বার্সা না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে

বার্সায় অনিশ্চিত কুতিনহোর ভাগ্য। ছবি: এএফপি
বার্সায় অনিশ্চিত কুতিনহোর ভাগ্য। ছবি: এএফপি

 'এখানে থাকো, দেখবে ক্লাবের সমর্থকেরা তোমাকে উৎসর্গ করে ভাষ্কর্য বানাচ্ছে। কিন্তু বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ বা বায়ার্ন মিউনিখের মতো কোনো দলে যাও, তুমি সেখানে শুধুই আরেকজন খেলোয়াড় হয়ে থাকবে।'

ঠিক তিন বছর আগে, ২০১৭ সালের মে মাসে  ফিলিপে কুতিনহোকে কথাগুলো বলেছিলেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। বার্সেলোনা তখন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তুলতে কুতিনহোকে লিভারপুল থেকে নিয়ে যেতে চায় বলে গুঞ্জন। লিভারপুলের সঙ্গে মাত্রই নতুন চুক্তি করা কুতিনহোকে তাই মনোযোগ ধরে রাখতে কথাগুলো বলেছিলেন ক্লপ।

কুতিনহো শোনেননি। আগস্টে প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম শুরুর আগের দিন বার্সার প্রস্তাবেই টলে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকার। তখন লিভারপুল বিক্রি করেনি তাঁকে। কিন্তু ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ১৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের প্রস্তাব দেয় বার্সা, ওদিকে স্বপ্নের ক্লাবে যেতে কুতিনহোও উন্মুখ ছিলেন। কুতিনহোকে তাই বিক্রি করে দেয় বার্সা।

 কিন্তু স্বপ্নের ক্লাবটা তাঁর জন্য এমন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিলেন কুতিনহো?

 বার্সার খেলার ধরণে 'নাম্বার টেন' মেসিই। কুতিনহো লিভারপুলে যে ভূমিকাটায় উজ্জ্বল ছিলেন। বার্সায় সে সুযোগটা পাবেন না, জানাই ছিল। বার্সার ৪-৩-৩ ছকে কখনো ইনিয়েস্তার মতো মাঝমাঠের তিনজনের একজন, কখনো তিন ফরোয়ার্ডের বাঁ পাশে ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকারকে খেলানো হয়েছে। কিন্তু লিভারপুলের মতো স্বাধীনতা তো আর পাননি।

 একটা দলে একজন খেলোয়াড় হয়তো নিউক্লিয়াস থাকেন, যাঁকে ঘিরে দলটা গড়ে ওঠে। মেসি থাকতে বার্সায় কোনো কোচ অন্য কোনো খেলোয়াড়কে সে জায়গা দেওয়ার কথা নয়। তর্কসাপেক্ষে সময়ের সেরা ফুটবলারের মানই এমন!

 লিভারপুলের মতো এখানে তাই আর 'নিউক্লিয়াস' হওয়া সম্ভব ছিল না কুতিনহোর। জ্বলেও উঠতে পারেননি। ২০১৮ সালে আধা মৌসুমে লিগে ১৮ ম্যাচে তবু ৮ গোল করেছিলেন, গত মৌসুমে আরও অনুজ্জ্বল কুতিনহো—৩৪ ম্যাচে গোল মাত্র ৫টি! শুধু কী গোল, কুতিনহো উল্টো যেন ছিলেন বার্সার খেলায় গতি কমে যাওয়ার অনেক বড় কারণ। যেন মাঝ সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকা নাবিক!

 কিন্তু একদিকে তাঁর পারফরম্যান্সে পড়তি, অন্যদিকে তাঁর বেতন বছরে ১২ মিলিয়ন ইউরো। তারওপর বার্সা তাঁকে অনেক দাম দিয়ে কেনায় তাঁকে কম দামে বেচতেও পারছে না। আবার বার্সা যা চায়, সেই দামে কুতিনহোকে কিনতে অন্য ক্লাবগুলো আগ্রহী নয়। এই মৌসুমে তাই বায়ার্ন মিউনিখে ধারে পাঠানো হয়েছিল কুতিনহোকে। সঙ্গে শর্ত ছিল, বায়ার্ন চাইলে তাঁকে ১২ কোটি ইউরোতে মৌসুম শেষে কিনে নিতে পারবে।

 বায়ার্নে মাঝে মাঝে জ্বলে উঠেছেন বটে, ৩২ ম্যাচে কুতিনহো গোল করেছেন ৯টি, করিয়েছেন ৮টি। কিন্তু ছিলেন অধারাবাহিক। বায়ার্ন তাই তাঁকে অত দামে পাকাপাকিভাবে কিনছে না! বায়ার্ন চেয়ারম্যান কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে দুদিন আগে জার্মান পত্রিকা ডার স্পিগেলে বলেছেন, 'ওই সুযোগটার (কুতিনহোকে কেনার) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি সেটা কাজে লাগাইনি।' যদিও আগামী মৌসুমে কুতিনহোর জন্য একটা আশা রেখে দিয়েছেন রুমেনিগে, 'আমরা এরপর আগামী মৌসুমের পরিকল্পনা করব, দেখি সেখানে ওর জায়গা হয় কি না।'

 পারফরম্যান্স তো আছেই, কুতিনহোর দামে ভাটা পড়বে করোনাভাইরাসের কারণেও। করোনার কারণে সব ক্লাবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ধুঁকবে বলে পূর্বানুমান। দলবদলের বাজারে খেলোয়াড়দের দাম তাই কমবে। গুঞ্জন শোনা যায়, কুতিনহোর দাম নেমে আসতে পারে ৫ কোটিতে!

 ওদিকে বার্সা আগামী মৌসুমে নেইমার ও লওতারো মার্তিনেজকে দলে আনতে চায়। কাতালান ক্লাবটির ইচ্ছা ছিল, কুতিনহো-রাকিতিচ-ভিদাল-ডেম্বেলেদের মতো খেলোয়াড়কে বিক্রি করে নেইমার-মার্তিনেজকে আনার অর্থের জোগাড় করতে পারবে। সেই পরিকল্পনা বুঝি ধাক্কা খেল! কুতিনহোর আকাশচুম্বী বেতন আর পাতালগামী পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে রাখতে চাইছে না বার্সা, আর পছন্দের দামে বিক্রিও করতে পারছে না। না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলতে!

 স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম কাদেনা কোপে অবশ্য বলছে, বার্সার নতুন কোচ কিকে সেতিয়েনের কুতিনহোকে পছন্দ, তাঁকে দলে রাখতে চান। আবার ইংল্যান্ডের চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লেস্টার সিটি কুতিনহোকে চায় বলে গুঞ্জন। ইংল্যান্ড থেকে আরও শোনা যাচ্ছে, কুতিনহো চান, আর কিছু না হলে চেলসিতেই যাবেন।

 দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যে কী আছে! হয়তো ক্লপের কথাটা না শোনার আফসোস এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকারকে।