অথচ তাঁরা খেলতে পারতেন অন্য ক্লাবে

জুভেন্টাসের রোনালদো, বার্সেলোনার মেসি। ছবি : এএফপি
জুভেন্টাসের রোনালদো, বার্সেলোনার মেসি। ছবি : এএফপি
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নয়, একটু এদিক-ওদিক হলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে খেলতে দেখা যেত লিভারপুলে। মেসি খেলতেন আর্সেনালে, ভিয়েরা-ফ্যাব্রিগাসদের সঙ্গে। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না তো?

দলবদলের বাজারে এক খেলোয়াড়কে নিয়ে একাধিক ক্লাবের টানাটানি আজকের নতুন নয়। দলবদলের পুরো সময় জুড়ে এক ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পরেও একদম শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে অন্য ক্লাবে গিয়েছেন, এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটেছে। এমনই কিছু ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন।

জেরার্ড-তোরেসের সঙ্গী রোনালদো
'লিভারপুল ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাব, যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই এমন ক্লাবের অংশ হতে পারা গর্বের বিষয়। আশা করব ওরা যেন এমন একটা প্রস্তাব দেয় যা আমার ও স্পোর্টিং লিসবন, উভয়ের জন্যই ভালো হয়,' ২০০৩ সালে উক্তিটা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কোন ক্লাবের প্রতি উদ্দেশ্য করে করেছিলেন, বলুন তো?
না। যে ক্লাবের হয়ে খেলে তিনি তারকাখ্যাতি পেয়েছেন, সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নয়। এই কথাটা তিনি বলেছিলেন লিভারপুলের উদ্দেশ্যে। তখন পর্তুগালের স্পোর্টিং লিসবনে খেলা এই তরুণ মাত্রই আলো ছড়ানো শুরু করেছেন। তত দিনে খবর পেয়ে রোনালদোর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ভিড় করছে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলো। আগ্রহী ক্লাবের তালিকায় ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে বড় 'শত্রু' লিভারপুলও। লিভারপুলের তৎকালীন কোচ জেরার্ড হুলিয়ের ও সহকারী কোচ ফিল থম্পসন বেশ ক'বার পর্তুগালে গিয়ে স্বচক্ষে রোনালদোর কারিকুরি দেখে এসেছিলেন।

ইউনাইটেডে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হন রোনালদো। ছবি : এএফপি
ইউনাইটেডে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হন রোনালদো। ছবি : এএফপি

রোনালদোর মুখপাত্র হোর্হে মেন্ডেস তখন পাগলের মতো নিজের তরুণ মক্কেলের জন্য ক্লাব খুঁজছেন। ইংল্যান্ডে আসার আগ্রহটাই বেশি ছিল রোনালদোর। কারণ ওই একটাই, ইংল্যান্ডে আসলে ওই বয়সে অন্য যেকোনো দেশের ক্লাবের চেয়ে বেশি আয় করা যাবে। থম্পসনকে বলা হল, রোনালদোর দাম চল্লিশ লাখ পাউন্ড (চার মিলিয়ন পাউন্ড), যা লিভারপুল চাইলে চার বছরে দিতে পারবে, অর্থাৎ ফি-বছর এক মিলিয়ন পাউন্ড করে। বেতন বাবদ প্রতি বছর এক মিলিয়ন পাউন্ড চেয়েছিলেন রোনালদো। তবে আঠারো বছর বয়সী এক তরুণের জন্য এত বেতন দেওয়াটা ঠিক হবে কি না, সন্দিহান ছিলেন লিভারপুলের কর্তাব্যক্তিরা। বাচ্চা একটা ছেলেকে এত বেশি বেতন দিলে খেলোয়াড়দের মধ্যে রোষের সৃষ্টি হতে পারে, ভেবেছিলেন কোচ হুলিয়ের।

