সালাহ-মানেদের জন্য আসছে স্বস্তির খবর

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে নিশ্চয় খুশি হবেন সালাহ–মানেরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে নিশ্চয় খুশি হবেন সালাহ–মানেরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
>ইংলিশ লিগ মৌসুম পুরোপুরি শেষ করার সিদ্ধান্ত। ইতালিয়ান লিগ ফিরতে পারে মে মাসে। একই সময়ে ফিরতে চাওয়া জার্মান লিগে সংশয় খেলোয়াড়দের টেস্ট করানো নিয়ে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিটা লিভারপুল–ভক্তদের কানে মধু ঢালবে নিশ্চিত। বিবৃতিটা এই—এই মৌসুম শেষ করতে চায় প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ।

মাঝেমধ্যে এক-দুটি ক্লাব থেকে মৌসুম বাতিল করে দেওয়ার দাবি আসে ঠিকই। তবে ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট হাম হোক বা ইতালির ব্রেসিয়া কিংবা ফ্রান্সের অলিম্পিক লিওঁ...এমন দাবি করা ক্লাবের সব কটিই এ মুহূর্তে লিগের পয়েন্ট তালিকায় এমন অবস্থানে আছে, যেটা তাদের পছন্দ নয়। লিগ মৌসুম বাতিল হোক, সেই দাবি শুধু তাদের মুখ থেকেই আসায় পয়েন্ট তালিকায় অবস্থানের একটা যোগসাজশ খুঁজে পাওয়া যায় বটে।

একেকবার এমন দাবি ওঠে, আর লিভারপুল–ভক্তদের কলজে যেন চলে আসে জিবের ডগায়। ৩০ বছরের লিগ শিরোপাখরা ঘোচানোর এত কাছে চলে এসেছিল এবার অলরেডরা, কিন্তু ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের প্রায় নিশ্চিত লিগ শিরোপাকে অনিশ্চয়তার চাদরে ঘিরে দিয়েছে করোনাভাইরাস। সেই মার্চ থেকে প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ। শুধু প্রিমিয়ার লিগ কেন, ইউরোপের সব লিগ, বিশ্বের প্রায় সব খেলাই তো বন্ধ করে রেখেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। সেটির বিরুদ্ধে জিতে আবার কবে ফুটবল ফিরবে মাঠে, সে প্রশ্ন প্রতিদিনই শোনা যায়।

উত্তরে এখনো নিশ্চিত কোনো ঘোষণা আসেনি। ইংল্যান্ড বা স্পেন, ইতালি কিংবা জার্মানি বা ফ্রান্স—বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতো ইউরোপের সেরা পাঁচ ফুটবল লিগ উপহার দেওয়া দেশেও মানুষ গৃহবন্দী। তবে ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে লিগ ফেরার গুঞ্জন। এর মধ্যে কাল ইংলিশ লিগ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল, লিগ যখনই ফিরুক, চলতি অর্থাৎ ২০১৯-২০ মৌসুম শেষ করার ব্যাপারে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তা হওয়ারই কথা। এমনিতেই করোনার কারণে কোটি কোটি ডলার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে বড় ক্লাবগুলোকে, ছোট ক্লাবগুলোতে ঘিরে ধরেছে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। এর মধ্যে লিগ শেষ না করলে যে সম্প্রচার স্বত্বের টাকাও পাবে না। যে অঙ্কটা অনেক ক্লাবের বেঁচে থাকা আর গুটিয়ে যাওয়ায় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। সেটি মাথায় রেখেই লিগের ২০ ক্লাবের প্রতিনিধি ও লিগ কর্তৃপক্ষের ভিডিও কনফারেন্সের পর আজ প্রিমিয়ার লিগের মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্যটা এখনো একই আছে। সেটি হলো ২০১৯–২০ মৌসুম পুরোপুরি শেষ করা।’

