নিয়মের ডান্ডাবেড়ি পরে ফিরছে জার্মান ফুটবল

কাল থেকে মাঠে ফিরছে বুন্দেসলিগা। ছবি: বুন্দেসলিগা টুইটার পেজ
কাল থেকে মাঠে ফিরছে বুন্দেসলিগা। ছবি: বুন্দেসলিগা টুইটার পেজ

দুই মাসেরও বেশি সময় ফুটবল না দেখতে পাওয়া তৃষিত চোখের অপেক্ষা বুঝি ফুরোল। আর এক দিনের অপেক্ষা, কাল মাঠে ফিরছে জার্মান বুন্দেসলিগা। তবে ফিরছে অনেক নিয়মের কড়াকড়ি নিয়ে।

জার্মান ফুটবল লিগ (ডিএফএল) বুন্দেসলিগা ফেরানোর পরিকল্পনায় কী কী নির্দেশনা আছে খেলোয়াড়-রেফারি-কোচসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য, সেটি নিয়ে ৫১ পৃষ্ঠার একটা নির্দেশিকা দিয়েছে। টিম হোটেলে থাকা থেকে শুরু করে বাসে কীভাবে আসবেন, খেলার সময় বদলি খেলোয়াড়েরা কী করবেন, গোল হলে কী করা যাবে, কী করা যাবে না...সবই স্পষ্ট করে লেখা সেখানে।

কী কী নিয়ম থাকছে? প্রথমত, টেস্টিং। ডিএফএলের পরিকল্পনার মূল অংশে থাকছে খেলোয়াড়-কোচসহ ক্লাবের অন্যদের পাইকারি করোনা টেস্ট। অন্তত সপ্তাহে দুবার টেস্ট করা হবে, আর খেলার আগের দিন টেস্ট আবশ্যক। কারও টেস্টের ফল পজিটিভ এলেই তাঁকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে রাখা হবে। তবে একজনের পজিটিভ এলে পুরো দলকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত ক্লাবটি যে অঞ্চলের সেই রাজ্য প্রশাসনের।

দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, ম্যাচ কর্মকর্তা, সংবাদকর্মী, ফটোগ্রাফার, নিরাপত্তাকর্মী—সব মিলিয়ে মাত্র ৩০০ জন থাকবেন। শূন্য গ্যালারিতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকবেন সাংবাদিক ও টিভির ক্যামেরার দায়িত্বে থাকা লোকজন। স্টেডিয়ামের বাইরে নিরাপত্তাকর্মীরা থাকবেন, যাতে দর্শক স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় করতে না পারেন।

এ তো গেল ম্যাচের সময়ে, ম্যাচের আগে-পরেও তো অনেক নিয়ম মানার আছে! দলগুলো কয়েকটি বাসে ভাগ হয়ে আসবে। বাসে প্রত্যেকের মধ্যে অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব মেনে বসতে হবে, মুখে থাকবে মাস্ক। ড্রেসিংরুমেও সামাজিক দূরত্ব মেনে বসতে হবে। ম্যাচের আগে হাত মেলানো, টিম ফটোসেশনের রীতি এখন ভুলে যেতে হবে।

আর খেলা শুরু হওয়ার পর? মাঠে থাকা খেলোয়াড় আর রেফারিদের মাস্ক পরার দরকার নেই। তবে মাঠের বাইরে আর সাইডবেঞ্চে যাঁরা থাকবেন, সবার মাস্ক থাকতেই হবে। ম্যাচ বলগুলোকে কিছুক্ষণ পরপর জীবাণুমুক্ত করা হবে। ফুটবলে শারীরিক সংযোগ হবেই—খেলাটাই এমন, কিন্তু খেলোয়াড়দের বলে দেওয়া আছে, এর বাইরে শারীরিক সংযোগ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে। আর গোল হলে আগের মতো জড়াজড়ি-আলিঙ্গনের তো প্রশ্নই আসে না। নির্দেশিকায় লেখা, গোল উদ্‌যাপনে 'কনুই বা পায়ে-পায়ে ঠোকাঠুকিতে সীমাবদ্ধ রাখলেই ভালো।'

কিন্তু মাঠে তো সরাসরি সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা ক্যামেরাম্যান থাকবেন, সাংবাদিকেরাও থাকবেন। তাঁদের জন্যও নির্দেশনা আছে। সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্নকর্তা ও ফুটবলারের মধ্যে প্লাস্টিক স্ক্রিন দাঁড় করাতে বলা হচ্ছে। প্রতি ম্যাচে সাংবাদিক থাকবেন সব মিলিয়ে দশজন। কোনো সংবাদ সম্মেলন হবে না। ম্যাচের পরে যে 'মিক্সড জোনে' খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন সাংবাদিকেরা, সেটি এখন বন্ধ থাকবে।

আর অতিথি দলের জন্য নির্দেশনা, পারলে আগে থেকে পুরো হোটেল বা সম্ভব না হলে হোটেলের একটি ফ্লোর ভাড়া করে রাখতে। খেলোয়াড়েরা আসার আগেই হোটেলকে জীবাণুমুক্ত করা হবে। খেলোয়াড়েরা হোটেলে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না, এমনকি খাবার সময়ও সতীর্থদের মধ্যে দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

আর ম্যাচের দিনগুলোর আগে-পরে? খেলোয়াড়েরা বা তাঁদের পরিবারের কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না, কেউ তাঁদের বাড়িতে আসতে পারবেন না।

বেশ কড়াকড়িই বটে! বলতে পারেন আগামীকাল থেকে মাঠে ফিরছে প্রাণহীন বুন্দেসলিগা!