খুব ভোরে সিঁড়িতে দৌড়াই

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো
জাহারা আলম। ফাইল ছবি
জাহারা আলম। ফাইল ছবি

আজকাল খুব আগের কথা মনে পড়ে। অনেক দিন আগের কথা, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সময়ের ঠিক আগের কথাগুলোও। সকাল সকাল উঠেই রানিং, জিম করে বাসায় ফিরে নাস্তা। দুপুরে একটু বিশ্রাম, রাতে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়া। এখন সব কেমন যেন বাধাহীন। কোনো নিয়ম নেই। সব এলোমেলো। যখন যা ইচ্ছে করছি। কোনো কিছুরই রুটিন নেই আসলে। এরকম সময় আগে কখনো কাটেনি।

আগের মতো এখন আর রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া হয় না। রাত করে ঘুমোতে যাচ্ছি। এরপর ঘুমও আসে আরও দেরীতে। কারণ শরীরে কোনো ক্লান্তি থাকে না। পরদিন ঘুম থেকে উঠিও বেশ দেরি করে। একটু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করতে ইচ্ছে হয়। আবার কখনো মনে হয়, 'নাহ, এখন না, সন্ধায় করি।' হয়তো একটা কিছু রান্না করব ভেবেছিলাম। সেখানেও আলসেমি। কোনো কিছুতেই মনস্থির হচ্ছে না।

দুটি জিনিস অবশ্য নিয়ম করে করতে পারছি। এবার আগে থেকেই কিছু রোজা রেখেছি। গত বছর প্রিমিয়ার লিগ হয়েছিল রোজার সময়। তখন কিছু রোজা বাদ গেছে। সেগুলো রাখলাম এই ফাঁকে। এটা ঠিক মতো হচ্ছে। একদিন করে বিরতি দিয়ে সিঁড়িতে দৌড়াই। সিঁড়িতে তো যে কোনো সময় দৌড়ানো যায় না। বিল্ডিংয়ে আরও পরিবার থাকে। খুব ভোরে যখন সবাই ঘুমিয়ে, তখন সিঁড়িতে রানিং সেরে নেই।

আমি ঢাকায় একাই আছি। বিশ্বকাপ শেষে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পরই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু। এরপর আর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

ঢাকায় থাকলে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করি। এছাড়া ইউটিউব দেখে টুকটাক রান্না তো করাই হয়। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে সুস্থ সবল থাকতে হবে। আবার খেলায় ফিরতে হবে। তবে রান্নার সময় অভুক্ত মানুষের কথাও মাথায় আসে। অনেকেই না খেয়ে আছেন। তাদের জন্য খারাপ লাগে।

টেলিভিশনে খবর কম দেখি। বিসিবি থেকে নির্দেশনা আছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইন্টারনেটের সংস্পর্শ একটু কম করতে। এসব অনেক সময় হতাশা সৃষ্টি করে। আমি এখন পর্যন্ত মানসিকভাবে শক্ত আছি। ভবিষ্যতেও থাকার চেষ্টা করব। এই সময় মানসিকভাবে শক্ত না থাকলে আপনি ভেঙ্গে পড়বেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে যত বেশি চিন্তা করবেন, ততই হতাশা গ্রাস করবে। আমি যেমন কাল কী হবে, দুই মাস পর কী হবে, খেলার কী হবে-এগুলো নিয়ে একটুও ভাবছি না। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলেই মনে হয় উল্টো বুঝি পিছিয়ে যাচ্ছি। মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।

আমি এতো কিছু চিন্তা করতে চাই না। সবার জন্যই আমার কথা, এত কিছু চিন্তা করা যাবে না। আপনি নিজে সুস্থ থাকুন, পরিবারকে সুস্থ রাখুন। এই সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে যা যা করনীয় করে যান। এটাই আসলে সময়ের দাবী।

আমরা সাধারণত খুব বেশি নিয়ম মেনে চলতে অভ্যস্ত নই। এই সময়টা আমাদের আবার নিয়ম-শৃঙ্খলার গুরুত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে। যেমন সরকার নিয়ম করে দিল বাড়ির বাইরে না যেতে। এটা মেনে চলাটা আমাদের কর্তব্য। আবার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এগুলো কিন্তু খুবই মৌলিক বিষয়। করোনা থাকুক আর না থাকুক, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কিন্তু সবসময়ই থাকা উচিত। সবচেয়ে বড় হলো ধৈর্য। করোনার এই সময়টা আমাদের মধ্যে এই মৌলিক বিষয়গুলোর চর্চা ফিরিয়ে আনছে, এটা একটা ইতিবাচক দিক। একদিন করোনাভাইরাস থাকবে না। কিন্তু কঠিন এই সময় আমাদের যা শেখাচ্ছে, আমরা যেন তা ভুলে না যাই।