কে সত্যিকারের দ্রুতগতির বোলার?

>কাগজে কলমে পাকিস্তানের শোয়েব আখতার সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার জেফ থমসন আবার শোয়েবকে দ্রুতগতিত বোলার মানতে নারাজ
জেফ থমসন। আগুনে গোলা ছুঁড়ছেন। ছবি: আইসিসি টুইটার পেজ
জেফ থমসন। আগুনে গোলা ছুঁড়ছেন। ছবি: আইসিসি টুইটার পেজ

সাবেক পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের খুব গর্ব। কাগজে কলমে তিনিই যে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার। এদিকে শোয়েবকে তাচ্ছিল্যের হাসি দেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার জেফ থমসন।

থমসনের বিশ্বাস, গতির মামলায় তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই। শুধু থমসন নন, ৭০ দশকের অনেক কিংবদন্তি 'থম্মো'কে ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার মানেন।

২০০৩ বিশ্বকাপে ঘন্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার বেগে বল করে রেকর্ড গড়েন শোয়েব। ভাঙেন থমসনের ১৬০.৬ কিলোমিটারে বল করার রেকর্ড। নিজের অর্জন নিয়ে শোয়েব এক সাক্ষাতকারে বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন, 'আমি আগেই সতীর্থদের বলেছিলাম, কোন ওভারের কয় নম্বর বলে রেকর্ড গড়ব।'

২০০০ সালের শুরুর দিকে ব্রেট লি ও শোয়েব জোরে বল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। কে কার আগে রেকর্ড গড়বেন সেই প্রতিযোগিতা। শোয়েব রেকর্ড গড়লেও খুব বেশি পিছিয়ে ছিলেন না ব্রেট লি। কয়েক বছর পর প্রতিযোগিতায় যোগ দেন শন টেইট। তিনজনই অল্প সময়ের মধ্যে থমসনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যান।

নিজের রেকর্ড এই প্রজন্মের বোলারদের কাছে হারিয়ে বেশ বিরক্ত থমসন। বিরক্ত হওয়ার যৌক্তিক কারণও আছে। থমসনের গতি পরিমাপ হয় ২২ গজ দূর থেকে। থমসনের ছোড়া ১৬০.৬ কিলোমিটারের বলটি ব্যাটসম্যানকে ১৬০.৬ কিলোমিটারেই খেলতে হয়েছে।

আধুনিক স্পিড মিটার আবার উল্টো। বোলার হাত থেকে বল ছোড়ার সময়ই গতি মাপা হয়। ক্রিজের ওপাশে যেতে যেতে বল স্বাভাবিকভাবেই কিছু গতি হারায়। শোয়েব, লি, টেইটরা আধুনিক স্পিড মিটারের হিসেবে থমসনের রেকর্ড ভেঙেছেন।

২০১০ সালে এমসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট লেকচারে আধুনিক স্পিড মিটার নিয়ে থমসনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় থমসন পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন, 'এখন ওরা হাত থেকে বল ছোড়ার পর বলের গতি হিসেবে করে। যখন বল ব্যাটসম্যানের কাছে পৌছায় তখন তো গতি কমে যাচ্ছে। বিষয়টি পুরো হলিউড। সত্যি, চিন্তা করুন! আপনি তো বোলারদের মুখের সামনে ব্যাট করছেন না। করছেন ২২ গজ দূরে। আর পিচ যে কোন বোলারের বল ১০-১৫ ভাগ গতি কমিয়ে দেয়। এখন শন টেইট যদি ১০০ মাইল বেগে বল করে, তাহলে ব্যাটসম্যান সেটা খেলছে ৯০ মাইলে। ওরা যদি এখনকার হিসেবে ১০০ মাইলে করে, তাহলে আমি হবো ১১০ মাইল বেগের বোলার।'

১৯৭৮ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটে থমসনদের জোরে বল করার প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেল নাইন। মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, ইমরান খান, ডেনিস লিলি, কলিন ক্রফট, থমসনরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখানেই থমসন ১৬০.৬ কিলোমিটারে বল করে রেকর্ড গড়েন।

শোয়েব আখতার।গোলা ছোঁড়ার পর। ছবি: টুইটার
শোয়েব আখতার।গোলা ছোঁড়ার পর। ছবি: টুইটার

মজার কথা হচ্ছে, দ্রুতগতির বোলারদের প্রতিযোগিতায় থমসনের থাকারই কথা ছিল না। তখন নিয়ম ভেঙে নিষিদ্ধ হয়ে এক বছর খেলার বাইরে ছিলেন থমসন। নিজ বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন আর বিয়ার পান করছিলেন। এমন সময় ফোন আসে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠাতা ক্যারি প্যাকারের।

প্যাকারের হ্যালো শুনতেই নড়েচড়ে বসেন থমসন। দ্রুত থমসনকে মাঠে আসতে বলেন প্যাকার। থমসন তো অবাক। হুট করেই নিষিদ্ধ ক্রিকেটারকে কেন মাঠে ডাকা হচ্ছে! থমসন মাঠে পৌঁছে দেখেন ফাস্ট বোলারদের প্রতিযোগিতা শুরুর প্রস্তুতি চলছে। প্যাকার থমসনকেও ইমরান-হোল্ডিংদের সঙ্গে যোগ দিতে বলেন। কিন্তু বোলিং করার মতো জুতো, ট্রাউজার কিছুই ছিল না থমসনের। পরে আরেকজনের জুতো ধার করেই রেকর্ড গড়েন।

থমসন নাকি কোন কিছুতেই সহজে সন্তুষ্ট হতেন না। রেকর্ড গড়েও সন্তুষ্ট ছিলেন না সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি। প্রতিযোগিতায় কী আর গা গরম হয় নাকি! ম্যাচের সময় হলে নাকি আরও জোরে বল করতেন তিনি, 'এটা সবচেয়ে দ্রুতগতির ছিল না। আমি এসে বল ছুড়েছি আর ওরা হিসেবে করেছে।'