বন্দিজীবনে বিরক্ত লিটন

গৃহবন্দিত্বের এই সময়ে লিটনের সময় কাটানোর সঙ্গী প্রিয় পোষা কুকুর চেরিও।  প্রথম আলো
গৃহবন্দিত্বের এই সময়ে লিটনের সময় কাটানোর সঙ্গী প্রিয় পোষা কুকুর চেরিও। প্রথম আলো
>

মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্বপ্নের মতো একটা সিরিজ খেলেই পড়তে হয়েছে অনির্দিষ্টকালের বিরতিতে। বন্দিজীবন বড় একঘেয়ে লাগছে লিটনের।

খাঁচার ভেতর ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে বন্দী একটা পাখি। সেই পাখিকে মুক্ত করতে উড়ে এসেছে আরেকটা পাখি। পাখির মাধ্যমে বর্তমান বন্দী জীবনটাই যেন রংপেনসিলে ফুটিয়ে তুলেছেন লিটন দাস।

করোনার কারণে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে একঘেয়ে হয়ে ওঠা জীবনে নতুন মাত্রা আনতে রংপেনসিল তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনার।

সুন্দর ছবি আঁকতে পারেন, শিল্পীসত্তা কি করোনার সময়েই জাগ্রত হয়েছে, নাকি আঁকাআঁকির অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই ছিল? ‘আরে নাহ্‌! কিসের আঁকাআঁকি? আমার স্ত্রী একটু শিখিয়ে দিয়েছিল। সে শিক্ষা কাজে লাগিয়ে টুকটাক এঁকেছি’, সলাজ হাসিতে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চান লিটন।

টুকটাক এঁকেই ভালো প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ব্যাটের সঙ্গে ছবিগুলোও কিন্তু নিলামে তুলতে পারেন ২৫ বছর বয়সী ওপেনার। এই পরামর্শে অবশ্য জোর বিরোধিতা করলেন লিটন, ‘আরে না, ফেসবুকে মানুষ পছন্দ করেছে, বিষয়টা এতটুকুই থাক।’

করোনা লিটনকে চিত্রশিল্পী বানিয়ে ছেড়েছে! কিন্তু তাঁর আসল পরিচয়, তিনি ২২ গজের শিল্পী। সেখানে ছবি আঁকেন তিনি ব্যাট দিয়ে। মাঠ তাঁর বিশাল ক্যানভাস। মনকাড়া কাভার ড্রাইভ, শৌর্যভরা পুল কিংবা নয়নজুড়ানো ফ্লিক, কাট যেন একেকটা রং। সব রং মিলিয়ে যেমন মুগ্ধ করা ছবি হয়, লিটনও তেমনি গড়েন বর্ণিল সব ইনিংস। ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১২১, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কদিন আগে অপরাজিত ১২১ আর ১৭৬। শেষেরটি তো রেকর্ডই হয়ে গেছে, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। তবে লিটন এগিয়ে রাখেন এশিয়া কাপের ইনিংসটাই।

গত মার্চে কী দুর্দান্ত একটা সিরিজ গেল লিটনের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১৫৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরিতে ৩১১ রান। স্বপ্নের মতো একটা সিরিজ খেলেই পড়তে হলো অনির্দিষ্টকালের বিরতিতে। তবে এ নিয়ে আফসোস করছেন না লিটন। যেহেতু বিষয়টি তাঁর হাতে নেই, এ নিয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চান না। তবে গত বিপিএল থেকে এক অন্য রকম লিটনকে দেখা যাচ্ছে। যে লিটন মাঠে গোছালো ক্রিকেট খেলছেন। মাঠের বাইরেও তাঁর কথায় পরিণতির ছাপ। কদিন আগে নিল ম্যাকেঞ্জিই যেমন বললেন, ‘ও এখন যেভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে, সেটা আমাকে বেশি মুগ্ধ করছে।’

প্রশংসা শুনে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচকে একটা ধন্যবাদ জানালেন লিটন। নিজের মধ্যে যে একটা পরিবর্তন এসেছে, সেটি অবশ্য মানতে চাইলেন না লিটন, ‘একটা মানুষের পরিবর্তন হুট করে হয় না। আরও যদি দু–তিনটা সিরিজ খেলতে পারতাম, তাহলে বুঝতাম কী পরিবর্তনটা হয়েছে আমার। একটা সিরিজের পর তো আর খেলার সুযোগই পেলাম না। আসল কথাটা হচ্ছে, আর সবার মতো করোনা নিয়ে আমিও মানসিকভাবে হতাশ।’

হতাশ লিটন তো হবেনই। কোথায় এখন ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, নিজেকে আরেক ধাপ ওপরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, তখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে ঘরে। সতীর্থদের অনেকে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। লিটন আটকা পড়েছেন ঢাকায়, যেতে পারেননি নিজ শহর দিনাজপুরে। চার দেয়ালে বন্দী থাকতে থাকতে বিরক্ত লিটন বলেই ফেললেন, ‘আমি পাগলই হয়ে যাচ্ছি! আজকাল আমার মাথা ঠিকঠাক কাজ করছে না। কাজ করবে কী করে বলেন, আমার কাজ খেলা। সেই খেলাটা খেলতে পারছি না। হ্যাঁ, এটা ঠিক, পরিবারের সঙ্গে সবারই সময় কাটাতে ভালো লাগে। তবে এভাবে ঘরবন্দী হয়ে নয়। জীবন স্বাভাবিকভাবে চলবে, ঘুরব-ফিরব, তাহলে না ভালো লাগে।’

লিটনের অস্থির হয়ে ওঠার কারণটা অযৌক্তিক নয়। যেটি তাঁর নেশা-পেশা, সেটি করতে পারছেন না দিনের পর দিন, কাঁহাতক আর ভালো লাগে! তবে লিটন ফিটনেসের কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন। চিন্তা তাঁর স্কিল ট্রেনিং নিয়ে, ‘খেলায় ফেরার পর স্কিলে একটু সমস্যা হবে। শুধু আমার হবে না, প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই হবে। শুধু আমি দুই মাস ধরে খেলার বাইরে আছি, তা তো নয়। বিশ্বের সব ব্যাটসম্যান-বোলারের এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে। খেলায় ফেরার পর মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবেই।’

কিন্তু খেলায় কবে ফিরবেন সবাই? লিটনের ছবির মতো সবকিছু যে এখন খাঁচাবন্দী!