তামিম-ইমরুলের স্বপ্নের দিন, বাংলাদেশেরও

পাঁচ বছর আগের এই দিনে টেস্টে অসাধারণ এক জুটি উপহার দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস
৩১২ রানের জুটি গড়ার পথে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। প্রথম আলো ফাইল ছবি
৩১২ রানের জুটি গড়ার পথে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঠিক পাঁচ বছর আগের এই দিনটার কথা মনে আছে?

না থাকলে মনে করার চেষ্টা করুন। দিনটা ১ মেই ছিল, শ্রমিক দিবসের ছুটিই ছিল। ২০১৫ সালের সেই মে দিবসের দুপুরে কিংবা বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় আপনি কি একটুও বিভ্রান্তিতে পড়েননি। সেদিন একবারও কি মনে হয়নি যা দেখছি কিংবা যা দেখেছি সে কি সত্যি!

সেদিন খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা নিশ্চিত নিজেদের ভাগ্যবান ভাবেন। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ওই ব্যাটিং তো চাইলেই দেখতে পাওয়া যায় না। 

পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই টেস্টের চতুর্থ দিনে তামিম–ইমরুলরা কেমন ব্যাটিং করেছিলেন তা বাংলাদেশের সাবেক এক অধিনায়কের কথাতেই পরিষ্কার। বর্তমানে নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা হাবিবুল বাশার বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলেছিলেন, 'মাই গড! এ কী দেখছি! বাংলাদেশের এই রকম ব্যাটিং জীবনে দেখি নাই।'
হ্যাঁ, সেদিন এমন অভূতপূর্ব ব্যাটিংই করেছিলেন তামিম–ইমরুলরা। বাংলাদেশ দিনটা শেষ করেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২৭৩ রান তুলে। পরের দিন যে রানটাকে ৩১২ পর্যন্ত নিয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটির বিশ্ব রেকর্ডটা নতুন করে লিখেছিলেন বাঁহাতিদের এই জুটি।
সকালই অবশ্য আভাস দিয়েছিল দিনটি বাংলাদেশের হতে পারে। সকালে ৩৪ রানে শেষ ৫ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছিলেন বোলাররা। তবে ততক্ষণে পাকিস্তানের রান হয়ে গেছে ৬২৮, লিড ২৯৬ রানের।
ইমরুল–তামিমরা দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন ইনিংস হারের শঙ্কা মাথায় নিয়েই। পাহাড়সম সেই চাপের মুখে তাঁদের খোলসে ঢুকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সেই মে দিবসে উল্টো পথে হাঁটলেন তাঁরা। 'অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ফর্ম অব ডিফেন্স'—ফুটবলের সেই আপ্তবাক্যটাকেই স্মরণ করলেন তামিম–ইমরুলরা। এতটাই আক্রমণাত্মক ছিলেন, পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ–উল–হক তো বাউন্ডারি লাইনে পাঁচজন ফিল্ডার রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন।
চার–ছক্কার বন্যা বইল শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। ক্রিকেটে যত রকমের শট খেলা যায় তার প্রায় সবই খেললেন দুজন। দুজনের ব্যাট এমনই আগুন ঝরালো, যে আগুনে ওয়াহাব রিয়াজ–ইয়াসির শাহরা পুরে ছাই। শ্রমিক দিবসে কী পরিশ্রমটাই না করতে হলো পাকিস্তানি বোলার–ফিল্ডারদের। ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে ৪ গড়ে ৬১ ওভারে সেদিন ২৭৩ রান তুলেছিলেন তামিম ও ইমরুল। উদ্বোধনী জুটিতে তো বটেই সে সময়ে যেকোনো উইকেটেই বাংলাদেশের রেকর্ড গড়েছিলেন তাঁরা। প্রায় দুবছর পর নিউজিল্যান্ডে যে রেকর্ড ভাঙে সাকিব–মুশফিকের ৩৫৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
সেদিন পাল্লা দিয়েই ব্যাটিং করেছেন তামিম ও ইমরুল। তারকা সতীর্থের চেয়ে একটুও কম যাননি ইমরুল। তামিম ১৮৩ বলে ১৩৮ ও ইমরুল ১৮৫ বলে ১৩২ রান করে দিন শেষ করেছিলেন।
পরের দিন সকালে জুটিতে আর মাত্র ১৮ রান যোগ হতেই বিশ্ব রেকর্ড পায়ে লুটাল। ভেঙে গেল কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলারের ৫৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড। ১৯৬০ সালে ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯০ রান করেছিলেন কাউড্রি–পুলাররা।
রানটাকে ৩১২ রানে নেওয়ার পর জুলফিকার বাবরের বলে ইমরুল কায়েস লং অফে বদলি ফিল্ডার বাবর আজমকে ক্যাচ দিতেই ভাঙল রেকর্ড জুটি। যাওয়ার আগে ২৪০ বলে ঠিক ১৫০ রান করেন ইমরুল। ১৬টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কাও ছিল তাঁর ইনিংসে।
তামিম ফেরেন টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটি তোলার পর ২০৬ রানে। মাত্র ২৭৮ বলেই এই রান তামিমের। ১৭টি চারের পাশাপাশি ৭টি ছক্কাও মেরেছেন তামিম। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড হিসেবে এখনো টিকে আছে যা।
তামিম–ইমরুলদের বিদায়ের পর আগুন ঝরেছিল সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকেও। ১০৪ বলেই ৭৬ রান করে অপরাজিত থাকেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান তোলার পরই ম্যাচ ড্র মেনে নেন দুই অধিনায়ক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১ টেস্টে ওই একবারই হার এড়িয়েছে বাংলাদেশ।