শোয়েব আখতারকে হাস্যকর বানিয়ে দিচ্ছে পরিসংখ্যানও

পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার। ছবি: এএফপি

আইসিসিই বিপদে ফেলল শোয়েব আখতারকে। অতীত ও বর্তমান ক্রিকেটারদের মিলিয়ে মোট ২০জনের প্রতিদ্বন্দ্বী জোড়া বেছে টুইটটা না করলে শোয়েব আখতার অমন দম্ভ দেখাতেন না। আর পরিসংখ্যানের খোঁজও মিলত না। 'গতি দিয়ে সব উড়িয়ে দেব' বলা শোয়েবকে ভুল প্রমাণ করতে হাজির হচ্ছেন সবাই।

আইসিসির টুইট রি-টুইট করে শোয়েব দম্ভোক্তি প্রকাশ করেন, 'এমনকি এখনো, তিনটি শক্ত বাউন্সার দিয়ে চতুর্থ বলে স্টিভেন স্মিথকে আউট করতে পারব।' ৪৪ বছর বয়সে শোয়েবের এমন কথায় হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে গতি আর সুইং হারিয়ে দল থেকে ছিটকে পড়া এক পেসার এখন স্মিথকে আউট করবেন, এটা মানতে পারছিলেন না কেউ। এ টুইট দেখে আইসিসিও হাসি চাপাতে পাড়েনি।

শোয়েব আবার এতে রাগ করেছেন, নিজের সেরা সময়ের কিছু ভিডিও দিয়ে দেখিয়েছেন ক্ষমতা। আগের টুইটেই বলেছিলেন এই সময়েই পারবেন স্মিথকে আউট করতে। আইসিসির খোঁচায় নিজের সেরা মুহূর্ত খুঁজে দেখাতে হয়েছে সাকল্যে ১৭৮ টেস্ট উইকেট পাওয়া শোয়েবকে। কিন্তু পরিসংখ্যান যে শোয়েবকে তাতেও রক্ষা পেতে দিচ্ছে না। বলে দিচ্ছে, সেরা সময়ের শোয়েবেরও বেগ পেতে হতো স্মিথকে আউট করতে।

গতি আর বাউন্সারে স্মিথকে তিন বলে কাপিয়ে চতুর্থ বলে আউট করবেন বলেছিলেন শোয়েব। পরিসংখ্যান বলছে, ঘটে বুদ্ধি না থাকলে ওসবে কাজ হবে না। কারণ, শুধু গতি বাউন্সার দিয়ে স্মিথকে কাবু করা যায় না। বিশ্বাস না হলে জফরা আর্চারকে জিজ্ঞেস করলেই হয়। গত অ্যাশেজে,মাথায় বল লাগিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিয়েছিলেন স্মিথকে। গতি আর বাউন্সারে অস্ট্রেলিয়ার সব ব্যাটসম্যানকে নাকানি চুবানি খাইয়েছেন। কিন্তু স্মিথকে পুরো সিরিজে একবারও আউট করা হয়নি তাঁর।

আর্চার একমাত্র উদাহরণ নন। সত্তুরোর্ধ্ব টেস্ট খেলেও স্মিথের গড় এখন ৬৩। কমপক্ষে ২০ ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর ওপরে আছেন শুধু একজন। অনতিক্রম্য ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বেড়ে ওঠা বলে স্পিনারদের বিপক্ষে স্মিথের গড়টা একটু কম, ৪৮ এর মতো। এর মানে পেস বোলারদের বিপক্ষে তাঁর গড়টা ৬৩ এর অনেক বেশি।

শোয়েব আখতার দাবি করতে পারেন, তিনি তো গড়পড়তা পেসার নন। তাঁর গতি ঘন্টায় ১৪০ কিমির ওপর ছিল ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ে। সে ক্ষেত্রে শোয়েবের জন্য দুঃসংবাদ, বলের গতি যত বাড়ে, স্মিথ তত স্বচ্ছন্দ। ক্যারিয়ারে এখ পর্যন্ত ২৩৭টি বল খেলেছেন স্মিথ যার গতি ১৪০ কিলোমিটারের বেশি ছিল এবং তা স্টাম্প থেকে ৯ মিটার দূরে পিচ করেছিল। সহজ কথায় গতিময় বাউন্সার ছিল। এই ২৩৭ বলে ওয়ানডে গতিতে ১৯১ রান করেছেন স্মিথ। আউট হয়েছেন একবার।

অর্থাৎ শোয়েবের হুমকি দেওয়া চার বলের ওই সমীকরণে স্মিথ আউট তো হতেনই না, বরং ওয়ানডে ধাঁচে মার লাগাতেন শোয়েবকে। ২০০৬ সালের পর গতিময় বাউন্সারে স্মিথের মতো স্বচ্ছন্দ নন কেউ।
এটা ঠিক বলের গতি ১৪০কিলোমিটার অতিক্রম করলেই স্বাভাবিক ব্যাটসম্যান বিপাকে পড়েন। এ কারণেই তো পরিসংখ্যান বলছে, ১৪০ কিলোমিটার গতির ওপরের বলে ব্যাটসম্যানদের গড় ২৮- এ নেমে আসে। কিন্তু স্মিথ অনন্য এ কারণে গতিময় বলে তাঁর গড়টা ১৯১-তে।

শোয়েব চাইলে আবার নতুন যুক্তি টানতে পারেন। ক্যারিয়ারে খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার গতির ওপরে বল করেছেন।আইসিসির টুইট তো ছিলই ক্যারিয়ারে মধ্যগগনের ফর্ম বিবেচনা করে। ১৪০ কিলোমিটার আর ১৫০ কিলোমিটার গতির মাঝে যে তফাৎ আছে, সেটা সবাই জানেন। প্রায় প্রতিটি টেস্ট দলেই ১৪০ কিলোমিটার গতি তোলা বোলার আছেন। কিন্তু ১৫০- বল করতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই হাতে গোনা কয়েকজন। তো সেরা ফর্মের শোয়েব যদি টানা কিছু ১৫০ কিলোমিটার গতির বল করেন, তখন?

পরিসংখ্যান এ ক্ষেত্রেও দুঃসংবাদ জানাচ্ছে। ১৪০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে ব্যাটসম্যানদের গড় ২৭.৬৪, আর সেটা ১৪৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটার হলে একটু বেড়ে হচ্ছে ২৭.৬৫। গতি ১৫০ কিলোমিটার পার হলেই ব্যাটসম্যানদের গড় অনেকটা বেড়ে ২৮.৩৭ হচ্ছে। এই গড় সাধারণ ব্যাটসম্যান ও টেলএন্ডারদের হিসেবে এনে। যেখানে গতিতে ভয় পাওয়া ব্যাটসুম্যানদের গড়ই ১৫০ পেরোলে বেড়ে যায়, সেখানে ব্র্যাডম্যানের সর্বকালের সেরা রেটিং ছোঁয়ার কাছাকাছি চলে যাওয়া স্মিথের গড় যে আরও বাড়ে, সেটা প্রায় নিশ্চিত।

আর শুধু গতিতে যে কাজ হয় না, সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে আরেকটি তথ্য। ২০০৬ সালের পর থেকে ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতির ওপরে অন্তত ৫০ বল খেলেও আউট হননি চার ব্যাটসম্যান। এদের তিনজনের নাম চমক জাগায় না। ধীরস্থির ব্যাটসম্যান হিসেবে হাশিম আমলা, মিসবাহ-উল-হক ও উসমান খাজার খ্যাতি বেশ। অন্য নামটি চমকে দিতেই পারে, ঋষভ পন্ত!