পেলে-ম্যারাডোনার চোখে শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের মর্মান্তিক মৃত্যু

কার্লোভিচের লাশবাহী কফিন। ছবি: এএফপি
কার্লোভিচের লাশবাহী কফিন। ছবি: এএফপি
>ম্যারাডোনা নিজের মুখে টমাস কার্লোভিচকে বলেছিলেন 'আমার চেয়েও সেরা।' সেই কার্লোভিচ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন

কিছুদিন আগের কথা।


ম্যারাডোনার ক্লাব জিমনাসিয়া খেলতে গেছে রোজারিও সেন্ট্রালের মাঠে। সেখানেই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির সঙ্গে দেখা টমাস কার্লোভিচের। গুণমুগ্ধ ম্যারাডোনা বলে উঠলেন, 'তুমি আমার চেয়েও ভালো ছিলে!'


আরো দুই যুগ আগের কথা। ম্যারাডোনা তখন ক্যারিয়ার-সায়াহ্নে। খেলতে গেছেন রোসারিওর ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা ম্যারাডোনাকে আখ্যায়িত করলেন শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে। জবাবে ম্যারাডোনা বললেন, 'রোজারিওতে শ্রেষ্ঠ ফুটবলার এর মধ্যেই খেলে গেছে। আর ওর নাম কার্লোভিচ।'

ম্যারাডোনার সঙ্গে কার্লোভিচ। ছবি: টুইটার
ম্যারাডোনার সঙ্গে কার্লোভিচ। ছবি: টুইটার

কে এই কার্লোভিচ?


অনেকের চোখেই ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এই আর্জেন্টাইন। ম্যারাডোনা তো বটেই, তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন আর্জেন্টিনার ১৯৭৮ বিশ্বকাপজয়ী কোচ সেজার লুইস মেনোত্তি ও হোসে পেকারম্যানের মতো কোচের কাছে। ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে নিজে চেয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে এক ক্লাবে খেলতে, নিউ ইয়র্ক কসমসে। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

গোটা জীবন নিভৃতে থাকতে চেয়েছিলেন। মৃত্যুটাও হল নিভৃতেই। কিন্তু তাঁর মতো সেরা একজন তারকার যেভাবে মৃত্যু হল, মেনে নেওয়া কষ্টকর। ৭৪ বছর বয়সী এই সাবেক তারকা নিজের সাইকেল চালাচ্ছিলেন, এর মধ্যে একজন সাইকেল চোর এসে তাঁর কাছ থেকে বাহনটা কেড়ে নেয়। চোরকে আটকাতে গিয়ে উল্টো মার খেয়ে বসেন, আঘাত লাগে মাথায়। সে আঘাত থেকে সেরে উঠতে পারেননি। কাল ঢলে পড়েছেন মৃত্যুর কোলে।

কার্লোভিচের মৃত্যুর পর হাজারো ভক্ত এভাবে শ্রদ্ধা জানায় আর্জেন্টিনায়। ছবি: এএফপি
কার্লোভিচের মৃত্যুর পর হাজারো ভক্ত এভাবে শ্রদ্ধা জানায় আর্জেন্টিনায়। ছবি: এএফপি

বড্ড ঘরকুনো ছিলেন কার্লোভিচ। নিজের শহরের বাইরে বের হতে হবে শুনলেই যেন কেমন অস্বস্তি হত তাঁর। অন্য দেশে যাওয়া তো দূর, রোসাজিওর বাইরে যেতেও তাঁর ছিল আপত্তি। এ কারণে ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন রোজারিও-র ক্লাবগুলোতে, দ্বিতীয় বিভাগে খেলে। ছিলেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। অনেকের চোখেই লাতিন ফুটবলের ফুল সবচেয়ে ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হত তার পায়েই।

১৯৭৪ বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনা দল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য রোজারিওতে গিয়েছিল। রোজারিওতে খেলা ফুটবলারদের বিপক্ষে সে ম্যাচে একদম নাকানি-চুবানি খায় জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা। প্রথমার্ধেই খেয়ে বসে তিন গোল। তখন জাতীয় দলে খেলা মারিও কেম্পেস, উবালদো ফিলোল, রবার্তো পারফুমোরা কার্লোভিচের পায়ের জাদুতে নিজেদের খেলোয়াড়ি সত্ত্বা ভুলে গিয়ে মুগ্ধ দর্শক হয়ে গিয়েছিলেন ।

ফুটবলার টমাস কার্লোভিচ। যখন খেলতেন। ছবি: টুইটার
ফুটবলার টমাস কার্লোভিচ। যখন খেলতেন। ছবি: টুইটার

পরাজয়ের ব্যবধান যেন বড় না হয়, এ জন্য তৎকালীন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে কোচ ভ্লাদিস্লাও কাপ অনুরোধ করেছিলেন, দ্বিতীয়ার্ধে কার্লোভিচ যেন মাঠে না নামেন। সেটাই হয়েছিল। আর তাতেই একটা গোল অন্তত শোধ করতে পেরেছিল আর্জেন্টিনা।


এসি মিলান, রিম, নঁতে, সেঁত এতিয়েঁর মতো অনেক ক্লাবই তাঁকে চেয়েছিল। কিন্তু ঘরকুনো কার্লোভিচকে ঘর থেকে বের করে পরিচিত পরিবেশ থেকে নিয়ে আসার সাধ্য হয়নি কারও।
কিন্তু সেই পরিচিত পরিবেশেই এমন করুণ মৃত্যু কে ভাবতে পেরেছিল!