জামাল ভূঁইয়ার ভক্ত আলিয়া ভাট

বাংলাদেশ ‍জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও আলিয়া ভাট। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশ ‍জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও আলিয়া ভাট। ছবি: ফেসবুক

ভারতীয়দের হৃদয় ভাঙতেই গত অক্টোবরে কলকাতায় গিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। সল্টলেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ওই ম্যাচে জিততে জিততেও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করে জামাল ভূঁইয়ারা। ম্যাচের ৮৭ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ ১ পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরলেও অনেক ভারতীয় দর্শকের হৃদয় জয় করেছিল সেদিন। এমনকি বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট।

ফুটবল ফেডারেশনের লাইভ ফেসবুক আড্ডায় সেই গল্পটা আজ শুনিয়েছেন জামাল, 'আমরা কলকাতায় একই হোটেলে ছিলাম। লবিতে দাঁড়িয়ে একদিন এক সুন্দরী মেয়েকে দেখলাম। কিন্তু উনি যে আলিয়া ভাট তা আমি জানতাম না। পরে শুনি, উনি আমার খেলার অনেক বড় ভক্ত। আমাকে দেখতেই নাকি লবিতে এসেছিলেন। আমার খেলা দেখে অনেক প্রশংসা করেছিলেন।'

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে ডেনমার্কে মা-বাবার কাছে ফিরে যান জামাল। সেখান থেকেই লাইভ আড্ডায় যোগ দেন আজ। জামালের প্রাণবন্ত আড্ডায় উঠে আসে অনেক বিষয়। ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ড্রয়ের কষ্টের অভিজ্ঞতা যেমন বলেছেন, তেমনি জাকার্তায় সর্বশেষ এশিয়ান গেমসে কাতারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তোলার সুখস্মৃতিও ভাগাভাগি করেছেন। কথা বলেছেন সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে। প্রিয় বুট, প্রিয় খাবার, ফিটনেস, জাতীয় দলে অভিষেকের গল্প, নিজের লুকোনো ছবি আঁকার প্রতিভা, কোনো গল্পই বলতে ভোলেননি।

আড্ডার বেশিরভাগ জুড়েই সঞ্চালক বাফুফে কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ অন্দরমহলের জামালকে টেনে আনার চেষ্টা করেন। ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের মিডফিল্ডার।

বিমান থেকে কলকাতায় পা রাখতেই ভারতের দর্শক, স্থানীয় সাংবাদিকেরা কিভাবে বাংলাদেশকে উপেক্ষা করেছে সেই কষ্টের কথা বলেন জামাল, ' আসলে ওই ম্যাচ নিয়ে যে কতটা উত্তেজনা ছিল তা ওখানে গিয়েই টের পেয়েছি। কলকাতায় যখন নামি তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে, তোমরা তো ৩-৪ টা গোল খাবে, এটাকে কিভাবে দেখছো। আবার পরদিন সংবাদ সম্মেলনেও একই প্রশ্ন। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ভারতীয়দের হৃদয় ভাঙতেই এখানে এসেছি। সবাই তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল।'

সল্টলেকের উপচে পড়া ভারতীয় দর্শকের সামনে সেদিন বুক চিতিয়ে লড়েছিল বাংলাদেশ। সাদ উদ্দিনের গোলের উৎসও ছিলেন জামাল। কিন্তু শেষ মিনিটে হওয়া ড্রয়ের পর কিছুতেই ফলটা মানতে পারেননি তিনি, 'আমি ড্রেসিংরুমে গিয়ে অনেক চিৎকার চেচামেচি করেছিলাম। আসলে ম্যাচের সময় আমি বারবার ঘড়ি দেখছিলাম। ৮৫ মিনিটে ভাবলাম, আর তো ৮ মিনিট হবে ম্যাচ। জিতেই যাচ্ছি। কিন্তু গোল খাওয়ার পর আমার কি যে কষ্ট লাগে। সত্যি আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল।'

ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জামালের। বাবা মা ষাটের দশকে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে বসত গড়েন ডেনমার্কে। কিন্তু নাড়ির টানে জামাল ফুটবল খেলতে আসেন বাংলাদেশে। আর এখন তো রীতিমতো বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টারবয় তিনি। কখনোই ভাবেননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হবেন, 'সাত বছর ধরে এখানে খেলছি। প্রথম যেদিন বাংলাদেশের জার্সি পরি, একটু স্নায়ুচাপে ছিলাম। জাতীয় সঙ্গীত বাজতেই আমার শরীরের সব লোম, মাথার চুল খাড়া হয়ে গিয়েছিল। আমি খুব ভাগ্যবান যে বাংলাদেশ দলে খেলছি। জীবনে কখনো কল্পনাই করিনি যে এই দলের অধিনায়ক হবো আমি।'

শুরুতে স্ট্রাইকার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন জামাল, 'ব্রাজিলের রোনালদো ছিলেন আমার স্বপ্নের নায়ক। ওকে দেখে স্ট্রাইকার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে বুঝলাম মাঝমাঠই আমার আসল জায়গা।'

করোনার এই দুঃসময়ে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বললেন জামাল। মেনে চলতে বললেন স্বাস্থ্যবিধি। আড্ডার শেষ পর্যায়ে দর্শকদের ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জামাল।