লিসবন থেকে লিভারপুলে ফিরে হুলিয়েরকে খেলোয়াড়ের দাবি-দাওয়া খুলে বলেন থম্পসন। হুলিয়ের লিভারপুলের প্রধান নির্বাহী রিক পেরির সঙ্গে কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। পরদিন টিভি খুলেই আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায় থম্পসনের। এক কোটি বাইশ লাখ পাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছেন রোনালদো, স্কাই স্পোর্টসের খবরটা দেখে ঠিক বিশ্বাস হয় না তাঁর। দাম কীভাবে তিনগুণ বেড়ে গেল? পরে জানা যায়, লিভারপুলের দোনমনার সুযোগ নিয়ে দাঁও মেরে দিয়েছে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দল!

আর্সেনালের জার্সি গায়ে ইব্রার সেই ছবি! ছবি : টুইটার
আর্সেনালের জার্সি গায়ে ইব্রার সেই ছবি! ছবি : টুইটার

'জ্লাতান ডাজন্ট ডু ট্রায়ালস!'
জুভেন্টাস, আয়াক্স, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়ে লিগ জেতা সুইডেনের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা এই স্ট্রাইকার আর্সেনালে যোগ দেননি কেন জানেন? ২০০০ সালে সুইডিশ ক্লাব মালমো থেকে কেনার সময় আর্সেনাল কোচ ওয়েঙ্গার তাঁকে চেয়েছিলেন ট্রায়ালে খেলা দেখানোর জন্য!
তত দিনে আর্সেনালের নয় নম্বর জার্সি নিয়ে পোজ দেওয়া শেষ ইব্রার। যখন শুনলেন আর্সেনালের খেলোয়াড় হওয়ার জন্য নতুন করে কোচের সামনে 'স্ক্রিন টেস্ট' দেওয়া লাগবে, আঁতে ঘা লাগল সুইডিশ তারকার।'জ্লাতান ডাজ নট ডু ট্রায়ালস,' বিখ্যাত এই উক্তি দিয়ে পরদিনই ডাচ ক্লাব আয়াক্সে যোগ দিয়েছিলেন। বাকিটা ইতিহাস!

লিওনেল মেসির 'ইতালি' অভিযান
'বার্সা লওতারো মার্টিনেজকে নেওয়ার চেষ্টা করলেও আমরাও লিওনেল মেসিকে নিয়ে আসব,' কিছুদিন আগে এমন উক্তি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ইন্টার মিলানের সাবেক সভাপতি মাসিমো মোরাত্তি। মোরাত্তির মেসি-প্রীতি আজকের না অবশ্য। সেই ২০০৫ সালে স্প্যানিশ লা লিগার এক নিয়মের বেড়াজালে আটকে আরেকটু হলে ক্লাব ছাড়া হচ্ছিলেন লিও মেসি। আর তখন থেকেই মেসির গুণমুগ্ধ ভক্ত হওয়ার কারণে আর্জেন্টিনার এই তারকাকে পাওয়ার জন্য লাইনে সবার আগে দাঁড়িয়েছিলেন মোরাত্তি।
কী সেই নিয়ম? ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাসপোর্ট না থাকা সর্বোচ্চ তিনজন থাকতে পারত স্পেনের একেকটা ক্লাবে। বার্সায় তখন ছিলেন ব্রাজিলের রোনালদিনহো, ক্যামেরুনের স্যামুয়েল ইতো ও মেক্সিকোর রাফায়েল মার্কেজ। ওদিকে মেসির তত দিনে পাসপোর্ট হয়নি। ই-ইউয়ের পাসপোর্ট না থাকলে না চাইলেও মেসিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখতে হবে। আর মেসি অবশ্যই বেঞ্চে বসে থাকতে চাইবেন না!

