এই চ্যালেঞ্জে আমরাই জিতব

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
সাবিনা সমাপ্তি চান এই অনিশ্চয়তায় ভরা জীবনের। ছবি: প্রথম আলো
সাবিনা সমাপ্তি চান এই অনিশ্চয়তায় ভরা জীবনের। ছবি: প্রথম আলো

দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ পড়লে মনটা বিষাদে ভরে ওঠে। কবে শেষ হবে এই অনিশ্চয়তায় ভরা জীবন? কবে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারবো খোলা হাওয়ায়? কবে ফিরে যাবো ফুটবল মাঠে? এভাবে যে জীবনটা হঠাৎ থমকে যাবে ভাবিনি।

আমার দিনের শুরু ফজরের নামাজ পড়ে। এরপর আরেকটু ঘুমিয়ে উঠে নাস্তা সেরে বাসার টুকটাক কাজ করি। বিকেলে ৪৫ মিনিটের মতো অনুশীলন। কখনো বল নিয়ে, কখনো বল ছাড়া। আমাদের বাড়ির সামনে খোলা জায়গা থাকায় সারাক্ষণ প্রচুর বাতাস থাকে। বিষন্নতায় ভরা দিনগুলোতে আমাকে একটু স্বস্তি দেয় বিকেলের আড্ডা। বাসার সামনে চেয়ার পেতে বোনদের সঙ্গে গল্প করি। কখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরের গাছের ডালে বসা পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। থমকে যাওয়া শহরে ওদের কিচির মিচিরে প্রাণ পায় এলাকাটা।

অনেক দিন পর মেয়েদের ফুটবল লিগ মাঠে গড়িয়েছিল। করোনাভাইরাসের কারণে সেটি আপাতত স্থগিত। আদৌ এ বছর খেলা হবে কিনা জানিনা। তবে এসব নিয়ে ভাবছি না। এখন নিজেদের নিরাপত্তা সবার আগে। নিজের স্বাস্থ্য যদি ঠিক না থাকে, জীবন যদি না বাঁচে তাহলে খেলাধুলা দিয়ে কি হবে!

যেহেতু খেলা নেই, অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। সিনেমা দেখার নেশা আছে আমার। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সব সিনেমাই দেখি। যে সিনেমাটা দেখব বলে ঠিক করে নিই, সেটা সম্পর্কে নেট ঘেটে আগে একটা ধারণা নিই। ভালো লাগলে তবেই দেখি।

সাতক্ষীরায় থাকলেও ঢাকায় কোচদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গেও কথাবার্তা হয়। আমাকে অনেকে ফোন করেছেন। বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে বখাটেদের হামলা হওয়ার পর প্রচুর ফোন পেয়েছি। আমার বোনের আঘাতের খোঁজখবর নেয় সবাই।

সময় পেলে সাতক্ষীরার যে কোচ আমাকে ফুটবলে এনেছিলেন, সেই আকবর আলী স্যারের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। মালদ্বীপে আমার কয়েকজন বন্ধু আছে, মালদ্বীপ লিগে খেলার সময় ওদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। হাতে যেহেতু অখন্ড অবসর, চেষ্টা করি ওদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে।

আমি টেলিভিশন খুব একটা দেখি না। তবে ইউটিউবে নিজের গোলগুলো দেখতে ভালো লাগে। ক্লাবের হয়ে দেওয়া গোল, জাতীয় দলের জার্সিতে দেওয়া গোল- খুঁজে খুঁজে সেগুলো বের করি। সেদিন ২০১৬ সালের সাফে শিলিগুড়িতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুর্দান্ত সেই ম্যাচটি দেখলাম। আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে আমারই ছিল ৫ গোল। সে গোলগুলোই বারবার দেখছিলাম। চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম। ইচ্ছে হয় আবারও মাঠে নেমে গোলের উদযাপন করি।

গত তিন-চার বছরে কখনো এত লম্বা সময় বাড়িতে থাকিনি। বড় জোর চৌদ্দ-পনের দিন থেকেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। অনেকে হয়তো বুঝতে পারছে না কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও যদি মানুষকে ঘরে থাকার জন্য জোর করতে হয় সেটা দুঃখজনক। সবাই জানে এই সময়ে কি করা উচিত। কিন্তু জেনেও মানছে কয়জন!

আমরা মাঠের মানুষ। ঘরে বসে থাকা আমাদের জন্যও খুব কষ্টের ব্যাপার। কিন্তু এখন পরিস্থিতির দাবিই হলো ঘওে থাকা। সেটাই আছি। মাঠের লড়াইয়ের মতো না হলেও এটাও এক রকমের লড়াই। ঘরে থেকে নিজে সুরক্ষিত থাকব। অন্যকে সুরক্ষিত রাখবো। এটাই এখন আমাদেও সবার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইনশাল্লাহ, এই চ্যালেঞ্জে আমরাই জিতব।