনা সেই প্রস্তুতি থামিয়ে দিয়েছে, বিশ্বকাপ পড়েছে সংশয়ে। এই অবস্থায় ‘এবি’র মাথায় চলছে অনেক সমীকরণ।

‘যদি টুর্নামেন্টটা (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) এক বছর পিছিয়ে যায়, অনেক কিছুই বদলে যাবে। এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আমি খেলার মতো অবস্থায় আছি, কিন্তু ওই সময় আমার শরীরের অবস্থা কী থাকবে, আমি ফিট থাকব কি না তা তো জানি না’—আফ্রিকান সাপ্তাহিক র‍্যাপোর্টে বলেছেন ডি ভিলিয়ার্স।

করোনার কারণে এখন ৩৫ দিনের লকডাউনে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সময়ে বাইরে গিয়ে ফিটনেস নিয়ে কাজ করা, দৌড়ানো, জিমে যাওয়া—এসবে নিষেধাজ্ঞা আছে। জানুয়ারির পর থেকে ক্রিকেটের বাইরে থাকা ডি ভিলিয়ার্সের ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা জাগারই কথা। পাশাপাশি নিজের একটা নীতিও জানিয়ে দিয়েছেন এবি, ‘আমি শারীরিকভাবে যে অবস্থায় থাকতে চাই, শতভাগ সেই অবস্থায় থাকলেই কেবল খেলার ইচ্ছা জানাব। তা না হলে আর খেলার আগ্রহের কথা জানাব না। কারণ আমি ৮০ ভাগ ফিটনেস নিয়েও খেলে যাওয়ার মানুষ নই।’

এখনও যে বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছার কথা, বা দলে ফেরার ইচ্ছের কথা পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না এবি, তার নেপথ্যে গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতাই কারণ। বিশ্বকাপের ঠিক আগে চাউর হয়, ডি ভিলিয়ার্স দলে ফিরতে চান, বিশ্বকাপে খেলতে চান। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে জানিয়ে তখনকার কোচ ওটিস গিবসন ও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি নাকি সে প্রস্তাবে রাজি হননি। ডি ভিলিয়ার্সেরও তখন সমালোচনা হয়েছিল অনেক এই কারণে যে, তিনি তো নিজের ইচ্ছামতো দলে ফেরার কথা বলতে পারেন না! একটা পদ্ধতি মেনে, নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেই দলে ফিরতে হবে।

ডি ভিলিয়ার্স তখন সেসব সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সমালোচনা শুনে, তাঁকে মানুষ ভুল বোঝায় যে কষ্টটা পেয়েছিলেন, তা এখনো যায়নি এবির, ‘(টি-টোয়েন্টির দলে ফিরতে চাই কি না, সেটি নিয়ে) আমি নির্দিষ্ট করে কিছু বলছি না, কারণ অতীতে আমি অনেক কষ্টে পুড়েছি।’

অথচ তখন শোনা গিয়েছিল, বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি ওয়ানডের মধ্যে বেছে বেছে মাত্র দুটিতে খেলতে রাজি ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। এভাবে বেছে বেছে খেলতে চাওয়ার অভিযোগ নিয়ে ডি ভিলিয়ার্সের কথা, ‘আমি কখনোই এভাবে ভাবি না যে আমি যা চাই, তা আমাকে দিতে হবে। ইচ্ছে করলেই দলে ঢুকে যেতে পারি না আমি। অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের মতো আমাকেও দলে জায়গা করে নিতে কষ্ট করতে হবে। জায়গা পাওয়ার মতো যোগ্য প্রমাণ করতে হবে। গত বছর মানুষ যখন ভাবছিল যে আমি ধরেই নিয়েছি আমি চাইলেই দলে ঢুকে যেতে পারি, সেটা অনেক কষ্ট দিয়েছে।’

ক্রিকেট ঠিকঠাক সময়ে ফিরলে, তাঁর ফিটনেস ঠিক আছে মনে হলে বাউচারের কাছে আগে নিজেকে প্রমাণ করতে চান ডি ভিলিয়ার্স। আর যদি বিশ্বকাপ পিছিয়ে যায়, তাঁর ফিটনেস না থাকে? সে ক্ষেত্রে অন্য ভূমিকায় দলের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা তাঁর, ‘আমি জানুয়ারিতে সর্বশেষ খেলেছি, আগামী তিন মাসও হয়তো আমার আর খেলা হবে না। আমার শারীরিক অবস্থা ততদিনে বদলে যেতে পারে। বাউচকে (বাউচার) তখন হয়তো আমার বলতে হতে পারে, আমার খেলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু এখন আর পারব না। অন্য কোনো ভূমিকায় থাকতে পারলে ভালো লাগবে।’