রোনালদিনহোর উত্তরসূরিকে হাতছাড়া করতে চায়নি বার্সা। ছবি : ফিফা
রোনালদিনহোর উত্তরসূরিকে হাতছাড়া করতে চায়নি বার্সা। ছবি : ফিফা

বার্সার এই সমস্যার 'সমাধান' নিয়ে আসে ইন্টার। তখন মেসির চুক্তিতে বাই আউট ক্লজ দেওয়া ছিল ১৫০ মিলিয়ন ইউরো (১৫ কোটি ইউরো)। গোটা টাকাটাই দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যায় ইতালির ক্লাবটি, আঠারো বছর বয়সী এক তরুণের জন্য যে দামটা আকাশছোঁয়া। শুধু তাই নয়, মেসির বেতন তিন গুন করে দেওয়ার প্রস্তাব করে ইন্টার। ছেলের প্রতি বাইরের ক্লাবের এহেন আগ্রহ দেখে মাথা ঘুরে যায় মেসি বাবা ও মুখপাত্র হোর্হে মেসির। বার্সাকে নতুন চুক্তি ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর জন্য তাগাদা দিতে থাকেন তিনি। পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা মেটাতে পারলেও মেসিকে নতুন চুক্তি দিতে গড়িমসি করছিল কাতালান ক্লাবটা। কারণ, মাত্র তিন মাস আগে চুক্তি নবায়ন করেছিলেন মেসি। এর মধ্যে আবার নতুন বেতনের চুক্তি দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।
বার্সার মনোভাব পালটে দিতে মেসি সময় নিলেন মাত্র এক ম্যাচ। ভেরডার ব্রেমেনের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে ৬৫ মিনিটে মেসিকে মাঠে নামান তৎকালীন বার্সা কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড। মাঠে নেমেই জাদু দেখানো শুরু করেন মেসি। মেসিকে আটকাতে হিমশিম খাচ্ছিল ব্রেমেনের রক্ষণভাগ। মেসিকে সামলাতে গিয়ে পেনাল্টি দিয়ে বসে তাঁরা। আর তাতে গোল করে দলকে জয় এনে দেন রোনালদিনহো। বার্সা বুঝতে পারে, এমন ছেলেকে হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না। পরদিনই মেসির সঙ্গে বাড়তি বেতনের চুক্তি করে কাতালান ক্লাবটি।

সেভিয়ার আলভেস তখন দুরন্ত ফর্মে। ছবি : সংগৃহীত
সেভিয়ার আলভেস তখন দুরন্ত ফর্মে। ছবি : সংগৃহীত

রাফায়েল বেনিতেজের 'অর্থকষ্ট'
রোনালদোর মতো দানি আলভেসকেও চেয়েছিল লিভারপুল। ব্রাজিলের এই রাইটব্যাক তখন মাত্র সেভিয়ার হয়ে নিজের জাত চেনানো শুরু করেছেন। লিভারপুলের তৎকালীন কোচ রাফায়েল বেনিতেজ আলভেসের জন্য আট মিলিয়ন (আশি লাখ) পাউন্ডও দিতে রাজি হয়ে যান। কিন্তু বাধ সাধে লিভারপুলের বোর্ড। একই সঙ্গে ডাচ ক্লাব ফেইনুর্দের স্ট্রাইকার ডির্ক কিউটকে আনার জন্যও চেষ্টা চলছিল। লিভারপুলের বোর্ড সাফ জানিয়ে দেয়, দুজনকে কেনার টাকা নেই বোর্ডের কাছে। একজন গোলশিকারির তখন বড্ড দরকার লিভারপুলে। বেনিতেজ তাই পরেরটাই বেছে নেন। ওদিকে আরও দুবছর সেভিয়ায় খেলে আলভেস নাম লেখান বার্সেলোনায়।

এখনো ইউনাইটেডের ওয়েবসাইটে এই খবরটা পাওয়া যাবে। ছবি : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ওয়েবসাইট
এখনো ইউনাইটেডের ওয়েবসাইটে এই খবরটা পাওয়া যাবে। ছবি : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ওয়েবসাইট


