শুরুতে কিছু বিধিনিষেধ থাকা উচিত

>অন্ধকারের শেষেই থাকে আলো। কালরাত্রি পার করে আসা ভোরেও হাসে নতুন সূর্য। করোনায় আক্রান্ত দুঃসময়ও একদিন কেটে যাবে। মানুষ ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে, মাঠে গড়াবে খেলা। কেমন হবে করোনাকালের পরের সেই সময়ের ক্রিকেট? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তিন সংস্করণের তিন অধিনায়কের কাছ থেকে সেটাই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। আজ পড়ুন এ নিয়ে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সাক্ষাৎকার
পরিবারের সঙ্গে সময়টা ভালোই কাটছে মাহমুদউল্লাহর। ছেলের সঙ্গে বানিয়েছেন পিৎজা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
পরিবারের সঙ্গে সময়টা ভালোই কাটছে মাহমুদউল্লাহর। ছেলের সঙ্গে বানিয়েছেন পিৎজা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন: অপ্রত্যাশিত এক ছুটিতে সবাই। কতটা কঠিন বা সহজ এমন অবসর কাটানো?

মাহমুদউল্লাহ
: সহজ তো অবশ্যই নয়। পারিপার্শ্বিক দিক যদি বিবেচনা করি, খুব কঠিন সময় এটা। মানুষ এখন বিপদে। ঘর থেকে বের হওয়াই মুশকিল। এক মাসের ওপরে বাসায় বন্দী। মাঝখানে যখন বাচ্চা হলো, তখন হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এখন চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব পারিবারিকভাবে সময়টা উপভোগ করতে।

প্রশ্ন: আপনার জন্য খুব ব্যস্ত একটা বছর হতে পারত ২০২০ সাল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর যেহেতু, সেটিকে কেন্দ্র করে অনেক খেলা ছিল এ বছর। এখন তো কিছু খেলা স্থগিত হয়ে গেল। সেই জায়গা থেকে বড় ক্ষতিই কি করে দিল করোনাভাইরাস?

মাহমুদউল্লাহ: ক্ষতি তো অবশ্যই হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে আমরা তিন-চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতাম। প্রতিটি সিরিজই চ্যালেঞ্জিং হতো। আমি চাচ্ছিলাম প্রতিটি সিরিজই যেন আমরা জিতি। বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য জয় দরকার ছিল। এখন সেই সুযোগ নেই। তবে আশা করব, যখনই সব স্বাভাবিক হবে, আমরা যেন উদ্যম নিয়ে ফিরতে পারি।

প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে এসব সিরিজ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু পরিকল্পনা নিশ্চয়ই করেছিলেন...
মাহমুদউল্লাহ: পরিকল্পনা তো ছিলই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিশ্বাস করি না। হ্যাঁ, বিশেষ একটি টুর্নামেন্টে আমরা কতটুকু অর্জন করতে পারব, এ রকম হিসাব-নিকাশ মনের মধ্যে থাকে। বড় আসরের আগে প্রতিটি ম্যাচ বা সিরিজে ভালো খেললে সেটি বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগায়। টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংকে আমরা অনেক পেছনে। তবে আমার বিশ্বাস, সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি র‌্যাঙ্কিংয়ের হিসাব বদলে ফেলতে পারব। আমাদের দলটা খুবই সম্ভাবনাময় ও ভারসাম্যপূর্ণ। কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী খেলতে পারি না। এটাই আমাদের ব্যর্থতা।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দলীয় কোনো লক্ষ্য ঠিক করেছেন কি?
মাহমুদউল্লাহ: আমি বিশ্বাস করি, লক্ষ্য যদি অনেক বড় না হয়, তাহলে আপনি কাছাকাছিও কোথাও পৌঁছাতে পারবেন না। লক্ষ্যটা পাগলামির মতো হতে হবে। অনেকে হয়তো বলবে, 'পাগল, কী বলছে!' কিন্তু লক্ষ্য সে রকমই হওয়া উচিত। তাহলেই আপনি ওটার পেছনে পাগলের মতো ছুটতে পারবেন।

