সাকিব গুনছেন দুই রকম সময়ই

আবার ক্রিকেটে ফেরার অপেক্ষায় সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি
আবার ক্রিকেটে ফেরার অপেক্ষায় সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি

ধরুন হঠাৎ করেই ঠিক হয়ে গেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। ভ্যাকসিন-ওষুধে বাজার সয়লাব। কোভিড-১৯ পুরোপুরি হার মেনে গেল মানুষ আর বিজ্ঞানের কাছে!

জীবন হয়ে যাবে স্বাভাবিক। আর সবকিছুর সঙ্গে সচল হবে খেলাধুলা। তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুলরা তা-ধিন তা-ধিন করতে করতে মাঠে নেমে যাবেন। তবে একজন নামবেন না—সাকিব আল হাসান। তাঁর যে তখনো আরেকটি সময় গোনা শেষ হয়নি!

জুয়াড়ির কাছ থেকে অন্যায় প্রস্তাব পেয়েও সেটি আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে একটা খামখেয়ালিই করেছেন সাকিব। এখন সেটির দণ্ড দিয়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তিনি বহিষ্কৃত আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত। বহিষ্কারাদেশের প্রায় সাত মাস অতিক্রান্ত। আর বাকি পাঁচ মাস।

দুনিয়ার সব মানুষ যখন পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাস নির্মূলের দিন গুনছেন, সাকিব তখন আরেক হাতের আঙুলের কর গুনে করছেন অন্য এক হিসাব—মাঠে ফিরতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আর কত দিন?

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে সাকিব এই প্রতিবেদককে সেদিন মজা করেই বলছিলেন, ‘আমি দিন গুনছি দুই রকমভাবে। একটা তো কবে করোনা শেষ হবে, আরেকটা হলো কবে আমার বহিষ্কারাদেশ শেষ হবে।’ রসিকতাই ছিল। তবে তার মধ্যেই হতাশাটাও বোধ হয় কিঞ্চিৎ ফুটে উঠল!

গত বছরের ২৯ অক্টোবর আইসিসির নিষেধাজ্ঞা শোনার পর বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সাকিব যেতে পারেননি ভারত ও পাকিস্তান সফরে। খেলতে পারেননি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ। করোনার অভিশাপ পৃথিবীতে না এলে বহিষ্কারাদেশের এই সময়েই বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে গিয়ে আরেকটি টেস্ট খেলে আসত। যেত আয়ারল্যান্ড সফরে, ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলত দুই টেস্টের সিরিজ। করোনার কারণে দুটোই এখন স্থগিত। এরপর শ্রীলঙ্কা সফর, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজ, এশিয়া কাপ এবং নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি সফর যদি হয়ও, সাকিবের যাওয়া হবে না। অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ অক্টোবর থেকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হলে সেখানেও শুরুর দিকে দর্শক হয়েই থাকার কথা তাঁর।

তবে করোনাভাইরাসের কারণে সবই এখন অনিশ্চিত। সাকিব তাই এই ভেবে সান্ত্বনা পেতেই পারেন যে, খেলা তো এখন কোথাও হচ্ছে না! কেউই খেলতে পারছে না! এভাবেই চলতে থাকলে এমনও তো হতে পারে, ক্রিকেট আবার মাঠে ফিরতে ফিরতে সাকিবের বহিষ্কারাদেশ শেষ। বাংলাদেশের হয়ে আর কোনো খেলাই মিস করতে হলো না তাঁকে!

ভাবনাটা মনে এলেও বেশিক্ষণ টেকে না। সাকিব তো জানেন, কাল থেকে খেলা শুরু হলেও তিনি এখনই মাঠে নামতে পারবেন না! সাকিবেরই কথা, ‘আমার জন্য খুব কঠিন একটা সময় যাচ্ছে। যদিও বিশ্বের কোথাও এখন খেলা হচ্ছে না, তারপরও তো আমি জানি যে কাল থেকে খেলা শুরু হলেও আমি খেলতে পারব না!’

করোনাকালেও তাই না খেলতে পারার অস্বস্তিটা আছেই। সব ঠিক হলেই কি! তাঁকে তো আরও কিছুদিন ‘শিকলবন্দী’ই থাকতে হবে, ‘আপনি যখন জানবেন কিছু করার ক্ষেত্রে আপনার একটা বাধা আছে, তখন অন্য কেউ সেটা নিয়ে না ভাবলেও আপনার মাথায় এটা ঘুরতেই থাকবে যে আমি তো চাইলেই এটা করতে পারব না।’

এসব ভাবনা মনে হতাশার কালো ছায়া ফেলে বলে খেলার চিন্তা সাকিব আপাতত তুলেই রাখতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের ম্যাডিসন শহরে অবসরের পুরো সময়টা দিচ্ছেন দুই কন্যা আর স্ত্রীকে। বড় কন্যা আলাইনা তো আছেই, নতুন এসেছে জান্নাত। সময়টা যে সাকিব পরিবারের বেশ উপভোগ্যই যাচ্ছে, সেটি না বললেও চলে। এর মধ্যে খেলতে না পারার হতাশা ঢুকিয়ে শুধু শুধু পারিবারিক আনন্দ নষ্ট করা কেন!

করোনা–পরবর্তী ক্রিকেটের প্রসঙ্গ উসকে দিলে অবশ্য আলোচনা আবার খেলায় ফিরে। অনেকের মতো সাকিব এই ধারণার সঙ্গে একমত নন যে, করোনাভাইরাস ভবিষ্যৎ খেলার জগৎটাকে ওলট-পালট করে দেবে, ‘আমার মনে হয় যারা বা যাদের কাছের কেউ এতে আক্রান্ত হবে না, তাদের মধ্যে তেমন পরিবর্তন না–ও আসতে পারে। একটা সময় মানুষ হয়তো ভুলে যাবে।’

বল উজ্জ্বল করতে থুতু দেওয়ার মতো ব্যাপারগুলোতে বদল আসার কথা অবশ্য সাকিবও বলছেন। আইসিসির ক্রিকেট কমিটি এরই মধ্যে মত দিয়েছে, বল উজ্জ্বল করতে ঘামের ব্যবহার হতে পারে, তবে লালা আর নয়। সাকিবের ধারণা, করোনার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে খেলাধুলায় অনেক চিন্তারই খোরাক জোগাবে, ‘এখন তো শুনি ৩ ফুট বা ৬ ফুটও নয়, ১২ ফুট পর্যন্তও নাকি এটা ছড়াতে পারে! তার মানে পিচের এই পাশ থেকে ওই পাশের কাছাকাছি। তাহলে দুই ব্যাটসম্যান কি ওভার শেষে এসে এক জায়গায় দাঁড়াবে না! পরামর্শ করতে যাবে না! দুই পাশেই থেকে যাবে! মাঠে দর্শক থাকবে না! উইকেটকিপার দূরে গিয়ে দাঁড়াবে! ক্লোজ ফিল্ডিংয়ের কী হবে? এসব নিয়ে ভাবার আছে।’

আইসিসি করোনার পরের ক্রিকেট নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে সাকিবের বিশ্বাস, তারাও স্বাস্থ্যনিরাপত্তার বিষয়টিই আগে দেখবে, ‘আমার ধারণা পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে তারাও (আইসিসি) কোনো সুযোগ নেবে না। যত যা–ই হোক জীবনটা তো আগে, তারপর খেলা! নিরাপত্তার কথা নিশ্চয়ই তারাও আগে ভাববে।’

সেই ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই কি শেষ হবে সাকিবের আরেকটি সময় গোনা?