রিয়ালের এই কথা জানলে ভ্রু কুঁচকে যাবে

অপূর্ণতাগুলো এখনো পোড়ায় রিয়াল মাদ্রিদকে। ছবি: এএফপি
অপূর্ণতাগুলো এখনো পোড়ায় রিয়াল মাদ্রিদকে। ছবি: এএফপি
>বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ক্লাবের তালিকা করলে রিয়াল মাদ্রিদের নাম সবার ওপরের দিকেই থাকবে। তবুও এমন কিছু ক্লাব আছে, ক্লাব ফুটবলের সফলতম এই দল যাদের হারাতে পারেনি

রিয়াল মাদ্রিদের কী কোনো অপূর্ণতা আছে?
এমন বিদঘুটে প্রশ্নে চোখমুখ কুঁচকে ওঠাই স্বাভাবিক। স্পেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী লিগ জেতা দল, ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যকবার ইউরোপসেরা দলের অপূর্ণতা থাকে কীভাবে?
কিন্তু যুগের পর যুগ বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব হওয়া সত্ত্বেও খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন কিছু উদাহরণ আছে, যা রিয়ালকে এখনও অস্বস্তি দেয়। এমন বেশ কিছু ক্লাব আছে যাদের রিয়াল কখনো হারাতে পারেনি।
কোন ক্লাবগুলো? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

চেলসি :
মোট ম্যাচ : ৩
ড্র : ১
চেলসির জয় : ২

রিয়ালের সঙ্গে চেলসির প্রথম দেখা হয়েছিল সেই ১৯৭১ সালে। উয়েফা ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের ফাইনালে। গ্রিসের কারাইসকাকিস স্টেডিয়ামে ইংলিশ স্ট্রাইকার পিটার অসগুডের বাম পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে প্রথমে এগিয়ে যায় চেলসি। ম্যাচের নব্বই মিনিট, লন্ডনের দলটা তখন জয়ের সুবাস বেশ ভালোভাবেই পাচ্ছে, এমন সময় বাধ সাধলেন রিয়ালের স্প্যানিশ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ইগনাসিও জোকো। অতিরিক্ত সময়েও দুদলের কেউই গোল করতে পারেনি। ফলে ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচ, পরের সপ্তাহে আবারও নতুন করে ম্যাচটা হবে, সিদ্ধান্ত হয়। এবারও রিয়ালের মাথাব্যথার কারণ হন অসগুড। ৩৯ মিনিটে ওসগুডের গোলটার আগে অবশ্য আইরিশ সেন্টারব্যাক জন ডেম্পসি গোল দিয়েছিলেন, ঠিক ছয় মিনিট আগে। ৭৫ মিনিটে রিয়ালের প্যারাগুইয়ান স্ট্রাইকার সেবাস্তিয়েন ফ্লেইতাস ব্যবধান কমালেও আর গোল খায়নি লন্ডনের দলটা। চেলসির ইতিহাসের প্রথম ইউরোপীয় সাফল্য আসে ইউরোপের সবচেয়ে সফল ক্লাবকে হারিয়েই।

রিয়ালের সামনে চেলসিকে হারানোর পরবর্তী সুযোগ আসে ৩৭ বছর পর, উয়েফা সুপার কাপে। সেবারও ব্যর্থ তাঁরা। উরুগুয়ের মিডফিল্ডার গাস পোয়েতের গোলে হেরে বসেন রাউল-হিয়েরো-কার্লোস-সিডর্ফদের রিয়াল। এরপর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মুখোমুখি হয়নি দল দুটি।

থিয়েরি অঁরির আর্সেনালের কাছে হেরেছিল রিয়াল। ছবি: টুইটার
থিয়েরি অঁরির আর্সেনালের কাছে হেরেছিল রিয়াল। ছবি: টুইটার

আর্সেনাল:
মোট ম্যাচ : ২
ড্র :
আর্সেনালের জয় : ১

রিয়ালের'দুঃখ' লন্ডনের আরেক বিখ্যাত ক্লাব – আর্সেনাল। চেলসির চেয়ে আর্সেনালের বিপক্ষে এক ম্যাচ কমও খেলেছে তাঁরা। ওই দুই ম্যাচই ২০০৫-০৬ চ্যাম্পিয়নস লিগে। আর্সেনাল সেবার একরকম অদম্য। অঁরি, বার্গক্যাম্প, ফ্যাব্রিগাস, ক্যাম্পবেলদের আর্সেনাল তখন দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে চলেছে তাদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপার দিকে। সে পথেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল রিয়াল। পারেনি। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগে নিজেদের মাঠেই ১-০ গোলে হেরে বসে তাঁরা। থিয়েরি অঁরির ঝলকের সামনে নিরুপায় হয়ে ছিলেন জিদান-রোনালদো-বেকহামরা। পরের লেগে গোলশূন্য ড্রয়ের কারণে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়ে রিয়াল। পরে আর দেখা হয়নি দুদলের মধ্যে।