প্রশ্ন: আপনার লক্ষ্য তো তাহলে সেমিফাইনাল, ফাইনালে খেলা। নাকি আরও বড় কিছু!
মাহমুদউল্লাহ: (হেসে) এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এটা আমি খোলাসা করতে চাই না। শুধু এটুকু বলি, লক্ষ্য অনেক বড় হওয়া প্রয়োজন।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো এখনো বাতিল হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের খেলাগুলো স্থগিত হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস সামলে বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত হলে তো আপনাদের প্রস্তুতিতে একটু সমস্যাই হয়ে যাবে...
মাহমুদউল্লাহ: আগামী এক-দুই মাসে পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরব। সবাই উদ্‌গ্রীব হয়ে আছি মাঠে ফিরতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হোক বা অন্য কিছু হোক, ক্রিকেট খেলাটাই মূল কথা। বিশ্বকাপ অনেক বড় মঞ্চ। এখানে খেলার জন্য সব খেলোয়াড় উন্মুখ হয়ে থাকে। আর এখন তো বাসায় থাকতে থাকতে সবাই ভালো খেলার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচকও হতে পারে।

প্রশ্ন: করোনা-পরবর্তী ক্রিকেটে কোনো পরিবর্তন কি আসবে মনে করেন?
মাহমুদউল্লাহ: শুরুর দিকে একটু হয়তো অন্য রকম থাকবে। কারণ, করোনাভাইরাস খুব স্পর্শকাতর। খুব সহজেই রোগটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্রিকেটারদেরও এটা হতে পারে। যখন আপনি খেলার মধ্যে ঢুকে যাবেন, তখন হয়তো এই জিনিসগুলো কারও মাথায় থাকবে না। মাঠের পরিবেশটাই ভিন্ন। কিন্তু তার আগে আপনি যখন প্রস্তুতি নেবেন, তখন কিছুটা হলেও চিন্তাগুলো আসবে।

প্রশ্ন: বলে থুতু লাগানো, উদ্‌যাপনের সময় জড়িয়ে ধরা, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ—এ বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে?

মাহমুদউল্লাহ: যেহেতু এটা খুবই সংক্রামক এবং খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে, শুরুর দিকে আমাদের এসব থেকে বিরত থাকতেই হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি সব স্বাভাবিক হয়ে আসে, তখন হয়তো নীতিনির্ধারকেরা পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাববেন। বলে থুতু লাগানোর মতো কাজগুলো থেকে শুরুর দিকে বিরত থাকাই ভালো। মাঠে শারীরিক সংস্পর্শের ক্ষেত্রেও আশা করি সবাই সচেতন থাকবে। আমার মনে হয়, সবার মঙ্গলের জন্যই শুরুতে কিছু বিধিনিষেধ করে দেওয়া উচিত—মাঠে আমরা কোন জিনিসগুলো করতে পারব, কোন জিনিসগুলো পারব না। সব স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত বিধিনিষেধগুলো সবাইকে মানতে হবে। এখানে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। আমার জন্য আরেকজন খেলোয়াড় সংক্রমিত হতে পারে, তার পরিবারের সদস্যদেরও হতে পারে। এসব আমাদের খেয়াল রাখতেই হবে।

প্রশ্ন: করোনাভাইরাস মহামারি মানুষের মনোজগতেও কিছু পরিবর্তন আনছে। সবার আগে জীবন, পরিবার। এসব মানবিক দিকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো প্রভাব কি ভবিষ্যতের খেলাধুলায় পড়তে পারে?

মাহমুদউল্লাহ: প্রভাব তো পড়া উচিত। একটা কথাই বলি, পরিবারকে সময় দেওয়াটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, কাজের ব্যস্ততায় এটা আমরা অনেক সময় অনুভবই করি না। এখন সবার মধ্যে ভাবনাটা আসবে যে মা, বাবা, সন্তান, ভাই, বোন—আমাদের জীবনে এরা কত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মানেই কিন্তু অলস বসে থাকা নয়। আমার তো সারা দিনে টিভিও দেখা হয় না!

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের জন্য তো আরেক দিক দিয়েও শাপে বর হলো করোনাভাইরাস। সাকিব আল হাসানকে ছাড়া হয়তো এখন আর খুব বেশি ম্যাচ খেলতে হবে না আপনাদের...
মাহমুদউল্লাহ: হ্যাঁ, শাপে বরই হয়েছে। এই সময়টাতে সাকিবের নিষেধাজ্ঞাও হয়তো উঠে যাবে। সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সেরাদের একজন। তাঁর ফিরে আসা দলের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হবে। সাকিব থাকলে দলের চেহারাই বদলে যায়। মনে আছে, আমরা যখন নিদাহাস ট্রফি খেলেছিলাম, সাকিবের আঙুলে চোট ছিল। এরপরও সে শ্রীলঙ্কায় এল। ও যখন এল, সবার ভেতরেই একটা ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পেলাম। ওর দলে থাকা, ওর উপস্থিতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।