করোনায় সরকারি সহায়তা অপ্রতুল

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। ফাইল ছবি
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। ফাইল ছবি
>ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য খেলার খেলোয়াড়দের সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনার এটিকে অপ্রতুল বলছে ফেডারেশনগুলো

করোনাকালে বেশির ভাগ ফেডারেশনই খেলোয়াড়দের পাশে নেই। তবে কিছু ফেডারেশন খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়েছে। এগিয়ে এসেছে সরকারও। ৬ মে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান জানিয়েছেন, এক হাজার ক্রীড়াবিদকে সরকার ১০ হাজার টাকা করে করোনা সহায়তা দেবে।


মন্ত্রীর ঘোষণায় 'না পাওয়ার মধ্যেও কিছু পাওয়ার' আশা জাগে করোনাকালে কষ্টে থাকা ক্রীড়াবিদদের মনে। তবে দেশের ৫৩টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২৭টিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল সহায়তার জন্য। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিটি খেলার ৩৭ জন খেলোয়াড়ের সহায়তা পাওয়ার কথা। কিন্তু পরে পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৩টি খেলাকে সহায়তার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য এখনই ১ হাজার খেলোয়াড়কে ১০ হাজার টাকা করে ১ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে না। প্রথম ধাপে ৩৩টি খেলার খেলোয়াড়দের দেওয়া হবে ৬৫ লাখ টাকার মতো।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সচিব মাসুদ করিম জানান, 'আপাতত প্রথম দফায় ৬০০-৬৫০ জনের মতো খেলোয়াড়কে সহায়তা দেব আমরা। ঈদের আগেই খেলোয়াড়দের ব্যাংক হিসাবে এই টাকা পাঠানো হবে। জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ৬৫ লাখ টাকার মতো যাবে। তবে মোট বাজেট ১ কোটি টাকাই আছে। ধাপে ধাপে বাকিটা দেওয়া হবে।' তবে বাকি এই ৩৫ লাখ টাকা কীভাবে দেওয়া হবে, সেটি পরিষ্কার নয়।


ক্রিকেট বোর্ড নিজেরাই খেলোয়াড়দের সহায়তা করছে। তাই সরকারি সহায়তার তালিকায় ক্রিকেট নেই। ফুটবল, হকিসহ বাকি সব খেলাই আছে তালিকায়। এনএসসি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কোন ফেডারেশন কতজন খেলোয়াড়ের নাম জমা দেবে। ৬৫০ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ফুটবলে, ১০০ জন। যদিও সরকারি সহায়তার জন্য ২০০ ফুটবলারের তালিকা করেছে বাফুফে। যাঁর ১৭৫ জনই পুরুষ, ২৫ জন নারী। এই খেলোয়াড়েরা বাফুফের অধীনে থাকা ক্লাবভুক্ত খেলোয়াড় নন। একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের খেলোয়াড়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ জনের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে হকি ফেডারেশন। এরপর সর্বোচ্চ ২৫ আর সর্বনিম্ন ১০ জন করে খেলোয়াড়ের নাম দিতে পারবে অন্য ফেডারেশনগুলো।


জানা গেছে, বেশির ভাগ ফেডারেশনই পেয়েছে ১৫ জন করে খেলোয়াড়ের জন্য সহায়তা। চাহিদার তুলনার এটিকে অপ্রতুল বলছে ফেডারেশনগুলো। অ্যাথলেটিকস ফেডরেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব বলেছেন, 'আমরা পেয়েছি মাত্র ২৫ জন। অথচ আমাদের কাছে আবেদনই আছে দুই শতাধিক। কাকে রেখে কাকে বাদ দেব! সরকারের উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম বেঁধে দেওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি।' অ্যাথলেটিকসে ৩৬টি ডিসিপ্লিন। একটি সংস্থাতেই ৫০-৬০ জন খেলোয়াড়। এর মধ্যে সব মিলিয়ে মাত্র ২৫ জন সহায়তা পেলে বাকিদের কী হবে! অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রশ্নটা তাই যৌক্তিকই।

বিজএমসির ২৬৫ জন খেলোয়াড় চাকরি হারিয়েছেন। গ্রামগঞ্জে অনেক খেলোয়াড়ের উনুনেও হাঁড়ি চড়ছে না। এ অবস্থায় সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারোত্তলন ফেডারেশনের সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তবে খেলোয়াড় কোটা নিয়ে তিনিও হতাশ, '১০০০ ক্রীড়াবিদের মধ্য আমরা পেয়েছি মাত্র ১৫ জন। অথচ গত ৩টি এএসএ গেমসেই সোনা জিতেছে ভারোত্তোলন।' হ্যান্ডবল আগে পেয়েছে ১৫ জন। পরশু ৫ জন বাড়ানো হয়েছে। তারপরও কোটা বণ্টন নিয়ে অসন্তুষ্ট হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুর, 'ফুটবলকে তো ফিফা টাকা দেয়। সরকারি সহায়তায় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত ছিল অনগ্রসর খেলাগুলোর।'

এসব অভিযোগের ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান প্রথম আলোকে বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এই ১ কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। করোনা সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। তাই ইচ্ছা থাকলেও আমাদের পক্ষে বাড়তি কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত এটা দিয়েই শুরু করছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি টাকা চেয়েছি। আমরাও চাই যত বেশিসংখ্যক ক্রীড়াবিদের পাশে থাকতে।' ওদিকে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী ফাউন্ডেশন সারা দেশের সাড়ে ১ হাজার ১০০ ক্রীড়াবিদ, কোচ, সংগঠক, এমনকি সংকটে থাকলে ক্রীড়া সাংবাদিককেও মাসে ২ হাজার টাকা করে ভাতা দেবে। তৃণমূলে মাসিক ভাতা এই প্রথম। প্রথমে ১২ মাসের ২৪ হাজার টাকা একবারে দিয়ে দেওয়া হবে সবাইকে। অনলাইনে আবেদন চাওয়া হলে কিছু নামও এসেছে। জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে একটা তালিকা করতে। এই খাতে পৌনে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে বলে জানিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।