গত কিছুদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন ছড়ায়, ২০২১ সালের জুনে যেহেতু ইউরো ও কোপা আমেরিকা আছে (এই বছর হওয়ার কথা থাকলেও দুটি টুর্নামেন্টই এক বছর পিছিয়ে ২০২১ সালে নেওয়া হয়েছে), তাই এই মৌসুমের খেলা জুন-জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আগামী মৌসুম শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইউরোপের লিগগুলো। সে কারণেই চলতি মৌসুমের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে ইংলিশ লিগের মুখপাত্র বলছেন, ‘এ মুহূর্তে কোভিড-১৯-এর প্রভাব যে রকম, তাতে (মাঠে ফেরার বা লিগ শেষ করার) যে তারিখই শোনা যাক না কেন, সেটি কল্পনাপ্রসূত।’

যত দ্রুত সম্ভব লিগ মাঠে ফেরাতে চায় ইতালি-জার্মানিও। স্পেন-ফ্রান্স থেকে গত কিছুদিনে নতুন ঘোষণা আসেনি। তবে ইতালি ধাপে ধাপে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার যে পরিকল্পনা করছে, সেটি অনুযায়ী মে মাসের শেষ দিকে মাঠে ফেরার কথা রোনালদো-দিবালাদের। পরশু ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি গাব্রিয়েলে গ্রাভিনাও বলেছেন, ‘মে মাসের শেষ বা জুনের শুরুতে আমরা ফিরতে পারি।’ এর আগে কয়েকটি ক্লাবের পক্ষ থেকে মৌসুম বাতিলের দাবি এলেও তাদের ধুয়ে দিয়েছেন গ্রাভিনা, ‘যাঁরা মৌসুম বাতিলের দাবি করছেন, তাঁরা হয় ফুটবল পছন্দ করেন না, নতুবা ইতালিয়ানদের।’

জার্মান লিগও মে মাসেই ফিরতে চায়। এরই মধ্যে তো বায়ার্ন মিউনিখসহ বেশ কয়েকটি ক্লাব স্বল্প পরিসরে অনুশীলনেও নেমে গেছে। তবে সেখানে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে খেলোয়াড়দের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে। লিগগুলো হয়তো দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই ফিরবে, তবে লিগ ফেরানোর আগে লিগের প্রত্যেক খেলোয়াড় আর ম্যাচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার করোনা পরীক্ষা করা হবে, সেটা অলিখিত নিয়মই। কিন্তু সেটি করতে গেলে জার্মান ফুটবলের শীর্ষ দুই স্তরে ৩৬টি দলের সংশ্লিষ্ট সবার পরীক্ষার জন্য প্রায় ২০ হাজার কিট লাগবে, যা এমন সংকটের মুহূর্তে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাড়তি চাপ হয়েই দাঁড়াবে।

জার্মান পত্রিকা রুহর নাখরিখটেনে ভাইরোলজিস্ট উলফ ডিটমার বলেছেন, ‘যাঁরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপে নেই, যাঁদের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ নেই, এমন ২০ হাজার টেস্ট করানো নৈতিকভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, সেটা জানি না।’ যদিও বার্লিনভিত্তিক ল্যাবরেটরির জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ইভানজেলোস কতসোপুলোস জার্মান দৈনিক বিল্ডে বলেছেন, ‘যদি ৩৬টি ক্লাব দুই দিন পরপরই ৪০-৫০ জন লোকের টেস্ট করাতেও চায়, তারপরও আমাদের টেস্ট করার সামর্থ্যের অর্ধেকের কম ব্যবহৃত হবে।’

তবে সে সংশয় একপাশে রেখেই লিগ শুরু করতে চায় জার্মানি, ৩০ জুনের মধ্যে শেষও করতে চায়। কেন? ওই সময়ে শেষ করতে পারলে লিগের দলগুলো টিভি স্বত্ব থেকে প্রায় ৩০ কোটি ইউরো পাবে!