করোনায় মন ভালো রাখার দাওয়াই নিন

প্যারিস হোক আর লন্ডন, ঢাকা হোক বা নিউইয়র্ক—সবই এখন লকডাউনে। ছবি: এএফপি
প্যারিস হোক আর লন্ডন, ঢাকা হোক বা নিউইয়র্ক—সবই এখন লকডাউনে। ছবি: এএফপি

হাইলাইটস: করোনাভাইরাসের আতঙ্ক তো আছেই, গৃহবন্দী থাকার দিনগুলোতে একঘেয়েমিও পেয়ে বসছে মানুষকে। পেয়ে বসছে বিষণ্ণতা। এ সময়ে কী করবেন, সে ব্যাপারে একটা পরামর্শ দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। 

সময় যেন কাটতে চায় না। একে তো বাইরে বের হলেই ঘাপটি মেরে বসে থাকা ভাইরাসের কবলে পড়ার আতঙ্ক, তারওপর ঘরে বন্দী থেকে থেকেও যেন হাঁপিয়ে উঠতে চায় মন। করোনাভাইরাসের দিনগুলোতে তাই শরীরের পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্যের দিকটিও খেয়াল রাখায় জোর দেওয়া জরুরি। আর এ ব্যাপারে একটা পরামর্শ দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। করোনার প্রতিষেধক তো কবে আসবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আপাতত করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকতে, মন ভালো রাখতে জীবনের কঠিন দিকগুলোতেও মজার উপকরণ খুঁজে নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন নিশাম।
২৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার নিজে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে টুইটারে নাম কুড়িয়েছেন ঠিক এমন কিছুর জন্যই। কঠিন পরিস্থিতিতেও হাসির উপকরণ খুঁজে নিতে জানেন নিশাম। তাঁর রসাত্মক টুইটগুলোও টুইটারে তাঁর অনুসারীদের বিনোদন জোগায়। তা করোনাভাইরাস তো বিশ্বজুড়ে প্রায় ২২ লাখ মানুষের শরীরে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষের। এমন কঠিন সময়ে হাস্যরস কতটা গুরুত্বপূর্ণ—'ইনসাইড দ্য বাবল' নামের এক পডকাস্টে (অনলাইন আলোচনা) প্রশ্নটা করা হয়েছিল নিশামকে। নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার উত্তরটা দিলেন তাঁর ক্যারিয়ারের সঙ্গে মিলিয়ে, 'আমার কাছে তো মনে হয় এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, আমরা যে খেলাটায় আছি, যে ক্যারিয়ার আমাদের, তাতে অনেকবারই হতাশ হতে হয়। এর মধ্যেই ভালো দিকটা, মজার দিকটা খুঁজে নিতে হবে। না হলে একটা অন্ধকার আবর্তে পড়ে যাবেন।'
ক্রিকেট ক্যারিয়ারে, জীবনে কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা থেকে আশার বাণীও ছড়ালেন নিশাম, 'কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচয় আমার ভালোই আছে, এটা (করোনাভাইরাস) তেমনই আরেকটা। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সবকিছুই একটা সময় শেষ হয়। সেটা মনে রেখেই আমাদের হাসি-আনন্দে থাকা উচিত। তাতে যখন এই বিপদ কেটে যাবে, আমরা তখন ফুরফুরে থাকব, আবার স্বাভাবিকভাবে সবকিছু শুরু করতে পারব।'
করোনাভাইরাসের কারণে গত মাসে অস্ট্রেলিয়ায় নিউজিল্যান্ডের যে ওয়ানডে সিরিজ হওয়ার কথা ছিল, এক ম্যাচ পরই সেটা বাতিল হয়ে গেছে। দেশে বিমানবন্দরসহ প্রায় সবকিছু লকডাউন ঘোষণার আগে তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরে এসেছে নিউজিল্যান্ড দল। সে সময়ে পরিস্থিতি হঠাৎ কত দ্রুত বদলে গেছে, তা মনে করে এখনো যেন বিস্মিত হয়ে যান নিশাম, 'ওয়ানডে সিরিজের জন্য আমরা তখন সিডনি পৌঁছালাম। বিমানবন্দরে যা হচ্ছিল তা নিয়ে নিজেরা বরং হাসাহাসি করছিলাম। কিন্তু ছয়-সাত দিনের মধ্যেই যেভাবে সবকিছু বদলে গেল, সেটা অবিশ্বাস্য ছিল।' কত দ্রুত করোনার কালো ছায়া এগিয়ে এসেছিল, নিশামের মুখেই শুনুন, 'শুক্রবার আমরা ম্যাচ খেললাম। শনিবারে দুইটা বাজে আমাদের মিটিং ডাকা হলো। তিনটায় আমরা (নিউজিল্যান্ডে ফেরার উদ্দেশ্যে) বিমানবন্দরের উদ্দেশে বাসে চড়ে বসলাম। সবকিছুই খুব দ্রুত ঘটেছে, তবু আমরা ভাগ্যবান যে ঠিকমতো ঘরে ফিরতে পেরেছি।'

জিমি নিশাম। ছবি: এএফপি
জিমি নিশাম। ছবি: এএফপি

দেশে ফেরার আগে যে একমাত্র ম্যাচটা খেলেছিলেন, সেটিও আবার হয়েছিল দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। কেমন ভূতুড়ে ছিল সে অভিজ্ঞতা, বললেন নিশাম, 'অদ্ভুত ছিল। অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। ম্যাচের একটা সময় আমি লং অনে ফিল্ডিং করছিলাম। সে সময় গ্যালারিতে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মী যে তাঁর ওয়াকিটকিতে কথা বলছেন, সেটা খুব পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিলাম আমি। আবার মাঠের অন্য পাশে থাকা মানুষের গলাও শুনতে পাচ্ছিলাম। খুবই অদ্ভুত ছিল সেটা।'
অদ্ভুত বিষণ্ণ এই সময়টা কেটে গিয়ে স্বাভাবিক আনন্দে আবার জেগে উঠবে পৃথিবী, সে স্বপ্ন সবাই-ই দেখেন। নিশামও। তবে পুরোপুরি ভিন্ন রকমের একটা অদ্ভুত ঘটনার কারণে তৈরি হতাশা এখনো কাটেনি নিশামের। ঘটনাটার নয় মাসেরও বেশি হয়ে গেলেও হয়তো নিউজিল্যান্ডের কারওই কাটেনি সে হতাশা। লর্ডসে গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের সে হতাশা। ৫০-৫০ মোট ১০০ ওভার শেষেও জয়ী-পরাজিত নির্ধারণ করতে না পারা ফাইনালে সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১৬ রান, নিউজিল্যান্ড করে ১৫। সুপার ওভারেও সমতা। শেষ পর্যন্ত কে কত বাউন্ডারি মেরেছে, সেটির হিসেবে বিশ্বকাপ যায় ইংল্যান্ডের ঘরে।
নিউজিল্যান্ডের ১৫ রানের মধ্যে নিশাম ১৩ রান নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ বলে অন্য প্রান্তে অসহায় হয়ে দেখলেন, জিততে ১ বলে প্রয়োজনীয় ২ রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে গেলেন মার্টিন গাপটিল! সেই স্মৃতি মনে করে নিশামের দীর্ঘশ্বাস, 'ভেবেছিলাম সময়ের সঙ্গে এই কষ্টটা কমে আসবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি। হয়তো আরও কয়েক বছর লাগবে।'