জিম্বাবুয়ের সর্বনাশের শুরুটা এই দিনে

জিম্বাবুয়েকে দুবার লজ্জা উপহার দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ছবি: এএফপি ফাইল ছবি
জিম্বাবুয়েকে দুবার লজ্জা উপহার দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

শ্রীলঙ্কার সামনে নতজানু হওয়া নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নয় জিম্বাবুয়ের জন্য। ২০০১ সালে বিশ্ব ক্রিকেটকে স্তব্ধ করে দেওয়া এক স্পেল দেখিয়েছিলেন চামিন্দা ভাস। ওয়ানডেতে ৮ উইকেট নেওয়ার অবিশ্বাস্য এক কীর্তি গড়ার রেকর্ড সেদিনই প্রথম দেখেছিল ক্রিকেট। ভাসের এই তাণ্ডবের পর মাত্র ৩৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। পূর্ণশক্তির জিম্বাবুয়ে, হিথ স্ট্রিক,অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের জিম্বাবুয়ে।

সে তুলনায় ২০০৪ সালের এই দিনে দুর্বল এক দল নিয়ে নেমেছিল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার পরই বিদ্রোহ করে বসেন জিম্বাবুয়ের মূল খেলোয়াড়েরা। ২০০৩ বিশ্বকাপে স্বৈরাচার সরকারপ্রধানের বিপক্ষে কথা বলে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গা যে সলতেতে আগুন ধরিয়েছিলেন, সেটাই যেন বারুদের স্পর্শ পেয়েছিল ২০০৪ সালে। ফলে হঠাৎ করেই প্রায় জিম্বাবুয়ে 'বি' দলকে সামনে পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

দলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় তখন ডগলাস হোন্ডো। ২৪ বছর বয়সী পেসার সেদিন একটি উইকেটও পেয়েছিলেন। তাঁর কাছাকাছি বয়সের ছিলেন ডিওন ইব্রাহিম ও এমলুলেকি এনকালা। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের লজ্জার স্বাদ হিসেব করলে এ দুজনই অভিজ্ঞতায় এগিয়ে ছিলেন। ২০০১ সালে ৩৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার ম্যাচেও যে ছিলেন এঁরা। আড়াই বছর আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি এ ম্যাচেও ফিরে এসেছিল আরও একজনের কাছে। ২০০১-এ কলম্বোতে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পাওয়ায় ডিওন ইব্রাহিমের সঙ্গী টাটেন্ডা টাইবু।

২০০১ সালের কিশোর টাইবু এদিন নেমেছিলেন অধিনায়ক্ত্বের গুরুদায়িত্ব নিয়ে। তাতে অবশ্য ভাগ্যে কোন হেরফের হয়নি। এবারও প্রথম বলেই ফিরেছেন শূন্য হাতে। ইব্রাহিম অবশ্য দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। সমস্যাটা হলো, দলের সর্বোচ্চ রান ছিল ৭। আরও ৭ রান এসেছিল অতিরিক্ত থেকে। দলীয় ৫ রানে অযথা রান আউট হয়ে মাতসেকিনেয়েরির ফেরার পর ব্রেন্ডন টেলরের সঙ্গে ১১ রানের জুটি গড়েছিলেন ইব্রাহিম। ১ উইকেটে ১৮ রানকে তখন খুব একটা খারাপ দেখাচ্ছিল না। কিন্তু দিলহারা ফার্নান্দোর বলে উইকেটের পেছনে ইব্রাহিম ক্যাচ দেওয়ার পরই আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। পরের বলেই গেলেন টাইবু।

ফার্নান্দর সঙ্গে ভাস ও অভিষিক্ত ফারভিজ মাহারুফও যোগ দিলেন উইকেট উৎসবে। কী হচ্ছে বুঝে ওঠার আগেই স্কোরবোর্ড ১ উইকেটে ১৮ থেকে ৮ উইকেটে ২৮ হয়ে গেল! এরপরই 'বয়স্ক' দুই যোদ্ধা এনকালা ও হোন্ডো লড়াই চালালেন। যোগ করলেন আরও ৭টি রান । ক্ষণিকের জন্য মনে হয়েছিল এ যাত্রায় হয়তো সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড আর ফিরে পেতে হবে না তাদের। ২০০৩ বিশ্বকাপেই যে শ্রীলঙ্কা কানাডাকে ৩৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে কিছুদিনের জন্য ভারমুক্ত করেছিল জিম্বাবুইয়ানদের।

মাহারুফ সেটা হতে দিলেন না। তিন বলের মধ্যে শেষ দুজনকে তুলে নিলেন। আড়াই বছরের মধ্যে ওয়ানডেতে দুবার সর্বনিম্ন রানের অলআউট হওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়ল জিম্বাবুয়ে। ১৮ ওভারের ইনিংসে ওভার প্রতি ২ রানও নিতে পারেনি তারা। ১৬ বছর পর আজও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট তার হারানো গৌরব ফিরে পায়নি। ক্রিকেটের নতুন পরাশক্তি হওয়ার বদলে উল্টো হারিয়ে যেতে বসেছিল তারা। যার প্রতীকী রূপ সর্বনিম্ন রানের সে রেকর্ড।
সে রেকর্ড এতদিন একাই বহণ করছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু 'এড়াতে পারলেই বাঁচি'-এমন এক রেকর্ডে তাদের নতুন সঙ্গী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে গত ফেব্রুয়ারিতে নেপালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম পর্বের পঞ্চম রাউন্ড সম্পন্ন হয়েছে। সেখানেই টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে ১২ তারিখ মুখোমুখি হয়েছিল নেপাল ও যুক্তরাষ্ট্র।

ঘরের মাঠে ওমানের কাছে শিরোপা হারানোর দুঃখেই কি না তেড়েফুড়ে উঠেছিলেন নেপালের ক্রিকেটাররা। সন্দীপ লামিচানের লেগ স্পিন (৬/১৬) আর সুশান ভারির (৪/৫) বাঁহাতি স্পিনে মুখ থুবড়ে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। জিম্বাবুয়ের চেয়ে ৬ ওভার কম খেলেও ঠিক ৩৫ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। তাদের ধসটা ছিল আরও ভয়ংকর। জ্যাভিয়ার মার্শাল (১৬) ফেরার আগে স্কোরবোর্ডে লেখা ছিল ১ উইকেটে ২৩ রান। সেটা ৩০ বলের মধ্যেই ৮ উইকেটে ৩১-এ রূপ নেয়। এবারও নবম উইকেট জুটি দলকে ৩৫ পর্যন্ত টেনে নেওয়ার পর জোড়া আঘাতে শেষ হয়ে রেকর্ড গড়া ইনিংস।