এ যেন টেস্ট ক্রিকেট!

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।
স্ত্রী প্রিয়ন্তি দেবনাথের সঙ্গে সৌম্য সরকার। ছবি : সৌম্য সরকারের ফেসবুক পেইজ
স্ত্রী প্রিয়ন্তি দেবনাথের সঙ্গে সৌম্য সরকার। ছবি : সৌম্য সরকারের ফেসবুক পেইজ

প্রতিটি দিন যেন একই ছকে এগোচ্ছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু ফিটনেস নিয়ে কাজ। ঘরেই রানিং। ঘুমাই, সিনেমা দেখি, এই তো!

বিয়ে করার কদিন পরই শুরু হলো এই করোনাভাইরাসের প্রকোপ। সারাক্ষণ ঘরে থাকলেও স্ত্রীকে সাধারণত রান্নাবান্নায় খুব বেশি সহায়তা করা হয় না। রান্না খুব একটা পারিও না। সে একাই করে। যখন যেটা প্রয়োজন হয়, একটু এগিয়ে দিই।
মজার ব্যাপার হলো, সেও আমার সংসারে আসার পরই প্রথম রান্না ঘরে গেছে। তবে রান্নার হাত চমৎকার। যে যে পদের খাবার রান্না করে খাওয়াচ্ছে, সবই মজা লেগেছে। বাড়ির সবার প্রশংসা পাচ্ছে নতুন বৌ। প্রথম প্রথম রান্না করলে অনেক সময় রান্না ভালো হয় না। আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।
অনেকে জানতে চায়, বিয়ের আগের জীবন আর বিয়ের পরের জীবনের পার্থক্য কোথায়? আমি বলি, বিয়ের আগে আমার সবকিছু দেখাশোনা করত মা কিংবা বউদিরা। এখন সেটা করে নতুন একজন। নিজে একটা সংসার শুরু করেছি। বাজার শেষ হলে বউ বলে, যাও বাজার এনে দাও। এ অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। নতুন নতুন সবইউপভোগ করছি। পরে কী হবে জানি না।

সারাক্ষণ ঘরে থাকতে হচ্ছে বলে কখনো কখনো একঘেঁয়ে লাগে। একঘেঁয়েমি কাটাতে স্ত্রীর সঙ্গে লুডু খেলি, সিনেমা দেখি। কখনো ফাঁকা ছাদে দুজনে ঘুড়ি ওড়াই। আর ইউটিউবে পুরোনো খেলা দেখি। বিশেষ করে কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের খেলা। নিজের ব্যাটিংও দেখি। আমার আগের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে এখনকার ব্যাটিংয়ে কোথায় পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখি।
২০১৫ সালের জুনে মিরপুরে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৫৪ রান করে রানআউট হয়ে গিয়েছিলাম। খুব ভালো খেলছিলাম সেদিন। মনে হচ্ছিল ভালো কিছু হবে। কাল হঠাৎ আফসোস হচ্ছিল, ম্যাচটা যদি আরেকবার খেলতে পারতাম। আরেকটা ম্যাচ ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে বিপক্ষে, ৪০ করে আউট হয়ে গেলাম। যে ম্যাচগুলো ৩০-৪০ রান করে আউট হয়ে গেছি, সেগুলো দেখে মনে হয়- ইস্, যদি ইনিংসগুলো আরও বড় করতে পারতাম!

ক্রিকেট খেলা আমার পেশা, এটা মাথায় থাকবেই। তবে ঘুরেফিরে সেই করোনার খবরেই চোখ আটকে যায়। প্রতিদিন কত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলো, কতজন মারা গেল। এই কঠিন সময়ে পুলিশ-চিকিৎসকেরা কীভাবে কাজ করছেন, এগুলো দেখি। ওনারা খুব ভালো কাজ করছেন। আমারও ইচ্ছে আছে সাহায্যের হাত বাড়ানোর। কিন্তু একা এটা করা কঠিন।
কবে শেষ হবে এই পরিস্থিতি, এই প্রশ্নটাই বারবার মনে আসে। বাসায় থেকে কে কত ধৈর্য দেখাতে পারে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যত বেশি ধৈর্য দেখাব তত দ্রæত এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব। আর যত ধৈর্য হারাবো, তত বেশি সময় লাগবে। ক্রিকেটের ভাষায় যদি বলতে হয়, উইকেট খারাপ আছে, একটু সময় নিয়ে খেলতে হবে। কিংবা বলতে পারেন, এ যেন টেস্ট ক্রিকেট! যতক্ষন পার উইকেটে পড়ে থাক। আমাদেরও এখন শুধু ঘরেই থাকতে হবে।
বিষয়টা এমন, আমার হলে আমার স্ত্রীরও হবে। আমরা দুইজন একটা বাসায় আটকে আছি। কারও তিন, চার, পাঁচ কিংবা আরও বেশি সদস্যের পরিবার আছে। একজনের হলে বাকি সবার হবে। একজন বাইরে যাওয়া মানে পরিবারের সবারই বাইরে যাওয়া। অর্থাৎ একজন বাইরে যাওয়া মানে সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলা। ধৈর্য ধরেই আমাদের এই সময়টা পার করে দিতে হবে।