রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতে হয়

বাংলাদেশের দাবার প্রাণ নিয়াজ মোরশেদ। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের দাবার প্রাণ নিয়াজ মোরশেদ। ছবি: প্রথম আলো
>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-

আমার ২১ বছর বয়সী জমজ দুই ছেলে কানাডায় আছে তাদের মায়ের সঙ্গে। আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বেশ আগেই। তবে ছেলেদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। প্রতি বছর গ্রীস্মে আমি ওদের বেড়াতে নিয়ে যাই। গত বছর যেমন গিয়েছিলাম মালয়েশিয়া, জর্জিয়া, স্পেন, পর্তুগালে। কিন্তু এবার ওদের সঙ্গে দেখা হবে না বলে অনেক খারাপ লাগছে। অনেক মিস করছি দুই ছেলেকে।

কবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আসবে, কবে ছেলেদের সঙ্গে দেখা হবে...এসবই এখন ভাবছি। সিএনএন বা অন্য মিডিয়ায় ভ্যাকসিনের খবর দেখলেই কান খাড়া রাখি। একটা সুখবর শুনতে চাই। হয়তো সব ঠিকঠাক থাকলে পরের গ্রীস্মে ছেলেদের সঙ্গে দেখা হতে পারে। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।

আমার দুই ছেলের একজন মাহারান মোরশদে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জিদান মোরশেদ কানাডার ইনভিভার্সিটি অব টরোন্টোর ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা তৃতীয় বর্ষ শেষ করছে। লেখাপড়ায় দুজনই বেশ ভালো, যেটা আমার খুব ভালো লাগে। মাহারান আবার অনেক ভাষা জানে। ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান, স্প্যানিশ ভাষায় বেশ দক্ষ। চীনা ভাষাও পারে। স্প্যানিশদের সঙ্গে ও যখন স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে, এটা-ওটা বলে মজা করে, আমি সেভাবে বুঝে উঠতে পারি না। এমনিতে হয়তো 'হাউ আর ইউ' জাতীয় দুই একটা বুঝি। এই বোঝার ঘাটতিটা যেন না হয় তার জন্য এখন অনলাইনে স্প্যানিশ ভাষা শিখছি (হা হা হা)। বলতে পারেন, করোনাকালে আমি স্প্যানিশ ভাষা শিখতে উঠে পড়ে লেগেছি।

মজার ব্যাপার কী, সাধারণত বাবাকে দেখে ছেলেরা উদ্বুদ্ধ হয়, ভাষা শেখার ব্যাপারে আমি উল্টো উদ্ধুদ্ধ হয়েছি আমার ছেলেকে দেখে! এটা একটা দারুণ সুখের ব্যাপার। প্রাসঙ্গিকভাবে বলি, বিভিন্ন ভাষা শিখতে আমার ভালোই লাগে। আমি তার্কিশ, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান ভাষা অল্প অল্প বুঝি। তবে সেটা ছেলের তুলনায় কিছুই না।

আমার শখ আসলে অনেক। যেমন শখে গান করি অনেক আগে থেকেই। এখনো করছি। গান লিখেছিও আগে। আমার দুটি মিউজিক অ্যালবাম আছে। অ্যালবাম বের হয়েছে সেই নব্বই দশকে। এমনিতে স্রোতা হিসাবে ইংলিশ গান খুব একটা পছন্দ করি না। কেন জানি মনে হয় ইংলিশ গানে খুব একটা মেলোডি থাকে না। যেটা থাকে স্প্যানিশ, অ্যারাবিক বা আরও কিছু গানে।

আমি লিখতেও ভালোবাসি। এটা আমার পছন্দের একটা কাজ। আর এখন লেখার জন্য আদর্শ সময়। তবে লেখাটা সেভাবে হয়ে উঠছে না। তারপরও করোনার ঘর বন্দি জীবনেও সময় কোন ফাঁকে কেটে যায় টেরই পাই না। একা থাকি, ঘরের সব কাজই করি। কদিন আগে যেমন এসি ঠিক করলাম নিজেই। রান্না করতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু সমস্যা হলো শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। তাই হাঁটার জন্য একটা ইলিপটিক্যাল মেশিন কিনেছি কদিন আগে।

যেহেতু আমি দাবাড়ু, অতি অবশ্যই দাবা খেলাটা অনুসরণ করি নিয়মিত। তা ছাড়া নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখি। ভয়ের ছবি দেখা হয় বেশি। কিন্তু এরপর রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতে হয়, এই এক বিপদ! কদিন আগে যেমন হয়েছে, ভারতের হিন্দি ভাষায় 'পারি' ছবিটা দেখে রাতে তো আর বাতি নিভিয়ে ঘুমাতে পারছি না! বিরাট কোহলির বউ আনুশকা শর্মা এই ছবিতে ভূতের ভূমিকায় অভিনয় করেছে। ভয়ই লেগেছে ছবিটা দেখে।

আমার শ্বাসকষ্ট আছে ছোট থেকেই। তাই বুঝতে পারি কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের অবস্থা। এই ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে। দম নিতে ভীষণ কষ্ট হয়। আমারও এই সমস্যাটা রয়ে গেছে। হয়তো সেটা কোভিড-১৯ নয়, অন্য কোনো ভাইরাস। তবে ধরনটা একই রকম। কোভিডে আক্রান্ত হলে প্রথমে হয়তো বুঝতে পারবেন না। ১০-১২ দিন পর ভাইরাসটি তীব্র আক্রমণ শুরু করলে তখন আর আটকানো কঠিন। তাই এই করোনাকালে আমাকে একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হচ্ছে। সবাই নিরাপদে থাকবেন, এই প্রত্যাশাই করি।