বোকা জুনিয়র্স:
মোট ম্যাচ : ১
ড্র :
বোকার জয় : ১

ক্লাব বিশ্বকাপের নাম তখন ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ। ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্স। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘর ভেঙ্গে দলে এনেছেন লুইস ফিগোকে, সঙ্গে আছেন রবার্তো কার্লোস, ক্লদ ম্যাকেলেলে, রাউল ও গুতির মতো তারকারা – কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কের আত্মবিশ্বাস তাই আকাশছোঁয়া। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে মিচেল সালগাদোর জায়গায় রাইটব্যাক হিসেবে খেলালেন ক্যামেরুনের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জেরেমিকে। তাতেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেল। প্রথম ছয় মিনিটে দুই গোল খেল রিয়াল, দুটোই জেরেমির ব্যর্থতায়। প্রথম গোলের ঠিক আগে ফাউল করে বল দিয়ে দিয়েছিলেন বোকার কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার মরিসিও সের্নার কাছে। জেরেমির ফেলে আসা জায়গায় ৩৭ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার হোসে বাসুয়ালদোকে দেখে তাঁর দিকে বল বাড়িয়ে দেন সের্না। বাম পায়ের দুর্দান্ত মাটিঘেঁষা ক্রসে বল চলে আসে স্ট্রাইকার মার্টিন পালের্মোর কাছে। ফলাফল, গোল। পরের গোলটির কৃতিত্ব শুধুই হুয়ান রোমান রিকুয়েলমের। গোটা ম্যাচে এই রিকুয়েলমেই ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন ফিগোদের ওপর। ৩০ গজের একটা দুর্দান্ত উড়ন্ত পাসে তিনি বল পাঠান সেই পালের্মোর কাছে। পালের্মোর গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি জেরেমি। ফলাফল, আরেকটি গোল। এর ছয় মিনিট পর বাঁ পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে রবার্তো কার্লোস ব্যবধান কমালেও আর জিততে পারেনি ম্যাচটা। বোকাকে হারানোর আর সুযোগও আসেনি রিয়ালের সামনে।

রিকুয়েলমের বোকা জুনিয়র্সকেও হারাতে পারেনি মাদ্রিদের ক্লাবটি। ছবি: টুইটার
রিকুয়েলমের বোকা জুনিয়র্সকেও হারাতে পারেনি মাদ্রিদের ক্লাবটি। ছবি: টুইটার

করিন্থিয়ানস:
মোট ম্যাচ : ১
ড্র :

বোকার সঙ্গে হারের প্রায় কয়েক মাস আগের ঘটনা এটা। ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে মুখোমুখি রিয়াল ও ব্রাজিলের ক্লাব করিন্থিয়ানস। ফরাসি তরুণ নিকোলাস আনেলকার গোলে প্রথমে এগিয়ে গেলেও ব্রাজিলের স্ট্রাইকার এদিলসনের জোড়া গোলে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। শেষ মূহুর্তে ওই আনেলকাই রিয়ালকে উদ্ধার করেন। এরপর আর এই দলের মুখোমুখি হয়নি রিয়াল।

নেকাসা:
মোট ম্যাচ : ১
ড্র :
নেকাসা জয় : ১


ওই একই আসরের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মেক্সিকান ক্লাব নেকাসার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল। রাউল গঞ্জালেসের গোলে রিয়াল এগিয়ে গেলেও পরে মেক্সিকান স্ট্রাইকার অগাস্তিন দেলগাদোর গোলে সমতায় ফেরে নেকাসা। পরে পেনাল্টিতে হেরে বসে রিয়াল।


ইপসউইচ টাউন:
মোট ম্যাচ : ২
ড্র :
ইপসউইচের জয় : ১

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে উয়েফা কাপের প্রথম রাউন্ডে মুখোমুখি হয় এই দুই দল। ইপসউইচের কোচ তখন কিংবদন্তি ম্যানেজার ববি রবসন। ইপসউইচের মাঠে প্রথম লেগে হেরে যায় রিয়াল, ডিফেন্ডার বেনিতো রুবিনানের আত্মঘাতী গোলে। পরের লেগে রিয়ালের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে পরের রাউন্ডের টিকিট কাটে ইপসউইচ।

অ্যাবার্ডিন:
মোট ম্যাচ : ১
অ্যাবার্ডিনের জয় : ১

তালিকায় যতগুলো ম্যাচের উল্লেখ করা হয়েছে, তর্কাতীতভাবে রিয়ালকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে এই ম্যাচটা। অ্যাবার্ডিনের বিপক্ষে হারটা ইউরোপীয়ান কাপের ফাইনালে যে!

প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল সেদিন। তারপুলিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল সুইডেনের নিয়া উলেভি স্টেডিয়ামটা। বারবার এসে রেফারিরা দেখে যাচ্ছিলেন, ম্যাচ শুরু করা যাবে কি না। পরে অবস্থার উন্নতি হলে সে মাঠেই শুরু হয় ইউরোপীয়ান কাপের ফাইনাল। প্রথম থেকেই আক্রমণে যায় অ্যাবার্ডিন। রিয়াল গোলরক্ষক অগুস্তিনের ভুলের সুযোগ নিয়ে স্কটিশ মিডফিল্ডার গর্ডন স্ট্রাশান বল বাড়িয়ে দেন স্ট্রাইকার এরিক ব্ল্যাকের কাছে। ২০ গজের শটে দলকে এগিয়ে দিতে ভুল করেননি ব্ল্যাক। এরপরেই কর্দমাক্ত মাঠের সুবিধা পায় রিয়াল। কাদার মধ্যে আটকে যাওয়া বল ধরতে গিয়ে রিয়ালের স্ট্রাইকার সান্তিলানাকে ফেলে দেন অ্যাবার্ডিনের গোলরক্ষক জিম লেটন। পেনাল্টিতে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান স্প্যানিশ স্ট্রাইকার হুয়ানিতো। নব্বই মিনিটে আর কোনো গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তখনই রিয়ালের বুকে ছুরি বসিয়ে দেন ব্ল্যাকের বদলি হিসেবে নামা স্ট্রাইকার জন হিউয়িট। আর অ্যাবার্ডিন জিতে যায় ইউরোপিয়ান কাপ!