টেস্ট অভিষেকেই অধিনায়কত্ব!

টেস্ট অভিষেকেই টস করতে নামতে হয়েছিল টনি লুইস ও লী জার্মনকে। ফাইল ছবি
টেস্ট অভিষেকেই টস করতে নামতে হয়েছিল টনি লুইস ও লী জার্মনকে। ফাইল ছবি
টেস্ট অভিষেকেই অধিনায়কত্ব করা যায় নাকি! কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাস বলছে, অভিষেক টেস্টেই অধিনায়কত্ব করার ঘটনায় খুব বিরল কিছু নয়। ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ এই অভিজ্ঞতা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান লি জারমনের।

ক্রিকেটারদের টেস্ট অভিষেক নিয়ে কতই না গল্প! দুরু দুরু বুকে খেলোয়াড়ী জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটি দিতে মাঠে নামেন তাঁরা। রোমাঞ্চকর সে মুহূর্তের স্বপ্ন দেখেন তারা কত দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনীতে। কিন্তু, নিজের প্রথম টেস্টেই যদি কাউকে অধিনায়কত্ব করতে হয়, যদি দায়িত্ব নিতে হয় গোটা একটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্নের, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়!

এমন ঘটনা অবশ্য ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর প্রথম ম্যাচ হিসেবে থেকে বাদ দিলেও ২৩ জনের আছে এই অভিজ্ঞতা। ২৩ জনের প্রথম ১৯ জনই অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের। যে সময়ে অনেক লর্ড কিংবা রাজা–মহারাজাদের দলের অধিনায়ক বানিয়ে দেওয়া হতো হুট করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম টেস্ট অভিষেকেই অধিনায়কত্ব করার স্বাদ পান ইংল্যান্ডের জর্জ মান (১৯৪৮–৪৯ মৌসুম)। তিন বছর পর একই দলের হয়ে এই স্বাদ পান নাইজেল হাওয়ার্ড। তবে সর্বশেষ দুজনেরটাই একটু বেশি আলোচিত।

এদের একজন টনি লুইস। লুইস প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দীর্ঘ দিন কাটিয়ে দেওয়ার পর ইংল্যান্ড টেস্ট দলের সুযোগ পান ১৯৭২–৭৩ মৌসুমে। তখন রে ইলিংওয়ার্থ নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইল্যান্ডকে। সেবার ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সফরের আগে চোটের কারণে ইলিংওয়ার্থ নিজেকে সরিয়ে নিলে গ্ল্যামরগনের দীর্ঘদিনের অধিনায়ক লুইসকে হঠাৎ করেই অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দিল্লিতে অভিষেকে লুইস খুব খারাপ করেননি। ৭০ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন, যেটি ১৯৫১ সালের পর ভারতের মাটিতে জয় এনে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ভারতে মোট পাঁচটি টেস্ট খেলেছিল ইংল্যান্ড। দিল্লির পর কলকাতা, চেন্নাই (মাদ্রাজ), কানপুর ও মুম্বাইতে (বোম্বে)। এরপর পাকিস্তান সফরে লাহোর, হায়দ্রাবাদ ও করাচিতে আরও তিনটি টেস্টে তিনি ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর ইলিংওয়ার্থ ফিরে এলে তিনি সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রেন্টব্রিজে একটি টেস্ট খেলেন। চোটের কারণে ৯ টেস্টে তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। লুইস এরপর ক্রিকেট সাংবাদিক হিসেবেই নাম কামিয়েছেন বেশি।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলকে ১৯৯৫ সালে এক কঠিন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লি জার্মন। কিউই দল তখন মারিজুয়ানা কেলেঙ্কারিতে জেরবার। ১৯৯৪–৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পার্লে মারিজুয়ানা সেবন করেছিলেন তিন তরুণ কিউই ক্রিকেটার—স্টিভেন ফ্লেমিং, ডিওন ন্যাশ ও ম্যাথু হার্ট। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ব্যাপারটা সহজভাবে নেয়নি। দলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। কোচ করা হয় সাবেক নিউজিল্যান্ড গ্রেট গ্লেন টার্নারকে। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্যান্টারবেরির সফল অধিনায়ক জার্মনকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেন সবাইকে অবাক করে দিয়ে। জার্মন ১২টি টেস্ট খেলেছেন, ১২টিতেই তিনি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ৩৭টি ওয়ানডে খেলা এই উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেন।