এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো

সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে চলে এসেছি বরিশালের বাকেরগঞ্জে দাদার বাড়িতে। আমার জন্ম এখানেই। ৭-৮ বছর বয়স পর্যন্ত এখানেই ছিলাম। পেশাগত কারণে বাবা খুলনা চলে যাওয়ায় আমরাও তাঁর সঙ্গে চলে যাই। আমার ক্রিকেটের হাতেখড়িও খুলনাতে। মাঝেমধ্যে ছুটিতে বাকেরগঞ্জ আসা হয়। তবে এতদিন টানা থাকিনি।

করোনার ছুটিতে খুলনায় না গিয়ে বাকেরগঞ্জে আসার কারণ, শহরে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি একটু বেশি। শহরে মানুষের চলাচল বেশি, গ্রামে অতটা নয়। এ কারণে দেখবেন শহরের তুলনায় গ্রামে সংক্রমণের হার অনেক কম।


অন্য সময় গ্রামে এলে দারুণ কাটে। কিন্তু এবার একঘেঁয়ে লাগছে। কিছুই করার নেই। তবে মজার ব্যাপার হলো, মাঝে মধ্যেই আমি ক্রিকেট খেলছি এবং সেটা স্বপ্নে। রানিং করছি, জিম করছি। প্রায় দুই মাস হতে চলল, ক্রিকেট থেকে দূরে। বাস্তবে তো আর সম্ভব হচ্ছে না, সে কারণেই হয়তো এসব স্বপ্ন দেখছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে খেলা শুরুর সম্ভাবনাও নেই। করোনা সংক্রমণের মাত্রা তো দিনে দিনে বাড়ছে। মনে হয় না আগামী দুই-চার মাসে ক্রিকেট মাঠে গড়াবে।

গ্রামে এসে একেবারে চুপ হয়ে গেছি। ফেসবুকে দেখি সতীর্থ অনেকে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। আমার এখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা কঠিন। মোবাইলের নেটওয়ার্ক ভালো নয়। ঠিকমতো কথাও বলা যায় না অনেক সময়। যেহেতু কোলাহলের মধ্যে থেকে অভ্যস্ত, বিচ্ছিন্ন জীবন কষ্টকর হবেই। তবে পরিবারের সঙ্গে টানা সময় কাটানোও আনন্দের ব্যাপার। সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা।

তবে করোনাভাইরাস নিয়ে যে সব খবর শুনছি, তাতে চিন্তাই শুধু বাড়ছে। তবু আশা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন। এই সময়ে আমাদের ধৈর্য্য ধরাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সময়টা ভালো নয়। তবে এটাও ঠিক, দুঃসময়ের পরেই আসে সুসময়। অন্ধকারের পরই আলোর দেখা মেলে। আশা করি এই পরিস্থিতিও এক সময় ভালো হয়ে যাবে। তার আগ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।

আমরা দেখছি, এই সময়ে বহু মানুষের জীবন চালিয়ে নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি অনেকে চেষ্টা করছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে। সরকারের একার পক্ষে সব করা সম্ভবও নয়। বিত্তবানেরা যদি সবাই এগিয়ে আসেন, তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভালো থাকবে। আমরা খেলোয়াড়েরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সাকিব ভাই তহবিল গড়েছেন। তামিম ভাই অনেক ভালো উদ্যোগ নিচ্ছেন। মুশফিক ভাই প্রিয় ব্যাট নিলামে তুলতে চাইছেন। মাশরাফি ভাই অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাইও করছেন।

আমরা যারা জুনিয়র আছি, তারাও চেষ্টা করছি নিজেদের জায়গা থেকে কিছু করার। অনেকের উদ্যোগ মানুষ জানে, অনেকেরটা জানে না। এভাবে সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে আমাদের দেশে কেউ অন্তত না খেয়ে মরবে না। রমজানের যাকাতটাও যদি সবাই ঠিকঠাক দেয়, আমার তো মনে হয় তাহলেই বাংলাদেশের কোনো মানুষ খাবারের কষ্ট পাবে না।