আমার শুটকি ভর্তা খেলে পাগল হয়ে যাবেন

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাসআক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এইসময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলেদিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
মারিয়া মান্দা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
মারিয়া মান্দা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

জীবনে প্রথমবারের মতো এবার লিগ খেলার সুযোগ হয়েছে। ক্লাব দলের হয়ে খেলে আলাদা একটা আনন্দ পাচ্ছিলাম। নতুন অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সময়টা আরও ভালো যাচ্ছিল কারণ প্রতি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জয় পাচ্ছিল আমাদের দল বসুন্ধরা কিংস। এত দিনে হয়তোবা আমরা লিগ শিরোপাও জিতে যেতাম। কিন্তু হঠাৎ করে করোনাভাইরাস চলে আসায় খেলা স্থগিত হয়ে গেল। এই বছর হয়তো আর খেলাই হবে না। আমরা খেলার মানুষ , খেলা না থাকলে কী আর ভালো লাগে!

প্রায় দুই মাস যাবত ময়মনসিংহে আমাদের বাড়িতে আছি। ২০১৩-১৪ সালের পর এই প্রথম টানা এতদিন বাড়িতে থাকা। খেলা নিয়ে ব্যস্ততায় বাড়িতে থাকার এমন সুযোগ আমাদের সব সময় আসে না। অনেক সময় তো ধর্মীয় উৎসবেও বাড়িতে আসতে পারিনা। করোনাকালীন ছুটির সুযোগে পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে পারছি। বাড়ি থেকে তেমন বের হই না। বাড়ির মানুষের বাইরে কারও সঙ্গে মেলামেশা করা হয় না। করোনা থেকে বাঁচতেই এটা করা। এখন নিরাপদ থাকাটাই আগে।

আপনার জানেন আমাদের কলসিন্দুর এলাকাতেই অনেক নারী ফুটবলারদের বাড়ি। আগে বাড়িতে এলে আমরা সবাই একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতাম, স্কুলের মাঠে এক সঙ্গে অনুশীলন করতাম। মাঝে মধ্যে নিজেরা পিকনিকের আয়োজন করতাম। সবার পরিবারের সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক। কিন্তু এবার কারও বাড়িতে যাওয়া হয়নি। কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাতও নেই। করোনার জন্য সব বাদ দিয়েছি আমরা। ফোনে মাঝে মধ্যে কথা হয়, এই যা।

সকাল থেকেই বাড়ির অনেক কাজ করি। রান্না-বান্না থেকে শুরু করে ঘর-দোর পরিষ্কার, ফসলাদি ঘরে তোলা-সবই। মা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকলে আমিই বাড়ির রান্নার কাজটা করি। আমার রান্নার হাতের প্রশংসা বাড়ির সবাই করেন। আমার বানানো শুটকি ভর্তা খেলে তো আপনারা পাগলই হয়ে যাবেন! ভুনা খিচুরি রান্নাটাও খুব ভালো হয়। সুযোগ পেলে এই দুইটি খাবারই আমি বেশি করি।

আমি এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। খেলার জন্য সারা বছর তেমন পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি। এই সুযোগে লেখাপড়াটাও একটু করার চেষ্টা করছি। আসলে পড়াশোনা না করতে করতে মাথায় এখন আর কিছু ঢুকতে চায় না। তবে পরীক্ষা দিব, এই ভাবনা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন ভালোভাবে পাশ করতে পারি।

অনুশীলনটা কম হচ্ছে। বাড়ির পাশে ছোট জায়গায় একটু দৌড়াদৌড়ি করি। ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য কোর অনুশীলন বেশি করি। জাতীয় দলের কোচ ছোটন স্যার ও ক্লাবের কোচ শরিফা অদিতি আপুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। এই সময়ে এর বেশি কিছু করারও তো সুযোগও নেই।

আমাদের সবারই এখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। হঠাৎ করে এমন অবস্থা, মানিয়ে নেওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু অন্য কিছু তো করারও নেই। আমরা মাঠের মানুষ। ঘরে বসে থাকা আমাদের জন্যও খুব কষ্টের কাজ। কিন্তু এটাই পরিস্থিতির দাবি। আমরা সবাই ঘরে থাকলে যদি দেশ ভালো থাকে, তাহলে ঘরেই থাকি সবাই।