করোনার মাঝে তিন হাজার কোটির 'বাজার' করছেন সৌদি প্রিন্স

ইংল্যান্ডে বড় দাও মারতে চাইছেন প্রিন্স সালমান। ফাইল ছবি
ইংল্যান্ডে বড় দাও মারতে চাইছেন প্রিন্স সালমান। ফাইল ছবি

নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সমর্থকদের সবাই পারলে এখন সেই বিখ্যাত মিমটি নামিয়ে নিতে পারেন। ওই যে, ইংলিশ সুপারহিরো চলচ্চিত্র অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেইমে হক আইয়ের সেই উক্তি, ‘আমাকে আশা দেখিও না।’ আরও একবার নিউক্যাসলে নতুন মালিকানা দেখার সম্ভাবনা জাগতেই একটু সাবধানী সমর্থকেরা তাই আশায় বুক বাঁধার চেয়ে বেশি করে সাবধান হতে চাইছেন।

ইংলিশ ক্লাবটির সমর্থকদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন মাইক অ্যাশলি। গত ১৩ বছর ধরে এক সময়কার মহাপ্রতাপশালী ক্লাবের মালিকানা এই ব্যক্তির কাছে। তাঁর কিপটেমির কারণে বারবার হতাশ নিউক্যাসলের সমর্থকেরা নতুন মালিকের আশা করতেই পারেন। বিশেষ করে নতুন মালিক যদি হন সৌদি আরবের যুবরাজ!

গত মঙ্গলবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন অর্থায়নের জন্য বিখ্যাত অ্যামান্ডা স্ট্যাভলি। ম্যানচেস্টার সিটির বদলে যাওয়ার পেছনে আরব আমিরাতের নতুন মালিকদের অবদান অনস্বীকার্য। ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান মালিকদের ক্লাবের মালিকানা পেতে সহযোগিতা করেছিলেন এই স্ট্যাভলি। এই নারী এবার নিউক্যাসলকেও মধ্যপ্রাচ্যের অর্থায়নে শক্তিশালী করতে চাইছেন। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ৩০ কোটি পাউন্ড বা তিন হাজার ১৮২ কোটি টাকার এই চুক্তিতে ৮০ ভাগ অর্থ ঢালবে সৌদি আরবের নাগরিক অর্থায়ন তহবিল (পিআইএফ)। সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই তহবিলের প্রধান।

২০১৮ সালেও নিউক্যাসল কেনার একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন স্ট্যাভলি। কিন্তু নিউক্যাসলের মালিকের সঙ্গে সেবার বনিবনা হয়নি। জানুয়ারিতে আরও একবার দর-কষাকষি হয়েছিল। সেবার ৩৪ কোটি পাউন্ডের প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু করোনাভাইরাস ফুটবল বিশ্ব বদলে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। সময় থাকতে বিনিয়োগ গুছিয়ে নিতে চাইছেন অ্যাশলি। আর এ সুযোগেই ৩০ কোটি পাউন্ডেই দফারফা করে নেওয়ার নতুন প্রস্তাব।

প্রতিবেদনে জানা গেছে, এ চুক্তি হয়ে গেলে নিউক্যাসলের মালিকানার ১০ ভাগ থাকবে স্ট্যাভলির কাছে। ১০ ভাগ থাকবে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রুবেন ব্রাদার্সের কাছে। আর বাকি ৮০ ভাগের মালিকানা থাকবে সৌদি আরবের পিআইএফের হাতে। এবং ক্লাবের চেয়ারম্যানের দায়িত্বটা পাবেন পিআইএফের গভর্নর ইয়াসির-আল-রুমাইয়ান। ২৪ কোটি পাউন্ডের এত বড় বিনিয়োগ অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন একটি বিষয় হতে পারত। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সৌদি প্রিন্সের তত্ত্বাবধানে থাকা এই তহবিলের সম্পত্তির পরিমাণ ‘মাত্র’ ৩২ হাজার কোটি পাউন্ড।

সৌদি আরবের ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করার জন্য খেলাধুলাকেই অস্ত্র মেনেছেন প্রিন্স সালমান। আর এ কারণেই ক্রীড়া জগতের বিভিন্ন দিকে যোগ হওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদকে সৌদি আরবে নিয়ে এসে স্প্যানিশ সুপার কাপ আয়োজন করেছেন। ফুটবল ছাড়াও গলফ, রেসলিং, ফর্মুলা ওয়ান, বক্সিং—সব ধরনের বড় প্রতিযোগিতাই সৌদিতে আয়োজনের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের মালিকানা এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।

কাতার ও আরব আমিরাতের অর্থে বলীয়ান হয়ে পিএসজি ও ম্যানচেস্টার সিটি ছড়ি ঘোরাচ্ছে ঘরোয়া লিগে। দুই দলই বিশ্বের প্রভাবশালী ফুটবল দলগুলোর মধ্যে পড়ে এখন। সৌদি প্রিন্সের ছোঁয়ায় নিউক্যাসলও তেমন আকার নেবে, সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ‘ম্যাগপাই’ সমর্থকেরা।