প্রিয় খেলোয়াড়েরা আছে ওখানে, তাই…
ওয়েলশের এই মিডফিল্ডারকে নিয়ে ২০০৮ সালে টানাটানি করছিল আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও এভারটন। র‍্যামসির তৎকালীন ক্লাব কার্ডিফ সিটি তখন ইউনাইটেডের একটা প্রস্তাবেও রাজি হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের ওয়েবসাইটেও ঘটা করে ইউনাইটেড জানিয়ে দিয়েছিল, র‍্যামসি আসছেন। কিন্তু শেষমেশ আর্সেনালের কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের প্রস্তাব ও গানারদের সাজঘরে প্রিয় খেলোয়াড়দের দেখে মাথা ঘুরে যায় তরুণ এই তারকার। পঞ্চাশ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে লন্ডনে চলে যান র‍্যামসি।

বোর্দোর জিদান। ছবি : উয়েফা
বোর্দোর জিদান। ছবি : উয়েফা

শেরউড থাকতে জিদান কেন?
১৯৯৫ সালে তখন মাত্রই প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। শিরোপা জিতেই বিশ্বের সেরা প্রতিভাদের দলে টানার জন্য মনোযোগ দেয় ক্লাবটি। নজরে আসে ফরাসি ক্লাব বোর্দোতে খেলা এক মিডফিল্ডার, জিনেদিন জিদান নাম। কিন্তু অখ্যাত এক বিদেশি তরুণের পেছনে তখন টাকা ঢালতে রাজি হননি ব্ল্যাকবার্নের সভাপতি জ্যাক ওয়াকার। 'টিম শেরউড থাকতে জিনেদিন জিদানকে কেন কিনব?' ফুটবলীয় রূপকথার অংশ হয়ে গিয়েছে তাঁর এই উক্তিটা।

ফ্যালকাও তখন রিভার প্লেটে। ছবি : এএফপি
ফ্যালকাও তখন রিভার প্লেটে। ছবি : এএফপি

ফ্যালকাও নয়, হেসকিকে চাই
২০০৮ সালের কথা। কলম্বিয়ার স্ট্রাইকার রাদামেল ফ্যালকাও তখন খেলছেন আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটে। কিন্তু ইংলিশ লিগের প্রতি তাঁর আগ্রহ দুর্নিবার। সে কারণেই অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন ফ্যালকাওয়ের মুখপাত্র। 'মাত্র পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে ফ্যালকাওকে কিনে নাও,' মুখপাত্রের প্রস্তাব ছিল এমন। এর আগে রিভার প্লেট থেকে কলম্বিয়ার আরেক স্ট্রাইকার হুয়ান পাবলো অ্যানহেলকে কিনেছিল ক্লাবটি। অ্যাস্টন ভিলার হয়ে বেশ ভালো খেলেছিলেন ওই তারকা। ওই কাহিনি দেখে ফ্যালকাও ও তাঁর মুখপাত্রের সাহস বেড়ে যায় একটু। কিন্তু একই সময়ে উইগান অ্যাথলেটিকের পোড় খাওয়া ইংলিশ স্ট্রাইকার এমিল হেসকিকে মনে ধরেছিল ভিলা কোচের। অখ্যাত বিদেশির চেয়ে অভিজ্ঞ দেশির ওপরে আস্থা রাখা যুক্তিযুক্ত মনে করল ভিলা। ব্যস, কপাল পুড়ল ফ্যালকাওয়ের। (ছবি : 9)
আসলেই কী পুড়েছিল? পরে ফ্যালকাও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে চলে যান। গিয়ে কী কী করেন, সবারই জানা।

ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে মিকেল। ছবি : সংগৃহীত
ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে মিকেল। ছবি : সংগৃহীত


