জীবন, নাকি জীবিকা?

প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে দুই ধরনের ভাবনা কাজ করছে ক্রিকেটারদের মধ্যে। ফাইল ছবি
প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে দুই ধরনের ভাবনা কাজ করছে ক্রিকেটারদের মধ্যে। ফাইল ছবি
লিগ নিয়ে দ্বিধায় ক্রিকেটাররা ক্রিকেটারদের কেউ কেউ বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের পর প্রিমিয়ার লিগ শুরু করা যায়। কারও মতে, আগে জীবন, তারপর খেলা

দুদিন আগে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসকে (সিসিডিএম) চিঠি দিয়ে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব অনুরোধ করেছে, ঈদের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন পুনরায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু করা হয়। তবে যাঁরা লিগটা খেলবেন, সেই ক্রিকেটারদের অনেকেই আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।
কেউ চাচ্ছেন মাঠে খেলা নামুক, আবার কারও ভয়, খেলতে গিয়ে যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে হয়! স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের পোশাকশিল্প, দোকানপাট ও কিছু অফিস খুলে দেওয়ার উদাহরণ সামনে এনে কোনো কোনো ক্রিকেটারের প্রশ্ন—তাহলে ক্রিকেট খেলতে সমস্যা কোথায়! প্রিমিয়ার লিগের খেলা না হলে ক্লাবের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যাবে না, এই দুশ্চিন্তা থেকে ঝুঁকি নিয়ে হলেও খেলতে চান তাঁরা।
আবার অনেকের মত, স্বাস্থ্যনিরাপত্তা সবার আগে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে খেলা শুরুর পক্ষে নন তাঁরা। জাতীয় দলে খেলেন না, প্রিমিয়ার লিগ এমন ক্রিকেটারদেরই আয়ের মূল উৎস। সে রকমই একজন ব্রাদার্সের অধিনায়ক মিজানুর রহমান ঈদের পরই খেলা চান, 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের পর প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পক্ষে আমি। টাকার সংকটটা মাথায় ভীষণ কাজ করছে। সবাই সচেতন থাকলে আশা করি কিছু হবে না। আর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্রিকেট খেলা খুবই সম্ভব।' প্রাইম দোলেশ্বরের পেসার কামরুল ইসলামের চিন্তা উল্টো। দেশে প্রতিদিন যেভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়ছে, তাতে কামরুলের কাছে জীবনের নিরাপত্তাই প্রধান হয়ে উঠেছে, 'লিগ শুরু হলেও দেখা গেল, তিন-চারটি ম্যাচ খেলার পর ক্রিকেটারদের কেউ সংক্রমিত হয়েছেন। তখন পুরো লিগ আবার স্থগিত হয়ে যেতে পারে।'
যতই বলা হোক, ক্রিকেটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব, তবু সংক্রমণের ঝুঁকি যে থেকে যায়, কামরুল যুক্তি দিয়েই তা তুলে ধরলেন, 'আমরা সবাই একই গাড়িতে মাঠে যাওয়া-আসা করি। এক ড্রেসিংরুম, এক ওয়াশরুম, এক ডাইনিং ব্যবহার করি। এটা ঠিক, টাকা একটা বড় ব্যাপার; তবে জীবনের চেয়ে বড় নয়। আক্রান্ত হলে এক–দুই মাস ভুগতে হতে পারে। দেখা গেল, পরের টুর্নামেন্টটাও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।'
ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ মুখ তুষার ইমরানের কণ্ঠে কামরুলের কথার প্রতিধ্বনি, 'করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারপর লিগ শুরু হোক। পোশাকশিল্প আর খেলা এক নয়। যেনতেনভাবে খেলা শুরু হোক, সেটি চাই না।'
শাহরিয়ার নাফীস অবশ্য জীবিকার সংকটকেই বড় করে দেখছেন। আরও অনেকের মতো বাঁহাতি এই ওপেনারও ঈদের পর প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পক্ষে, 'জুন-জুলাই কিংবা আগস্টেও না হলে ক্লাব কর্মকর্তারা বলতেই পারেন, আর লিগ হবে না! সেটি হলে একটা প্রিমিয়ার লিগ ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে যাবে। আর করোনাভাইরাসের ওষুধ, টিকা কবে আসবে; কত দিন এভাবে লকডাউন থাকবে সবাই? স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক দেশ আয়ের উৎস খুলে দিচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগও একইভাবে চালু করা উচিত।'
ভিন্ন মত আছে মার্শাল আইয়ুবের। তাড়াহুড়া করে খেলা শুরুর পক্ষে নন তিনি, 'অবশ্যই করোনা পরিস্থিতি আগে দেখতে হবে। আমাদের হাতে সময় আছে। জুন তো এখনো হাতেই। পরিস্থিতি বুঝে খেলা শুরু করলে ভালো হয়।' পারটেক্সের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলা 'ছক্কা মিলন'খ্যাত নাজমুল হোসেন নিজেও যেন বুঝতে পারছেন না কী করা উচিত, 'অবশ্যই স্বাস্থ্যনিরাপত্তার কথা আগে ভাবতে হবে। তবে দেশের সবকিছু যেভাবে খুলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, নিরাপদ থেকে যদি শুরু করতে পারি...। আর ঢাকা লিগে তেমন দর্শক হয় না, খেলা শুরু করাই যায়।'
প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় অনেক খেলোয়াড়ই দুশ্চিন্তায়। বিসিবির শর্ত অনুযায়ী দুটি ক্লাব এখনো খেলোয়াড়দের ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করেনি। লিগ স্থগিত হয়ে গেলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ যদি পাওনা বুঝিয়ে না দেয়, ক্রিকেটারদেরও তখন কিছু বলার থাকবে না। আর ক্রিকেটারদের দাবি অনুযায়ী এবার দলবদলও হয়েছে উন্মুক্ত। কাজেই ক্লাব টাকা না দিলে বিসিবির কাছে সেটি দাবি করারও সুযোগ নেই। খেলাই রোজগার ঠিক রাখার একমাত্র পথ। কিন্তু সেটা কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে—প্রিমিয়ার লিগের ভবিষ্যতের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ প্রশ্নই।