টেন্ডুলকারকে যেভাবে বোকা বানিয়েছিলেন আকরাম

নাটকীয় সেই ম্যাচের মীমাংসা হয়েছিল এ দুজনের লড়াইয়ে। ছবি: আইসিসি টুইটার
নাটকীয় সেই ম্যাচের মীমাংসা হয়েছিল এ দুজনের লড়াইয়ে। ছবি: আইসিসি টুইটার

শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা-এ দুজনকে নিয়ে তর্কে মাতলে লারার সমর্থকদের একটি বড় অস্ত্র ছিল ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা। টেস্টে দল যতই বিপদে পড়ুক না কেন, লারা যতক্ষণ উইকেটে থাকতেন প্রতিপক্ষ স্বস্তি পেতেন না। এই একটি দিকে লারার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন টেন্ডুলকার। বিশেষ করে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ভারতকে স্মরণীয় কোনো জয় এনে দিতে পারেননি টেন্ডুলকার। কিন্তু এ তর্কের দান পাল্টে যেতে পারত ১৯৯৯ সালেই; যদি চেন্নাই টেস্টটা ভারত জিতত।

টেস্টে নিজের অন্যতম সেরা এক ইনিংস খেলেছিলেন টেন্ডুলকার। একাই লড়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিচ্ছিলেন প্রায়, কিন্তু ক্ষণিকের এক ভুল তাঁর লড়াইটা ব্যর্থ করে দেয়। টেন্ডুলকারকে সে ভুল করতে বাধ্য করেছিলেন ওয়াসিম আকরাম। কীভাবে? আকাশ চোপড়ার সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে সেটাই জানিয়েছেন পাকিস্তান কিংবদন্তি।

২৭১ রানের লক্ষ্যে ভারত জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ১১৭ রান দরকার ছিল তাদের। উইকেটে ১৩৬ রান করা ট্টেন্ডুলকার। কিন্তু পিঠে ব্যাথা নিয়ে ব্যাট করা টেন্ডুলকারকে ঝুঁকি নিতে হচ্ছিল। আর সে সুযোগটাই নিয়েছেন আকরাম, 'আমার সে টেস্টের কথা এখনো মনে আছে, যেন গতকালই হয়েছে সেটা। ভারত ও পাকিস্তান তখন টান টান উত্তেজনাকর ম্যাচ খেলার জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৯৮৭ সালে ব্যাঙ্গালুরে সুনীল গাভাস্কারের ৯০ এর উপরে একটি ইনিংস খেলার কথা আমার মনে আছে , এরপরই এই চেন্নাই টেস্ট। এত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ, একদম শেষ দিনে গড়িয়েছিল। আমার মনে আছে ভারতের ২০ রানের মতো দরকার ছিল। মঙ্গিয়া (নয়ন) ও শচীনের জুটিটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলে। শচীন সাকলায়েনের বল খুব ভালো খেলছিল এবং কখন দুসরা করছিল বুঝতে পারছিল।'

২৭১ রানের লক্ষ্যে নামা ভারত ৮২ রানেই ৫ উইকেট খুইয়েছিল। কিন্তু মঙ্গিয়াকে নিয়ে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন টেন্ডুলকার। ৫২ রান করা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে আউট করেন আকরাম নিজে। এটাই ম্যাচে পাকিস্তানকে ফিরিয়ে এনেছিল বলে ধারণা আকরামের, 'মঙ্গিয়া যদি ঠান্ডা মাথায় খেলত, তাহলে ফল ভিন্ন হতো। কিন্তু সে বল আকাশে তুলে আউট হলো। আমি সবাইকে বললাম এটাই সময়। শচীন পিঠে ব্যাথা নিয়ে খেলছে, সুযোগ আসবেই।'

টেন্ডুলকার তবু সুযোগ দিচ্ছিলেন না।সুনীল যোশিকে নিয়েই ৩৬ রানের জুটি গড়েন। এতটাই ভালো খেলছিলেন যে দুসরা দিতেও ভয় পাচ্চিলেন সাকলায়েন। এ অবস্থায় আকরামই টোপ ফেলতে বলেন এই অফ স্পিনারকে, 'শচীন যখন আউট হচ্ছে, সব ফিল্ডার সীমানায় ছিল। শুধু আমি ছিলাম একস্ট্রা কভারে। আমি সাকলায়েনকে বললাম একটা দুসরা কর, ফ্লাইট দিয়ে। জানতাম এতে ঝুঁকি আছে, ছক্কাও হতে পারে(আর মাত্র ১৭ দরকার ছিল)। কিন্তু জানতাম শচীন মিড উইকেটের ওপর দিয়েই মারবে। সাকলায়েনও তা জানত, তাই বলটা করেছিল মিডল ও অফ স্টাম্পে, ফুল লেংথে। শচীন তাড়া করে এল এবং আমার কাছে ক্যাচ দিল।'

দলকে জয় থেকে ১৭ রান দূরে রেখে টেন্ডুলকার ফিরে এসেছিলেন। বাকি ৩ উইকেট হাতে নিয়েও ভারতের টেলএন্ড আর মাত্র ৪ রান করতে পেরেছিল। আর পাকিস্তান পেয়েছিল ১২ রানের এক মহাকাব্যিক জয়।