ইউনাইটেডের জার্সি পরে যোগ দিলেন চেলসিতে
মিকেলের গল্পটা আরও চমকপ্রদ। নরওয়ের ক্লাব লিন অসলো তে খেলা এই নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডারকে কেনার জন্য লড়াই করছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি। ইউনাইটেডের স্কাউট জিম রায়ান তো একটু বাড়াবাড়িই করে ফেললেন। একদিন নরওয়েতে গিয়ে মিকেলকে ইউনাইটেডের জার্সি পরিয়ে ছবি তুলে আনলেন, সবাই ভাবল ইউনাইটেডের হয়ে মাঠে নামা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু মিকেলের মনে যে তখন চেলসির বসবাস! কারওর চাপে পড়ে ইউনাইটেডে নয়, বরং নিজের পছন্দ মতো চেলসিতেই যাবেন বলে গোঁ ধরলেন। তাতে কাজ হলো। পরের এক যুগ চেলসিতেই খেলেছেন।

ব্ল্যাকবার্নে না গিয়ে লেভানডফস্কি যোগ দেন ডর্টমুন্ডে। ছবি : এএফপি
ব্ল্যাকবার্নে না গিয়ে লেভানডফস্কি যোগ দেন ডর্টমুন্ডে। ছবি : এএফপি

লেভানডফস্কির উড়োজাহাজ-বিভ্রাট
মাত্র চল্লিশ লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে পোলিশ ক্লাব লেচ পোজনান থেকে ব্ল্যাকবার্নে আসা নিশ্চিত হয়েছিল স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কির। ব্ল্যাকবার্নে যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজেও চেপেছিলেন পোলিশ এই স্ট্রাইকার। কিন্তু আইসল্যান্ডের ওদিকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে উড়োজাহাজের সেই যাত্রা বাতিল হয়ে যায়। পরে লেভানডফস্কির আর ব্ল্যাকবার্নে যাওয়া হয়নি, যোগ দেন জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে।

রিয়ালের মিডফিল্ডার-খোঁজ
ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তখন দলে তারকা আনতে ব্যস্ত। একে একে রিয়াল মাদ্রিদে চলে এসেছেন জিনেদিন জিদান, লুইস ফিগো, ডেভিড বেকহাম, রোনালদো, মাইকেল ওয়েনের মতো তারকারা। সঙ্গে ইকার ক্যাসিয়াস, রবার্তো কার্লোস ও রাউল গঞ্জালেসরা তো ছিলেনই। তারকার এই ভিড়ে ক্লাবে থাকা ফরাসি রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ক্লদ ম্যাকেলেলেকে বড্ড বেমানান ঠেকল পেরেজের কাছে। চেলসির কাছে বিক্রি করে দিলেন এই পরিশ্রমী খেলোয়াড়কে। সভাপতির এমন সিদ্ধান্ত দেখে চমকে গিয়েছিলেন জিদানও, 'বেন্টলি গাড়ির ওপর একের পর এক রূপার প্রলেপ দিয়ে কী লাভ যদি আমার ইঞ্জিনটাই না থাকে?' বলেছিলেন ম্যাকেলেলের স্বদেশি এই কিংবদন্তি। বিক্রি করার পর পেরেজেরও হুঁশ হয়, বড্ড ভুল করে ফেলেছেন। একাদশে সব আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়, রক্ষণভাগকে আগলে রাখবে কে? দরকার ছিলে একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের। পেরেজ তাই পাগলের মতো ইংল্যান্ডে হাত বাড়ান, একটা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জন্য। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রয় কিন, আর্সেনালের প্যাট্রিক ভিয়েরা, দুজনই আরেকটু হলে চলে আসছিলেন মাদ্রিদে। কিন্তু শেষমেশ দুজনের কেউই ক্লাব ছাড়েননি। শেষমেশ এভারটনের ড্যানিশ মিডফিল্ডার টমাস গ্রাভেসেনকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পেরেজকে!

রিয়ালের জার্সি হাতে গ্রাভেসেন। ছবি : সংগৃহীত
রিয়ালের জার্সি হাতে গ্রাভেসেন। ছবি : সংগৃহীত