ভারতকে হারানোর স্মৃতি ভুলতে পারেন না কামাল

জাতীয় হকি দলের সাবেক তারকা রফিকুল ইসলাম কামাল। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় হকি দলের সাবেক তারকা রফিকুল ইসলাম কামাল। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম খেলেন ১৯৯৩ সালে। হিরোশিমায় এশিয়া কাপ হকিতে জাপানের বিপক্ষে। সর্বশেষ ম্যাচটি ঢাকায়, ২০০১ সালে প্রাইম মিনিস্টার গোল্ডকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। জাতীয় হকি দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল এখনও পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পান ক্যারিয়ারের সোনালি মুহূর্তগুলো। করোনার এই সময় দেশের হকি ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়ের মুখেই শোনা যাক তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা তিন ম্যাচের গল্প

ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতি
ক্রিকেট, ফুটবল বা হকি যে কোনো খেলাতেই ভারতকে হারানো বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ কিছু। আর ভারতকে হারানোর ম্যাচে জয়ের নায়ক যে খেলোয়াড়, তার জন্য তো সেই কীর্তিটা আরও বেশি গর্বের। আরও রোমাঞ্চের। তাইতো দুই যুগ আগে অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়া কাপে ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতি এখনও হৃদয়ের জানালায় টোকা দিয়ে যায় কামালের। ওই ম্যাচে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দুটি গোলই করেন কামাল। এতদিন পর সেই স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন, 'সিঙ্গাপুরে গিয়ে আমরা হোটেল উঠলাম। পরদিন ম্যাচ। সন্ধ্যায় দাদা (ওই সময়ে দলের কোচ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা) আমাকে তাঁর কক্ষে ডাকলেন। গিয়ে দেখি আলমগীর আলম দাঁড়িয়ে। দাদা বললেন, তোরা দুজন যদি কাল ভালো খেলিস, তাহলেই বাংলাদেশ জিতবে। ওই একটা কথা আমাদের বদলে দিয়েছিল।'

প্রথমার্ধেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে ভারত গোল শোধ করে। কিন্তু এহতেশামের পাস থেকে ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে জয়সূচক গোলটি করেন কামাল। ওই ম্যাচের পর দেশে ফিরেও অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন,' ঢাকার পত্রিকাগুলোতে লিখেছিল, “কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই।” ওই ম্যাচটা আমার জীবনের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিয়েছিল।'

হংকংয়ের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়
১৯৯৯ সাল। কুয়ালালামপুরে এশিয়া কাপের ম্যাচ। হংকংয়ের বিপক্ষে নেমেই ১০ মিনিটে দুই গোল হজম করে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় যখন ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে উঠছিল, তখনই যেন জ্বলে উঠলেন কামাল। সেই ম্যাচেও দুটি গোল করেন এই হকি তারকা। এতদিন পরও ওই ম্যাচের কথা বলতেই মুঠোফোনের অন্য প্রান্তে শোনা গেল কামালের রোমাঞ্চিত কন্ঠস্বর, ' আমরা দুই গোলে পিছিয়ে। বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে কী হয়ে গেল। তৃতীয় গোলটাও হতে হতে রক্ষা। অবিশ্বাস্যভাবে গোললাইন সেভ করেন টিপু। আমরা কোনোভাবেই ম্যাচটি হারতে চাইনি। শেষ পর্যন্ত ৫-২ গোলে জিতেছিলাম।' জয়ের ওই ম্যাচে মুসা মিয়া, আলমগীর ও রমিজ করেছিলেন বাকি তিন গোল।

১৯৯৬ সালে ইতালির ক্যালিয়ারিতে ইতালিকে হারিয়েছিল বাংলাদেশের এই জাতীয় হকি দল। ছবি: সংগৃহীত
১৯৯৬ সালে ইতালির ক্যালিয়ারিতে ইতালিকে হারিয়েছিল বাংলাদেশের এই জাতীয় হকি দল। ছবি: সংগৃহীত

ইতালির বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গের কারণ বাংলাদেশ
ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে তখনও মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে বাংলাদেশ দল গিয়েছিল ইতালিতে। ক্যালিয়ারিতে প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি স্বাগতিক ইতালি। আর প্রথম ম্যাচেই ইতালিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও জোড়া গোল করেন কামাল। বাংলাদেশের কাছে হেরে শেষ পর্যন্ত ওই বছর ইতালির বিশ্বকাপই খেলা হয়নি। এই ম্যাচের কথা মনে হলে এখনও আনন্দে ভরে ওঠে কামালের মন, 'ওই বছর আমাদের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো একটা কারণে পাকিস্তানে যেতে পারলাম না। তবে আমরা ছয় মাসের দীর্ঘ ক্যাম্প করেছিলাম বিকেএসপিতে। প্রথম ম্যাচেই ইতালিকে হারানোর পর সবাই আমাদের সমীহ করতে শুরু করে। আসলে আমাদের ওই দলটা টেকনিক্যালি ও ফিজিক্যালি অনেক ভালো ছিল।'